রাজধানীলীড

দূর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ বিএনপির অঙ্গীকার, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনই সবচেয়ে বড় সংষ্কার: তারেক রহমান

নিউজ দর্পণ, রফিক মৃধা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, দুর্নীতি রোধ করতে পারলে একমাত্র বিএনপিই তা করতে পারে। কারণ আমরা অতীতে করেছি, ভবিষ্যতেও করতে পারব; ইনশা আল্লাহ। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপির জোট সরকারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি সরকার বিভিন্ন বাহিনী তৈরি করে দেশে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটিয়েছিল। পরে স্বৈরাচার সেই বাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে অপব্যবহার করেছিল। সুতরাং দুর্নীতি-আইনশৃঙ্খলার লাগাম একমাত্র বিএনপিই টেনে ধরতে পারে। আজ রোববার সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি বিএনপি’র ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
জামায়াতে ইসলামী দলের দিকে ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেছেন, কিছু কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠী বিভিন্ন জায়গায়, কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে যে- অমুককে দেখলাম, তমুককে দেখলাম; তমুককে দেখলাম, এবার অমুককে দেখুন। যাদের কথা বলে অমুককে দেখুন, তাদেরকে তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। ১৯৭১ সালে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে কিভাবে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ঠিক যেভাবে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে হাজারো হাজারো মানুষকে হত্যা করেছিল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। শুধু তাই নয়, তাদের সহকর্মীরা কিভাবে মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল। এই কথাটি আমাদেরকে মনে রাখতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মুসলমান হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, এই পৃথিবীতে এবং পৃথিবীর বাইরে যাবতীয় যা কিছু আছে, আমরা যা কল্পনা করি যা কল্পনা করতে পারি না- সকল কিছুরও মালিক একমাত্র আল্লাহতা’আলা। আমরা শুনেছি, কিছু রাজনৈতিক দলের, কিছু ব্যক্তি বা বেশ কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন জিনিসের টিকিট বিক্রি করে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন জিনিসের কনফার্মেশন দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি একজন সাধারণ মুসলমান হিসেবে যতটুকু বুঝি, যা আমার না- আমি যদি তা দেবার কথা বলি অর্থাৎ যেটি আমার না, সেটির কমিটমেন্ট যদি করি তাহলে আমি তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছি। অর্থাৎ দোজখ, বেহেশত দুনিয়ার সবকিছুর মালিক আল্লাহ। যেটার মালিক আল্লাহ। যেটার কথা একমাত্র আল্লাহ তালাই বলতে পারে। সেখানে স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেটি হচ্ছে শিরক।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, জনগণের ঘরে ঘরে যেতে হবে এবং বলতে হবে যারা এসব কথা বলে তারা শিরিক করছে। আপনি যদি তাদের কথা শুনেন, আপনিও শিরকের পর্যায়ে পড়ে যাবেন। যার অধিকার একমাত্র আল্লাহ তাআালার, সেটি একমাত্র আল্লাহর অধিকার। কে কোথায় যাবে? কার ইহকালে কি হবে, পরকালে কি হবে, তা ডিসাইড করার অধিকার একমাত্র আল্লাহর। আমরা পৃথিবীতে মানুষ হিসাবে মানুষের দেখভাল, যতটুকু সম্ভব আমাদের দৃষ্টি থেকে আমরা করতে পারব। আমাদের শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী করতে পারবো। কাজেই যারা এসব কথা বলে, তারা শিরক করছে। একজন মুসলমান হিসেবে আমি সেটাই বুঝি। এই কথাগুলো সবাইকে পৌঁছে দিতে হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, আমি প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বলে আসছি, আমাদের সামনে সময়গুলো কিন্তু খুব ভালো নয়। সামনে অনেক কঠিন সময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র বিভিন্নভাবে হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে এদেশের জনগণ। এই ষড়যন্ত্র দেশের জনগণকে সঙ্গে রুখে দিতে পারে বিএনপি। এই ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে, গণতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্র। আমরা যদি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, যে কোনো মূল্যে জনগণের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে অবশ্যই অনেক ষড়যন্ত্রকে আমরা রুখে দিতে পারব। কিন্তু ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে পারলেও তারপরেও কিন্তু সামনে অনেক কঠিন সময়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দুইটি বিষয়কে যদি আমরা গুরুত্ব দিতে না পারি তাহলে পুরো জাতি এবং দেশ সংকটের মধ্যে পড়বে। এক, যেকোন মূল্যে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। দুই, যেকোন মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। যদি আমরা দুর্নীতি এবং আইনশৃঙ্খলা লাগাম টেনে ধরতে না পারি তাহলে যে পরিকল্পনাগুলি গ্রহণ করেছি, মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে, দেশের ভবিষ্যৎ সন্তানদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে, দেশের কৃষি ব্যবস্থা মহিলা-নারী সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার মতো প্রত্যেকটি পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হবে। সেজন্যই আমাদের সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্বপ্রথমে আমাদেরকে ব্যবস্থা করতে হবে দুর্নীতির লাগাম কিভাবে টেনে ধরবো। আমরা দৃঢ়ভাবে এবং অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, এই বাংলাদেশে যদি দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে পারে তাহলে একমাত্র বিএনপির পক্ষেই সেটা সম্ভব। কারণ আমরা অতীতে করেছি। আমরা ভবিষ্যতে দেশের মানুষকে সেই কাজটি করিয়ে দেখাতে পারবো। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনই সবচেয়ে বড় সংষ্কার। তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুরও বানাতে চায় না, মালয়েশিয়াও বানাতে চায় না, কানাডাও বানাতে চায় না, যুক্তরাষ্ট্র বানাতে চায় না। আমরা চাই, একটি স্বাবলম্বী বাংলাদেশ। যেই বাংলাদেশের মানুষ দেশের ভেতরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকবে, শান্তিতে থাকবে। যেখানে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ থাকবে। দুর্নীতির লাগাম টেনে আমরা সক্ষম হব, সেরকম একটি বাংলাদেশ চাই।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে বাংলাদেশে একটা বড় বিভাজনের পথ তৈরি করার চেষ্টা চলছে, একটা গোষ্ঠী, একটা মহল ধর্মের নামে বাংলাদেশে একটা বিভাজনের পথ সৃষ্টি করতে চায়। আমরা বাংলাদেশের মানুষ অবশ্যই ধর্ম ভীরু মানুষ, অবশ্যই ধর্মকে এখানে আমরা সবাই মেনে চলি। কিন্তু ধর্মকে নিয়ে রাষ্ট্রকে বিভাজন করা বা সমাজকে বিভাজন করা আমরা এটাতে বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাস করবে, একইভাবে থাকবে এবং ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছিল- সেই যুদ্ধের মূল যে ভিত্তি ছিল, সেটা হলো সকলের বাংলাদেশ। চক্রান্ত ও অপপ্রচার চলছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের পরে আমাদের গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার এখন একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বাধা-প্রতিবন্ধকতা আসছে। কিন্তু এগুলোকে এগুলোকে এড়িয়ে আমাদেরকে সাফল্য অর্জন করতে হবে। আজকে আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম চক্রান্ত হয়, প্রচারণা চলে, অপপ্রচার চলে। সবচেয়ে বড় একটা অপপ্রচার চলছে। এই প্রচারের বিরুদ্ধেও আমাদেরকে কাজ করতে হবে। আমি সবসময় বলি, সাইবার ওয়ারে যদি আমি যোদ্ধা হতে না পারি তাহলে কিন্তু আমি পরাজিত হয়ে যাব, এটা ইয়াং জেনারেশনকে করতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দেশ গড়া পরিকল্পনা শীর্ষক কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী-খান সোহেলের সঞ্চালনায় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *