রাজনীতিলীড

আজ বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী


রফিক মৃধা, নিউজ দর্পণ: আজ ১ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলÑবিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলÑবিএনপি নামে রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। যে দলের অনুসারীরা হবেন বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, ধর্মীয় মূল্যবোধের ধারক-বাহক, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত, সৎ ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণায় অনুপ্রাণিত। তিনি নিজেও এসব গুণের অধিকারী ছিলেন। জিয়াউর রহমানের বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে শুরু হয় উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি। রাজনীতিতে আসার আগেও এই মহান নেতার একটি ঘটনাবহুল জীবন রয়েছে। সৈনিক জীবন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বত্রই তাঁর একটি সমুজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে, যা জাতি কোনোদিন ভুলতে পারবে না। বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। তখন দেশ ও জাতি এক চরম হতাশায় নিমজ্জিত, দিশেহারা, চরম সংকটে পতিত। ঠিক সেই মুহূর্তে এ দেশের সিপাহি-জনতা একই বছরের ৭ নভেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন করান। এভাবেই একজন কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আবির্ভাব ঘটে। তিনিই প্রথম দেশে আওয়ামী লীগের গড়া একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন। ১৯৭৮ সালের এই দিনে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের পাশাপাশি এনে দেন আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। জিয়াউর রহমানের উন্নয়ন, উৎপাদন ও গণতান্ত্রিক আদর্শ লালন করেই বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ পাঁচবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতবরণের পর দলের বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও এক যুগসন্ধিক্ষণে দলের দায়িত্ব নিয়ে একের পর এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে তিনি আন্দোলন করে আপসহীন নেত্রী উপাধি পান। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় আসীন হয়। বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করে মিথ্যা সাজানো মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেয়া হয়। বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ শর্ত সাপেক্ষে স্থগিত করা হলেও কার্যত তিনি গৃহবন্দি হয়ে থাকেন। আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা পলায়নের পর বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এ সময় তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুলশানে তাঁর নিজ বাসভবন ফিরোজায় আছেন। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে বাসায় তাঁর চিকিৎসা চলছে। মূলত দেশে একটি তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতে ভোট অনুষ্ঠিত করতেই দেশি-বিদেশি চক্রান্তে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করা হয়। তাকে যখন বন্দি করা হয় তখন দেশে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিল না। ভয়াবহ দুঃশাসনের কবলে পড়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করে এক হাজারের অধিক মানুষকে হত্যা করে। স্বৈরাচারী সরকারের সকল অনাচার, গুম-খুন, গুলি, নির্যাতন উপেক্ষা করে আন্দোলনে বিজয় আসে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এরপর গঠন করা হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারকে বিএনপি সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। দেশের মানুষ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার সুফল পেতে শুরু করেছে। ফিরে এসেছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। এখন ভোটের অধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ২০২৬ সালের ফেব্রয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে।
ঠিক এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিএনপি আজ তাদের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। বিএনপির দাবি, সেই সময়কার সেনা সমর্থিত সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এজন্য তারা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে তার দুই ছেলেকে। গ্রেফতার থেকে বাদ যায়নি দলের সিনিয়র নেতারাও। তারা বিএনপিকে দুইভাবে বিভক্ত করার অপচেষ্টা করে। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে তারা দুর্বল করতে পারেনি। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবারও দলকে সুসংগঠিত করে তোলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি নেতাদের দাবি, দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে। তারা অভিযোগ করছে, আওয়ামী লীগ সরকার জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার নামে নামকরণকৃত সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে বিএনপিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে জোর করে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করে রাখা হয়। উচ্চ আদালত থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাসহ অন্যান্য মামলায় জামিন দেয়া হলে নতুন নতুন মামলায় তাঁকে কারাবন্দি করে রাখা হয়। জামিন পাওয়া তাঁর অধিকার হলেও সরকারের নির্দেশে আদালত তাঁর জামিন দেননি। এমনকি এখনো তাঁকে পছন্দ অনুযায়ী বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করতে দেয়া হয়নি। তাঁর বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও একই মামলায় নিম্ন আদালতে তিনি খালাস পেয়েছিলেন। এছাড়াও তাঁকে একাধিক মিথ্যা মামলা সাজিয়ে আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে কেড়ে নেয়া হয়েছে তার বাকস্বাধীনতা। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পলায়নের পর স্বাধীন আদালতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মামলায় খালাস পান। মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও। এরই মধ্যে সরকারের নির্যাতনে বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।
বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে যে বিএনপির প্রচেষ্টা দীর্ঘ ৪৭ বছর পরও সে লক্ষ্য অর্জনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাদের দাবি দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সব সাফল্য বিএনপি সরকারের আমলেই হয়েছে। জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজনসহ ইসলামী মূল্যবোধকে জাগ্রত করেছেন।
বিএনপির ঘোষণাপত্র: প্রায় ২৮টি বিষয়কে জাতীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য নির্ধারণ করে বিএনপি তার ঘোষণাপত্র আজ থেকে ৪৫ বছর আগে নির্ধারণ করে, যা আমাদের ধারাবাহিক উন্নয়নে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্ববহ। ১. বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে অনুপ্রাণিত ও সংহত ইস্পাত কঠিন ঐক্য, ২. উৎপাদনের রাজনীতি, ৩. জনগণের গণতন্ত্র ও রাজনীতি, ৪. রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, ৫. সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূরীকরণ, ৬. সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায় বিচার ও দ্রুত উন্নয়ন, ৭. মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন, ৮. বিলুপ্ত মানবিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন, ৯. স্থানীয় সরকার ও বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ক্ষমতা, ১০. সামাজিক ন্যায় বিচারের অর্থনীতি, ১১. জনসম্পদের সার্বিক উন্নয়ন ও সদ্ব্যবহার, ১২. নারীর সার্বিক মুক্তি ও প্রগতি, ১৩. জাতিগঠন সমাজসেবা ও যুবশক্তির ব্যবহার, ১৪. পল্লী উন্নয়ন, ১৫. গণমুখী কৃষিনীতি, ১৬. সমবায় ভিত্তিতে জাতীয় উন্নয়ন, ১৭. সৃজনশীল, উৎপাদনমুখী এবং গণতান্ত্রিক শ্রমনীতি, ১৮. জীবনমান উন্নয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম, ১৯. গণমুখী ও জীবননির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম, ২০. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ২১. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার, ২২. অনুন্নত এলাকা ও জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, ২৩. সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত রক্ষাকবচ হবে সশস্ত্রবাহিনী, ২৪. জাতীয় প্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে মুক্তিযোদ্ধা, ২৫. বাংলা ভাষা, সাহিত্যের সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রসার, ২৬. বাংলাদেশি সাহিত্য সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার বিকাশ, ২৭. ধর্মীয় শিক্ষা, ২৮. জাতীয় পররাষ্ট্রনীতি হবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সমৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক প্রীতি ও সখ্য।
১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচন: বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করে। সাধারণ নির্বাচনের পর দেশ থেকে সামরিক আইন ও জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ডাক দেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সুবেহ সাদিকের সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কুচক্রী সেনাসদস্য কর্তৃক শহীদ হন। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারি সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি শোষণহীন, দুর্নীতিমুক্ত, আত্মনির্ভরশীল দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। বিগত কিছুকাল যাবৎ আমি বিএনপির কার্যক্রম গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। দলের ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হতে পারে, এমন মনে করে আমাকে দলের দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তাই দলের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপিতে যোগ দিয়েছি ও দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছি। দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং শহীদ জিয়ার গড়া দলে ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া আমার লক্ষ্য।’
১৯৮৩, ১ এপ্রিল: এই দিনে বিএনপির বর্ধিত সাধারণ সভা থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসীন করা হয়।
আগস্ট ১৯৮৪: বেগম খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন এবং বিএনপিতে নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীরা নতুন আশার আলোয় আবারো রাজপথে নেমে আসেন। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নানাবিধ হুমকি আসতে থাকে, চক্রান্ত চলতে থাকে তাঁকে ব্যর্থ করে দেয়ার। কিন্তু অকুতোভয়, সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও গণতন্ত্রের পথে পথ চলতে আপসহীন ভূমিকা নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচন: বিএনপি ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের বয়কট করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ এ প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেয় ও জাতীয় বেঈমান খেতাব প্রাপ্ত হয়।
১৯৯০ স্বৈরাচারের পতন: এরপর আরো ৫ বছর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে একলা পথ চলেন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় আন্দোলন করে অসহনীয় জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেন এবং ‘গণআন্দোলন’ সংগঠিত করেন। ১৯৯০ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ডাকে দেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসে। ফলে এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। বেগম খালেদা জিয়ার গণআন্দোলন সফল হয়। ফিরে আসে গণতন্ত্র। বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে দেশবাসীর মাঝে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয় এবং তিনি ‘দেশনেত্রী’ আখ্যায়িত হন।
১৯৯১ সাধারণ নির্বাচন: বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে গণতন্ত্রের বিজয়ের ফলে এ সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে এককভাবে সরকার গঠন করে ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে একদিনও শান্তিতে থাকতে দেবে না বলে সংসদে হুঁশিয়ারি দিয়ে সরকারের মেয়াদের ৫ বছরে শতাধিক হরতাল ও অসহযোগের মাধ্যমে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে।
