তারণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক: তারেক রহমান
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: তারণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক এই স্লোগান সারাদেশে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ রবিবার শাহবাগে জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ছাত্র সমাবেশে তিনি এ আহবান জানান।
শাহবাগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সমাবেশে অংশ নিতে জেলা ও মহানগর থেকে আসেন নেতা-কর্মীরা। ছাত্র সমাবেশ ঘিরে স্লোগানে মুখর রাজধানীর শাহবাগ, টিএসসি, মৎসভবন, সেগুন বাগিচা, জাতীয় প্রেসক্লাব, দোয়েল চত্তর, সাইন্সল্যাব, কাটাবন এলাকা। শাহবাগ চত্বরে টিএসসির দিকে মুখ করে মঞ্চ বানানো হয়। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কপালে ও মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা বেঁধে, ছাত্রদলের নাম ও লোগোযুক্ত ব্যান্ড পরে সমাবেশস্থলে এসেছেন। ছাত্রদল ও বিএনপির দলীয় পতাকা হাতেও অনেককে দেখা গেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে ‘মা-মাটি ডাকছে, তারেক রহমান আসছে’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’, ‘তারেক রহমানের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের ১৩ কোটি ভোটারের মধ্যে গত দেড় দশকে প্রায় ৪ কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। তোমরা ভোটার হলেও ফ্যাসিবাদ চক্র তোমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তোমাদের হারানো ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বিএনপির গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য, পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলের গত দেড় দশকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বঞ্চিত ৩ কোটি ভোটারসহ সবার সমর্থন ও সহযোগিতা চাই।
তারেক রহমান বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ সারা দেশের শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার একটি আহ্বান থাকবে। মন দিয়ে শোনো কি আহ্বান জানাতে চাই, তারপর সেই আহ্বান ছড়িয়ে দাও সারা দেশে শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের কাছে, যারা নতুন ভোটার। আসো তাহলে বলি সেই আহ্বান– ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট, ধানের শীষের জন্য হোক’।
সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট, ধানের শীষের জন্য হোক। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজকের প্রতিজ্ঞা হোক তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক। তরুণের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার জন্য যা যা প্রয়োজন এবং নিজেদেকে যোগ্য করার জন্য তোমরা (তরুণ) সকলে তা গ্রহণ করবে, এই হোক আজকের প্রতিজ্ঞা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সামনে এখন লড়াই যে বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব দিল্লিতে বসে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনুসের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করেছেন ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। গোটা বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে যে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। তার আগে গোটা বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব দেশে ফিরে আসবেনল। তাই না? আমরা সবাই তাই চাই না? উনি আসবেন আমাদের নেতৃত্ব দিবেন, আমাদের পথ দেখাবেন। তিনি বলেন, আসুন আজকে আমরা এই শপথ গ্রহণ করি, যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা তারেক রহমান সাহেবের নেতৃত্বে এই দেশকে সত্যিকার অর্থেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে স্বপ্ন ছিল, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে স্বপ্ন সেই স্বপ্নগুলোকে আমরা বাস্তবায়িত করি.. একটা সত্যিকার অর্থেই একটা সুখী সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশে বিভক্তি সৃষ্টি করবার। আমাদের পাশের দেশে ভারতবর্ষে এই ফ্যাসিস্ট আশ্রয় নিয়েছে। তার লোক নিয়ে সেখান থেকে সে মাঝে মাঝেই হুমকি দিচ্ছে যে তারা বাংলাদেশে আক্রমণ করবে। শুধু তাই নয় এখানে তারা বিভিন্নভাবে গোলযোগ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। আজকের এই সমাবেশ থেকে আমাদেরকে শপথ দিতে হবে যে, আমরা কোনদিনই আমরা হাসিনাকে আর এই দেশে রাজনীতি করার কোন সুযোগ দিব না, আমাদের শপথ দিতে হবে আমরা কারো কাছে কোনদিন মাথা নত করব না। আমরা আমাদের দেশকে আমরা নিজেরাই স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে গড়ে তুলবো। এটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের তারেক রহমান সাহেব, সেই পথ তিনি দেখাচ্ছেন যে তিনি কি স্লোগান দিয়েছেন যে সবার আগে বাংলাদেশ, ওই বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব কার’ প্রশ্ন রেখে সমবেত ছাত্র দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই দায়িত্ব হচ্ছে আপনাদের। এই দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্রদের। মেধা এবং বুদ্ধিমত্তার চর্চা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। মেধা ছাড়া আমরা সামনে যেতে পারবো না। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা মেধার চর্চা। এর মধ্য দিয়ে আমাদেরকে সামনের দিকে এগুতে হবে। আমাদের সামনে এখন লড়াই যে বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান আগামীতে নতুন একটি দেশ গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
২৪ এর ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা পূরণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ০৯ দফা প্রতিশ্রুতি:
১। শিক্ষাঙ্গনে গেস্টরুম নির্যাতন, গণরুম সংস্কৃতি, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করে, এবং রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের মতো ঘৃণিত চর্চার স্থায়ী বিলোপসাধন এবং সকল ধরনের সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ছাত্রদল সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
২। ক্যাম্পাসে ও আবাসিক হলে প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আবাসন, পুষ্টিকর খাদ্য, বাসযোগ্য কক্ষ এবং পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ছাত্রদল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
৩। ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি জনকল্যাণমুখী, পরমতসহিষ্ণু, উদার এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ছাত্রদলের প্রতিটি নেতাকর্মী নিবেদিত থাকবে। শিক্ষাক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রগঠনের সকল পর্যায়ে নারীর সমান অংশগ্রণ নিশ্চিত করতে এবং নারীদের জন্য শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছাত্রদল কর্তৃক জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৪। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষা এবং জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, আধিপত্যবাদবিরোধী এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী চিন্তার সন্নিবেশনে রাষ্ট্রকর্তৃক বাংলাদেশপন্থী সার্বজনীন শিক্ষানীতি ও পাঠক্রম প্রণয়নের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ছাত্রদল।
৫। বেকারত্ব দূরীকরণের রাষ্ট্রকর্তৃক কর্মমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে ছাত্রদল জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি, সকল শিক্ষার্থীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সব ধরনের একাডেমিক এবং চাকুরির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধ এবং এসকল পরীক্ষাব্যবস্থাকে দুর্নীতি ও জালিয়াতিমুক্ত করতে ছাত্রদল সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।
৬। মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস এবং মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
৭। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৬৯,১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর,১৯৯০ এবং ২০২৪ সনের গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভাবধারার সাংস্কৃতিক চর্চা বেগবান করার লক্ষ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলবে ছাত্রদল।
৮। শিক্ষাঙ্গনসমূহে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ছাত্রদল জোরালো ভূমিকা রাখবে।
৯। বাংলাদেশে যেন আর কখনো ঘৃণ্য ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে, সে লক্ষ্যে ছাত্রদল সদা সোচ্চার থাকবে এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা নিশ্চিত করতে ছাত্রদল আপামর ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাবে।