সুযোগ পেয়েও কেন লারার রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করেননি মুল্ডার
নিউজ দর্পণ, স্পোর্টস ডেস্ক: টেস্টের এক ইনিংসে বিশ্বরেকর্ড গড়া ব্রায়ান লারার ৪০০ রান কেউ ভাঙতে পারবে সেই ভাবনা হয়তো অনেকেই এখনও ভাবেননি। তবে তার আশপাশে যে কেউ যাননি তেমনটাও কিন্তু নয়। যদিও সেটি লারা ৪০০ রান করার আগের কথা। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচেই সেই রেকর্ড ভাঙার বড় সুযোগ এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার উইয়ান মুল্ডারের সামনে। কিন্তু তিনি সেই চেষ্টাটাই করলেন না, যা এখন ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম আলোচিত বিষয়!
মুল্ডার যখন অধিনায়ক হিসেবে নিজে ইনিংস ঘোষণা করলেন তখন ম্যাচের বয়স মাত্র ৪ সেশন, আর তার রান ৩৬৭। লারাকে ছোঁয়ার বাকি কেবল ৩৩ রান। এমন সময় কেউ ইনিংস ঘোষণা করবে এটা ছিল সম্পূর্ণই অপ্রত্যাশিত। বরং বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটভক্তরা অপেক্ষায় ছিলেন নতুন রেকর্ড দেখার। আবার লারাভক্তরা হয়তো কিছুটা ভগ্ন মনোরথে অপেক্ষায় ছিলেন- ‘হায় ক্রিকেটের বরপুত্রের রেকর্ডটা বুঝি ভেঙেই গেল!’
কিন্তু না, সবাইকে অবাক করে ৩৬৭ রানে গিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন প্রোটিয়া ক্রিকেটের নতুন দিনের এই ‘অপরিচিত’ অলরাউন্ডার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রোটিয়াদের রান তখন ৬২৬/৫। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার পর প্রোটিয়া কিংবদন্তি শন পোলকের কণ্ঠেই এলো ক্রিকেটভক্তদের মনের প্রশ্নটা। কেন লারার ঐতিহাসিক সেই রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করলেন না মুল্ডার! তিনি জবাবটা দিলেন এভাবে, ‘আচ্ছা প্রথম কথাই যদি বলি, আমার মনে হয়েছিল আমরা যথেষ্ট রান পেয়েছি। এখন আমাদের বল করা দরকার। দ্বিতীয়ত, ব্রায়ান লারা একজন কিংবদন্তি। এটাই বাস্তবতা।’
লারার রেকর্ড ভাঙার পথে না হাঁটা নিয়ে ঠিক কী ভেবেছিলেন, কোচের সঙ্গেই বা কী কথা হয়েছে তাও স্পষ্ট করলেন মুল্ডার, ‘তার (লারা) ৪০১ বা ৪০০ রান ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তার মতো কারও এই রেকর্ড থাকাটা বিশেষ কিছু। আমার মনে হয় যদি আবার সুযোগ পাই, সম্ভবত একই কাজ করব। আমি শুকসের (প্রোটিয়া কোচ শুকরি কনরাড) সঙ্গেও কথা বলেছি, তিনিও বলেছেন, “কিংবদন্তিকে এই রেকর্ডটা ধরে রাখতে দাও। তুমি কখনোই জানবে না যে তোমার ভাগ্যে কী আছে বা সেটিকে তুমি কী নামে ডাকতে চাও। তবে আমি মনে করি ব্রায়ান লারার কাছেই রেকর্ডটা থাকা উচিৎ।”
অবশ্য প্রথম দিনের শেষদিকেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন মুল্ডার। নো-বল হওয়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যান। ওই আউটই নাকি তার মানসিকতা বদলে দিয়েছে, ‘নো-বলে বোল্ড হওয়ার পর মাথায় অনেক চিন্তা ভিড় করে এসেছিল। তার মধ্যে ইতিবাচক ভাবনাও ছিল। আমি সেটাই বেশি করে ভাবার চেষ্টা করছিলাম। আজ খেলতে নামার পর গুনগুন করে গান গাইছিলাম। প্রাতরাশের সময় কেউ আমাকে বলল, অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হওয়ার পর সর্বোচ্চ ইনিংস ২৭৭। ওটা পেরোনো প্রথম লক্ষ্য ছিল। তারপর হাশের (হাশিম আমলা) নজির ভেঙে ফেলে বুঝলাম ৩১২ রানে দাঁড়িয়ে আছি।’
অধিনায়ক হিসেবে টেস্টের অভিষেক ম্যাচেই সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েন মুল্ডার। এ ছাড়া প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে টেস্টে সর্বাধিক রানের ইনিংসও খেলেছেন মুল্ডার, এতদিন রেকর্ডটি ছিল হাশিম আমলার (৩১১) দখলে। টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়েও প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বাধিক রান মুল্ডারের। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৬২ রান করেছিলেন গ্রায়েম স্মিথ। এক ইনিংসেই তাকে টপকে গেলেন মুল্ডার। এমনকি বিদেশের মাটিতে টেস্টের এক ইনিংসে সর্বাধিক রানও এখন তার। ১৯৫৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাকিস্তানের হানিফ মোহাম্মদ ৩৩৭ রান করেছিলেন। সেটাই ছিল এতদিনের রেকর্ড। তা ভেঙে ফেলেছেন মুল্ডার।