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সাধারণ নির্বাচন: সংবিধান রক্ষার জন্য ১৯৯৬ সালে নির্বাচন হয়। সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযুক্ত করতে এবং সাধারণ নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতেই ১৯৯৬ সালের নির্বাচন করা হয়। এ নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ছিল শুধু সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
৩ জুন ১৯৯৬, সাধারণ নির্বাচন: প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ পায়। বিরোধী দল হয়েও সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে বিএনপি মানুষের কাছে আবারো নতুন পথের সন্ধান দেয়।
১ অক্টোবর ২০০১, সাধারণ নির্বাচন: নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি ৫ম বারের মতো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে নির্বাচিত হয় এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৩য় বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১১ জানুয়ারি ২০০৮ জরুরি অবস্থা জারি: বিএনপি সরকার ২৮ অক্টোবর মেয়াদ শেষে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ লীগ-বৈঠার সন্ত্রাসের নৈরাজ্য ও মানুষ হত্যায় লিপ্ত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ বিচারপতি কে এম হাসানকে মেনে নেয়নি। ফলে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়। এক পর্যায়ে মরহুম রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বৈঠক করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে নমিনেশন পেপার জমা দেয়। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ৩ জানুয়ারি হঠাৎ আওয়ামী লীগ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়। এ পরিস্থিতিতে ১১ জানুয়ারি ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে তৎকালীন সামরিক বাহিনী সমর্থিত মইন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল এই অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এজন্য তারা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। আটক করে তার দুই ছেলেকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। বর্তমানে তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন আছেন। গ্রেফতার থেকে বাদ যায়নি দলের সিনিয়র নেতারাও। তারা বিএনপিকে দুইভাগে বিভক্ত করে সংস্কার ইস্যুকে কেন্দ্র করে। দল প্রায় দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবারও দলকে সুসংগঠিত করে তোলেন বেগম খালেদা জিয়া। দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে ও গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুদৃঢ় নেতৃত্ব ও জাতীয়তাবাদী শক্তির কাছে নতজানু হয়ে তারা পরিশেষে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।
২৯ ডিসেম্বর ২০০৯, সাধারণ নির্বাচন: দীর্ঘ ২ বছর সামরিক বাহিনীর সমর্থিত অবৈধ সরকারের অধীনে কারচুপির সাধারণ নির্বাচনে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপি বিরোধী দলের আসনে বসে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে বহুল জনপ্রিয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের কথা না থাকলেও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে তারা দেশের ৯০ ভাগ জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে সে ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশের বিশিষ্টজন, বুদ্ধিজীবী, বিদেশি কূটনীতিকরা এ রাজনৈতিক সংকট সমাধানে বারবার সরকারের কাছে দাবি জানালেও আওয়ামী লীগ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, তার বিশেষ দূত এবং মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নয়ন সহযোগীদের আহবানও আমলে নেয়নি সরকার।
৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন হন। একতরফা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বয়কট করে। বিনা ভোটে নির্বাচিত হন ১৫৪ জন সংসদ সদস্য। বাকি আসনে ভোট পরে মাত্র ৫ ভাগ। ভোটারবিহীন সে নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ একাদশ জাতীয় নির্বাচন: ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তার আগের রাতে অর্থাৎ ২৯ তারিখ রাতেই সারাদেশের কেন্দ্র দখল করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সহায়তায় জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করে। দলে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করে ফলাফল ঘোষণা করে, যা সারাদেশসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচারিত হয়। যে নির্বাচনে শতাধিক ভোট কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ে। তাছাড়া ৮০ থেকে ৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে শত শত কেন্দ্রে। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ দল বিএনপিকে দেয়া হয়েছে ৬টি আসন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে ও আগে সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের করে। মামলা থেকে বাদ যায়নি মৃত ব্যক্তি, হজ পালনরত ব্যক্তিসহ বিদেশে থাকা ব্যক্তিরাও। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক করে কারাবন্দি করা হয়। এমন একটি ভোট ডাকাতির নির্বাচন সম্পন্ন করতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে আগেই কারাবন্দি করা হয়। আইন আদালত, গণমাধ্যমে সবই নিয়ন্ত্রণ করা হয় আগে থেকেই। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিতে দেশের প্রধান বিচারপতিকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ এমন ভোট ডাকাতির নির্বাচন আগে কখনই দেখেনি। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনে দেশে গণতন্ত্র হারিয়ে যায়।
৭ জানুয়ারি ২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন: বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও জনপ্রিয় দল বিএনপিকে বাদ দিয়ে ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ ৬২টি রাজনৈতিক দল বয়কট করে। অন্যদিকে নিজেদের দল বা জোটের মধ্যে কাউকে দলীয় প্রতীক নৌকা আবার কাউকে বিদ্রোহী প্রার্থী করে অন্য প্রতীক দিয়ে বানোরের পিঠা ভাগের মতো নির্বাচন করে, যা দেশ বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার বিরোধী দলের ওপর চালায় দলন-নিপীড়ন। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে ঢুকিয়ে সরকার সারাদেশকে কারাগারে পরিণত করে। মিডিয়ার ওপরও চলে দলন-নির্যাতন। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সকল রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম করে। এর মধ্যে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মতো শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও সরকার গ্রেফতার, গুলি, গুম করতে থাকে, যা দেশে বিদেশে সমালোচিত হতে থাকে। এক সময় এই আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। শুরু হয় সরকার পতনের ১ দফা শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিস্টি আওয়ামী সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনা পালিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণী দিয়েছেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আমি বিএনপির ৪৭তম প্রষ্ঠিাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি। জাতীয়তাবাদী আদর্শের সাথে জনগণকে একত্রিত করার লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। আজকের দিনটি বাংলাদেশি মানুষদের জন্য আনন্দ, উদ্দীপনা ও প্রেরণার। দলটি বাংলাদেশি ভূখণ্ডের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এবং শক্তিশালী সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দেয়ার নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য একদলীয় বাকশালী ব্যবস্থা কায়েম করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতা-উত্তর আওয়ামী দুঃশাসনে বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সাধারণ বিষয় হয়ে ওঠে। যার অনিবার্য পরিণতি হয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, আর এই দুর্ভিক্ষে ১০ লক্ষ মানুষ মারা যায়। তৎকালীন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী বাকশাল কায়েম করে স্বৈরশাসনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করে। শহীদ জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হয়ে পুনরায় বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করে জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। শহীদ জিয়ার সৃষ্টি বিএনপি বিগত ৪৭ বছরে কয়েকবার সুষ্ঠুু নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি ও কল্যাণে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। আমি স্বাধীনতার মহান ঘোষক, সফল রাষ্ট্রনায়ক ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর প্রতি জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা।
তিনি বলেন, নানামুখী সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের মধ্যেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় চির উন্নতশির বিএনপি অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নির্বাসিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নির্দ্বিধায় জীবন উৎসর্গ করেছে অসংখ্য নেতাকর্মী। ৮০’র দশকে ৯ বছরের সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির রাজপথে আপসহীন ভূমিকা ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। তাঁর সেই অগ্রণী ভূমিকার জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে বিএনপি ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনকালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেছে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন গণতন্ত্রের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে এর চর্চা ও বিকাশসহ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য বিএনপি আজ সমধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। জাতির সকল সংকটময় সময়ে বিএনপি জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার কারণেই ঐতিহাসিক সাফল্যগুলো অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শিক ভিত্তি উদারনীতি। দলের সামাজিক অঙ্গীকার ও অর্থনৈতিক নীতি উদারপন্থী রাজনীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত। বিএনপি যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রসারিত করেছে। দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও নারীর ক্ষমতায়নসহ তাদের অর্থনেতিকভাবে স্বাবলম্বী করার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য সেক্টরসহ ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, রেমিটেন্স প্রবাহ ইত্যাদিতে যুগান্তকারী অগ্রগতি লাভ করে। দেশীয় অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে শুরু করে। গণতন্ত্র সমুন্নত ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বিএনপি সরকারের উদ্যম ও উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে দেশে আর দুর্ভিক্ষ স্পর্শ করেনি। মানুষ আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হতে থাকে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণ্ন রেখে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদের নিবেদন করে বিএনপি আগামী দিনগুলোতেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ। জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত দলের যে সমস্ত নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন ও দেড় দশকের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের করাল গ্রাস এবং গত বছর ছাত্র-জনতার রক্তঝরা আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন আমি তাদের প্রতিও জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এখনও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আইনের শাসন, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলেই জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এজন্য জনগণের নির্বাচিত জবাবদিহিমূলক সরকার অতীব জরুরি। গত দেড় যুগব্যাপী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শহীদদের আত্মদান সার্থক হবে, যদি আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারি। এটিই হোক বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভলগ্নে আমাদের অঙ্গীকার। দেশজুড়ে যেন আর কখনোই গুম, গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নারী ও শিশুদের ওপর পৈশাচিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, টাকা পাচারের মতো ঘৃণ্য বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি না হয়। নতুনভাবে আবির্ভূত মব সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে। কারণ এটি আইন বহির্ভূত একটি হিংসাত্মক আচরণ, যা জনমনে ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি করে। জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করাসহ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির মূল লক্ষ্য।
অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ থেকে ৪৭ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে মহান স্বাধীণতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বরেণ্য রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার এবং জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষার অঙ্গিকার নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। শহীদ জিয়ার গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ছিল সুগভীর। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। দেশ ও জাতির চরম সংকটকালে দুঃশাসনের বাতাবরণের মধ্যে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেও দুর্বার আন্দোলনে যিনি নেতত্ব দিয়েছেন আমি সেই অদম্য সাহসের প্রতীক বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা। বিএনপি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত যে সকল নেতাকর্মী আত্মদান করেছেন তাদের প্রতি জানাই আমার অকৃত্রিক শ্রদ্ধা, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। এই শুভদিনে আমি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশের জনগণকে জানাচ্ছি অকৃত্রিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ ও বহুদলীয় গণতন্ত্র দলের কেন্দ্রীয় আদর্শ। বিএনপির ১৯ দফা দলের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি জনগণ সার্বিকভাবে গ্রহণ করে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মতে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ভৌগোলিক ভূখণ্ডের ওপর ভিত্তি করে ‘বাংলাদেশি পরিচয়’ প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে আলাদা ও নিজের কাছে অনন্য। তাই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় অঙ্গিকার বাস্তবায়নে বিএনপির সকল নেতাকর্মী নিরলস ও একনিষ্ঠ আপসহীন লক্ষ্যে স্থির। বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহান দিনে আমি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দলকে আরো সুসংহত ও গতিশীল করার জন্য মনেপ্রাণে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দীর্ঘ দেড় দশক পরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ছাত্র-জনতার নিঃস্বার্থ আত্মদানের মধ্য দিয়ে গত বছর জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারি দানব আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। এখন বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা শুরু করে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে গণতন্ত্রকামী দলগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। এতোদিন গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্য সঙ্গী ছিল। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন সুদৃঢ় করতে পারলেই নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। দুঃশাসনে যে কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিলো সেটি সমূলে উপড়ে ফেলে একটি পরমতসহিষ্ণু, শান্তিময় এবং মানবিক সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই জাতীয়তাবাদী শক্তির মূল লক্ষ্য হতে হবে। খুনখারাবি ও সন্ত্রাস নির্ভর রাজনীতিকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্র ও সমাজে গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য আমাদের আত্ম নিবেদন করতে হবে। গতবছর ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণআন্দোলনে স্বৈরাচারের পতনে যে সম্ভাবনার দিকগুলো দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়েছে তা ধাপে ধাপে সফল বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই রাষ্ট্রীয়ভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা ও ধারাকে এগিয়ে নিতে হবে।
গণসম্পৃক্ত দল বিএনপি জনগণের সুখ-দুঃখের সাথে সবসময় একাত্ম থাকে। বিএনপি যতবারই ক্ষমতাসীন হয়েছে ততবারই কৃষি, শিল্প বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভদিনে আমি বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য উদাত্ত আহবান জানাই।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযপানে ৭ দিনের কর্মসূচি পালন করছে দলটি। কর্মসূচিসমূহ হচ্ছে: ১। গতকাল রবিবার বেলা ২টায় রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দসহ দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীগণ অংশগ্রহণ করেন। আজ ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং বেলা ১১টায় মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মাজারে বিএনপি মহাসচিবসহ দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ঐদিন দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। ৪। ২ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। ৫। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা ও পৌরসভায় আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। ৬। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। ৭। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ করা হবে। ৮। সমসাময়িক প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে বিএনপির উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠক। ৯। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সুবিধাজনক সময়ে ঢাকাসহ দেশব্যাপী (ক) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান (খ) বৃক্ষ রোপণ অভিযান (গ) মৎস্য অবমুক্তকরণ (ঘ) ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প (ঙ) ক্রীড়ানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *