ঐক্যবদ্ধ না হলে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হবে : তারেক রহমান
নিউজ দর্পণ, কুমিল্লা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এখন সময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। ঐক্যবদ্ধ না হলে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হবে। দেশ গঠনে ঐক্যের বিকল্প কিছু নেই।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের পর দেশ থেকে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। স্বৈরাচারের পতনের পর দেশকে পুনর্গঠন করতে হলে, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশকে পরিচালিত করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ১৯৭১ সালে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এক স্বৈরাচার দেশের কাঁধে বসে ছিল। শহীদ জিয়াউর রহমান এসে দেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ দেখিয়েছেন। এরপর আবার স্বৈরাচার এসেছে, দেশের জনগণ তাদেরকেও বিতাড়িত করেছে। বিগত ১৫ বছর আবার স্বৈরাচার মানুষের কাঁধে বসেছিল, তাদেরকেও জনগণ বিতাড়িত করেছে। তাই, আমরা যদি গণতন্ত্রের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, তাহলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেভাবে স্বৈরাচার জনগণের কাঁধে বসেছিল, বিগত ওয়ান ইলেভেনের পর নির্বাচনের যেভাবে স্বৈরাচার দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসেছিল, আগামী দিনেও গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হতে পারে। কাজেই গুপ্ত স্বৈরাচার থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় টাউনহল মাঠে দীর্ঘ ১৬ বছর পর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
তারেক রহমান আরো বলেন, বিগত ১৫-১৬ বছর আরো যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আছে তাদেরকে সাথে নিয়ে বিশেষ করে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। স্বৈরাচার দেশের অবস্থা কি করেছে, দেশকে কোথায় নিয়ে গেছে তা সবারই জানা। আমাদের নেতাকর্মীরা আন্দোলন করেছে জনগণকে সাথে নিয়ে। আমাদের নেতাকর্মীরা হত্যা, খুন, গুমের শিকার হয়েছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে, হাত কড়া অবস্থায় হাসপাতালে মারা গিয়েছে, জেলের ভিতরে আমাদের নেতা কর্মীরা মারা গিয়েছে, হাজার নেতা কর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। আজ স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, স্বৈরাচার দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তাহলে এখন হচ্ছে সামনে দেশ গঠন, এখন হচ্ছে সামনে দেশ পুনর্গঠন। কিন্তু দেশকে যদি পুনর্গঠন করতে হয় জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী গড়ে তুলতে অবশ্যই আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের বর্ণনা দিতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, একটি ঘর তৈরি করতে হয় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, কিন্তু সেই ঘরকে ধ্বংস করতে হলে তখন বেশি লোক লাগে না। ঠিক এই দেশটি হচ্ছে আমার আপনার ও সকলের ঘর। এই ঘরে ডাকাত পড়েছিল গত ১৫–১৬ বছর ধরে, দেশের জনগণ সেই ডাকাতকে বিতাড়িত করেছে। এখন এই দেশকে গঠন করতে হবে কারণ এই দেশটা আমাদের সকলের।
জনগণই সকল ক্ষমতার মূল উৎস আখ্যা দিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, দেশকে গঠন করতে হলে আমাদের সকলের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে, দেশ গঠনের শক্তি জনগণের কাছে যেতে হবে আমাদের। এভাবে মিটিং সমাবেশ করে জনগণের কাছে গেলে চলবে না, সবাইকে ছোট ছোট দুই একজনের টিম করে জনগণের ঘরে ঘরে যেতে হবে। তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে যে, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কিভাবে দেশকে পুনর্গঠন করব, কিভাবে নারীদের ক্ষমতায়ন করব, কিভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলব, কিভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করব।
কোনো জন সমাবেশ করে নয়, আমাদেরকে সকল ধর্ম বর্ণ ও শ্রেণী পেশার মানুষদের ঘরে ঘরে গিয়ে আমাদের এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।
দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব দিয়ে তারেক রহমান আরো বলেন, একটি কথা মনে রাখতে হবে আমাদের লক্ষ্য এখন একটি থাকত বা ঐক্য জনগণ এবং দেশ গঠন। আমাদের লক্ষ্য একটিই, সেটা হলো, বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এটিই হোক আমাদের শপথ। মনে রাখতে হবে, জনগণই হচ্ছে বিএনপির সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণকে সাথে রাখতে হলে, জনগণ যেভাবে চায় আমাদেরকে সেভাবেই কাজ করতে হবে। আমরা এই সম্মেলনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি গড়ার শপথ নিতে চাই।
সবশেষে, তারেক রহমান বলেন, আমাদের একটিই লক্ষ্য, সবার আগে বাংলাদেশ। যেখানে বাংলাদেশের স্বপ্ন, সেখানেই জাতীয়তাবাদী দল। তাই, সবার আগে বাংলাদেশ, ঐক্য ও দেশ গঠন।
এসময়, সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি বলেন, রাজনীতি দিয়ে ইসলামকে বিভক্ত করতে চাওয়াদের ভোটের মাধ্যমে জবাব দিতে হবে। যারা জান্নাতের টিকেট বিক্রি করতে চাইছে, তারা ধর্ম ব্যবসায়ী। এই দেশে চেতনার ব্যবসা চলবে না। সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, একাত্তরের চেতনা ব্যবসা করতে করতে শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছে। দলটির রাজনীতির মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়, আর দাফন হয়েছে দিল্লীতে। একাত্তরের চেতনা ব্যবসা দেশের মানুষ ধারণ করেনি। তেমনি জুলাইয়ের চেতনাও যেন কেউ বিক্রি না করে। এ সময় মানুষ এখন ভাষণ আর শোষনের রাজনীতি পছন্দ করে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে, সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন, কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম, কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মোস্তাক মিয়া। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন ও সঞ্চালনা করবেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ভিপি ওয়াসিম।
এর আগে, দুপুর থেকেই ১৪১৪ জন ডেলিগেটরসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল নামে কুমিল্লা টাউনহল মাঠে। সম্মেলনশেষে, দক্ষিণ জেলার শীর্ষ প্রতিনিধিদের নাম ঘোষণা করা হয়।

