ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজ খোয়ালো বাংলাদেশ
নিউজ দর্পণ, স্পোর্টস ডেস্ক: শ্রীলঙ্কার মাটিতে কখনো ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবার সুযোগ ছিল। প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে হারের পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে লড়াইয়ে ফিরেছিল টাইগাররা।
কিন্তু শেষ ম্যাচে আর পারলো না। আরও একবার চরম ব্যাটিং ব্যর্থতা দেখালো মেহেদী হাসান মিরাজের দল। পাল্লেকেলেতে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৯৯ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
লক্ষ্য ছিল ২৮৬ রান। তানজিম হাসান তামিম ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন মারকুটে ব্যাটিংয়ে। কিন্তু ১৩ বলে ১৭ রানেই বোল্ড হয়ে ফেরেন। এরপর ইনসাইডেজে বোল্ড হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩ বল খেলে খুলতে পারেননি রানের খাতা। ২০ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
সেখান থেকে পারভেজ হোসেন ইমন আর তাওহিদ হৃদয় কিছুটা সময় দলকে ভরসা দেন। তাদের ৫৮ বলে ৪২ রানের জুটি ভাঙে ইমনের আউটে।
উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভুলের কারণে ইনিংসটা বড় করতে পারলেন না ইমন। লঙ্কান বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ওয়াল্লালাগেকে স্লগ সুইপে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ হয়েছেন এই ওপেনার। ৪৪ বলে ২৮ রানের ইনিংসে ৪টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ক্রিজে এসে পজিটিভ ছিলেন। হৃদয়কে নিয়ে একটি জুটিও গড়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু ৪৫ বলে ৪৩ রানের জুটিটি ভাঙে অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে। ডাউন দ্য উইকেটে শট খেলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিরাজ। ২৫ বলে ৪ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ২৮।
এরপর শামীম পাটোয়ারী (১৮ বলে ১২) পড়েন স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে। হাসারাঙ্গার ঘূর্ণিতে পা এগিয়ে এনেছিলেন। বল মিস করলে স্টাম্প ভেঙে দেন উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিস। ১২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
তাওহিদ হৃদয় ধীরগতিতে খেলে টানা দ্বিতীয় ফিফটি পূরণ করেন। কিন্তু তাতে দলের কোনো উপকার হয়নি। ৭৮ বলে ৩ চার আর এক ছক্কায় ৫১ রান করে দুশমন্ত চামিরার বলে বোল্ড হন তিনি। এরপর জাকের আলী ৩৫ বলে করেন ২৭। ৩৯.৪ ওভারে ১৮৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার আসিথা ফার্নান্ডো আর দুশমন্ত চামিরা নেন তিনটি করে উইকেট। এর আগে ৭ উইকেটে ২৮৫ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ গড়ে শ্রীলঙ্কা। একটা সময় মনে হচ্ছিল, লঙ্কানদের রান ৩০০-৩৫০ হয়ে যাবে। ৪০ ওভার পর্যন্ত তেমন অবস্থানেই ছিল স্বাগতিক দল। তবে শেষের দিকে ভালো বোলিং করেছে টাইগাররা।
৪০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার বোর্ডে ছিল ৩ উইকেটে ২২২ রান। পরের ৭ ওভারে দারুণ বোলিং করে বাংলাদেশ। লঙ্কানরা নিতে পারে মাত্র ৩৭ রান, হারায় ৪ উইকেট। সবমিলিয়ে শেষ ১০ ওভারে মোটে ৬৩ রান দিয়েছে বাংলাদেশ।
পাল্লেকেলেতে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। লঙ্কান শিবিরে শুরুতেই আঘাত হানেন তানজিম হাসান সাকিব। নিশান মাদুশকার উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। লঙ্কান ওপেনারকে এক রানের (৬ বলে) বেশি করতে দেননি ডানহাতি টাইগার পেসার।
শুরু থেকেই ব্যাট হাতে সংগ্রাম করছিলেন মাদুশকা। তাসকিনের বলে কয়েকবার পরাস্ত হয়েছিলেন তিনি। অবশেষে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তানজিম সাকিবের প্রথম বলে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন লঙ্কান ব্যাটার।
আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা অবশ্য সেট হয়ে গিয়েছিলেন। ৪৭ বলে ৩৫ রান করা নিশাঙ্কাকে থামান আগের ম্যাচের নায়ক তানভীর ইসলাম। তাকে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে পারভেজ হোসেন ইমনের সহজ ক্যাচ হন নিশাঙ্কা।
এরপর ১৬ রান করে কামিন্দু মেন্ডিস এলবিডব্লিউ হন মেহেদী হাসান মিরাজের বলে। ১০০ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। তবে চতুর্থ উইকেটে চারিথ আসালাঙ্কাকে নিয়ে সেঞ্চুরি জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস। ১১৭ বলে ১২৪ রান তোলেন তারা। মেন্ডিস সেঞ্চুরি, আসালাঙ্কা করেন হাফসেঞ্চুরি।
অবশেষে ইনিংসের ৪১তম ওভারে জুটিটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। টাইগার পেসারের লো ফুলটস হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন আসালাঙ্কা। ৬৮ বলে ৯ বাউন্ডারিতে তিনি করেন ৫৮ রান।
জানিথ লিয়ানাগে আবারও ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন। তবে ১৭ বলে ১২ করেই তাকে দুর্ভাগ্যজনক আউটের শিকার হতে হয়। মিরাজের বলে পেছনে খেলতে গিয়ে পা দিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন তিনি, ফেরেন হিটউইকেট হয়ে।
পরের ওভারে শ্রীলঙ্কা হারায় তাদের সেঞ্চুরিয়ানকে। শামীম পাটোয়ারীর বলে টপএজ হন কুশল মেন্ডিস। শামীম নিজেই দৌড়ে গিয়ে বলটি তালুবন্দি করেন। ১১৪ বলে ১৮ বাউন্ডারিতে কুশলের দুর্দান্ত ইনিংসটি ছিল ১২৪ রানের।
শেষদিকে দুশমন্ত চামিরা ৮ বলে ১০ আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ১৪ বলে অপরাজিত ১৮ করেন।
তাসকিন আহমেদ ৫১ রানে আর মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৮ রানে নেন দুটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট শিকার তানজিম হাসান সাকিব, তানভীর ইসলাম আর শামীম পাটোয়ারীর। মোস্তাফিজুর রহমান ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।