জুলাই সনদ স্বাক্ষর করতে বিএনপি রাজি,বিভ্রান্তি ছড়ানো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত: সালাহ উদ্দিন
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করতে বিএনপি রাজি, এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। আজ সোমবার দুপুরে গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘ এখন প্রশ্ন আসে যে, জুলাই সনদে অঙ্গীকার কি সনদে স্বাক্ষরে মধ্য সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি এটা বাস্তবায়নের জন্য অন্য ধাপে আলোচনা হবে। এটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছে, অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছে এ বিষয়টি নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বাক্ষর করবেন না। এক্ষেত্রে একটা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে যে, বিএনপি সহযোগিতা করছে না। আমরা যা যা সহযোগিতা করেছি সেটা ব্রডকাস্ট করা হয়েছে জাতির কাছে দৃশ্যমান… আমরা প্রত্যেকটি প্রেস ব্রিফিঙের মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য, ঐক্যমত্য কমিশনের সাথে আলোচনা হয়েছে সেটা সরাসরি প্রেসকে জানিয়েছি।”
‘‘এখন যেখানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা বিএনপি দিলো এবং দিয়ে যাচ্ছে সেখানে সংস্কার কার্য্ক্রমে এবং এই সংস্কার আমাদেরই অঙ্গীকার, ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা আমাদের প্রতিশ্রুতি জাতির কাছে অনেক আগেই… সেই জায়গায় আমাদের উদ্দেশ্য বা আমাদের নিয়ত নিয়ে কেউ যেন কোনো প্রশ্ন না করে। যে সমস্ত বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক এবং রাজনৈতিক হীনমন্যতার প্রকাশ বলে আমরা মনে করি।”
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘ জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের যে ‘জুলাই জাতীয় সদন’ এর যে খসড়া আমাদের কাছে দেয়া হয়েছে সেটা আগামীকালকে যদি আমাদের কাছে প্রেরণ করে কালকেই সই করব, যেকোনো মুহুর্তে আমরা সই করতে রাজি… এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। যে সমস্ত বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ সেই কাগজ যখনই আমাদের কাছে দেবে আমরা সই করব… এ অঙ্গীকারনামা আমরা দিয়েছি এটা নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।”
‘‘আর যেগুলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সেই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যদি উনারা আলাপ-আলোচনা করতে চান কারো কারো প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রেক্ষিতে সেই আলোচনায় আমরা অংশগ্রহন করতে পারি। তবে সেটা কোনো বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়া সংবিধান সংশোধনের যদি কোনো উপায় থাকে সেটা তারা বলুক।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা চাই সমস্ত কিছু আইনানুগ হোক, সংবিধান প্রক্রিয়ায় হোক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যই দিয়ে হোক। অতীতে যেসমস্ত আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন সেটা কতটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাস্টিফাই হবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হোক।”
‘‘ আমরা সমস্ত আলোচনায় অংশগ্রহন করতে প্রস্তুত আছি। বিএনপি জাতির সামনে ঘোষণা করছে এবং পরিস্কার করছে যে, জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য যেকোনো প্রক্রিয়ার সাথে বিএনপি ঐক্যমত পোষন করবে এবং সকল ধরণের আলোচনায় অংশগ্রহন করবে।”
‘জুলাই সনদ প্রশ্নের বিএনপি একমত’
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘ জুলাই সনদে যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিমার্জন এবং বিদ্যমান আইনের সংশোধন-পরিবর্তন-পরিমার্জন এবং নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। পরবর্তি জাতীয় সংসদের নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে, বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এবং এইসব সংস্কার টেকসইয়ের প্রতি অঙ্গীকার করছি….এই প্রস্তাব জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের। আমরা একমত হয়েছি।
‘‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নে প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষায় পূর্ণ নিশ্চিয়তা বিধানে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতবদ্ধ…. এই প্রস্তাব ঐক্যমত্য কমিশনের আমরা একমত হয়েছি। গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অব্যাহত সংগ্রাম ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় গুম-খুন-বিচারবর্হিভূত হত্যা, মামলা-নিপীড়নের শিকার হয়েও দীর্ঘ ১৬ বছরের অব্যাহত লড়াই এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযথ স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবো… এই প্রস্তাব ঐক্যকমিশনে… আমরা একমত হয়েছি। আমরা সম্পূর্ণ একমত হয়ে ৩০ জুলাই রাতেই জমা দিয়েছি।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য, ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে সমুন্নত রাখার জন্য এবং এই ঐক্যকে শক্তিতে পরিণত করে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য আমরা সকলের কাছে আহ্বান জানাই।”
‘সংস্কার বাস্তবায়ন নির্বাচিতদের না দিলে কাকে দেয়া হবে’
সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘ সংস্কারের যেসব প্রস্তাব ঐক্য কমিশন থেকে দেয়া হয়েছে সেটাতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছি। এখন অন্য কোনো রাজনৈতিক দল যদি ভিন্ন কোনো বক্তব্য দেয় সেটা ঐক্যমত্য কমিশনের কাছে দিতেই পারে, তারা আলোচনা করতে পারে। সেই আলোচনায় আমাদের অংশগ্রহনের জন্য বললে আমরা যেতে পারি।”
‘‘ তবে এখানে কোনো অবাস্তব এবং অলীক প্রক্রিয়ার কথা বলা হয় তাতে করে আমাদের মনে হতে পারে সেই প্রস্তাবে তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা। কারণ নির্বাচিত সরকারের কাছে যদি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব না দেয়া হয় তাহলে কাকে দেয়া হবে? অনির্বাচিত সরকারের কাছে। অনির্বাচিত সরকার তো বর্তমানে আছে এবং যেহেতু জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এই সরকার গঠিত হয়েছে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়… তারা তো সংস্কার প্রস্তাব যেগুলো বাস্তবায়নের দরকার সেটা তো করে যাচ্ছে… এই প্রক্রিয়ার বাইরে শুধুমাত্র থাকবে সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে। এখন যদি আমরা ধরে নেই কোনো কাগজী প্রক্রিয়া, কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া জাতীয় সংসদ ছাড়া সংবিধান সংশোধন করা যায় তাহলে সেটা কোন প্রক্রিয়া তারা সাজেস্ট করুক, এই সাজেশনের সাথে জাতিকে একমত হতে হবে, যদি অবৈধ প্রক্রিয়া হয় সেটা জাতি মেনে নেবে?”
জুলাই ঘোষণাপত্র অনেক আগেই বিএনপি তার মতামত জানিয়ে দিয়েছে বলে জানান সালাহ উদ্দিন।