নির্বাচন বানচালে ‘ষড়যন্ত্রের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে: তারেক রহমান
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: জাতীয় নির্বাচন বানচালে ‘ষড়যন্ত্রের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে’ উল্লেখ করে সকলকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রোববার বিকালে বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি এই আহ্বান জানান। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপির ওপরে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
তারেক রহমান বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা রকম ষড়যন্ত্রের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। তবে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে আমরা বিশ্বাস করি, কোন ষড়যন্ত্রই বিএনপির অগ্রযাত্রাকে রুখতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। সকলকে সর্তক থাকতে হবে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৪৭ বছরের গৌরবান্বিত পথ চলায় বিএনপি বরাবরই দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের সহযোগিতা এবং সমর্থন পেয়ে এসেছে। আসুন প্রতিষ্ঠা বার্ষিকের এই দিনে জনগণের কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ থেকে বিএনপি যেমন অতীতে বিচ্যুত হয়নি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও আমরা বিচ্যুত হবো না। আপনার দল আপনাদের দল আমাদের দল বিএনপির শেকর এই বাংলাদেশ। জনশক্তি জনবল বিএনপির মনোবল। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল করে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতিক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে অথবা জটিল করে তোলা হচ্ছে। বিবেক হচ্ছে মানব সমাজের সবচেয়ে বড় আদালত। এই বিবেকের আদালতেই আজ আমাদের আত্ম জিজ্ঞাসা করা দরকার নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এই ধরনের উচ্চারণ ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির ঐক্যকে দূর্বল করবে নাকি পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনরুত্থানের প্রাসঙ্গিকতা তৈরি করবে। ‘‘আমি বলব, এখনো সময় আছে। আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার। পরাজিত পলাতক অপশক্তি কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় ওত পেতে রয়েছে।
‘রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের মতন বিএনপির বিজয় ঠাকানোর অপরাজনীতির পরিবর্তে আসুন আগে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের বাংলাদেশের জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার গঠন করি সকলে মিলে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর আরো সকল যৌক্তিক দাবিগুলোর সমাধানের পথ খুঁজি আমরা। রাষ্ট্র রাজনীতিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শর্ত শিথিল করে নির্বাচনের পথে হাঁটাই এখন সময়ের দাবি। জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচন কেন্দ্রিক গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে যদি আমরা রাষ্ট্র এবং সমাজে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারিৃ. একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার বিশ্বাস গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক দাবিগুলো সময়ের সাথে সাথে বাস্তবায়নের পথ সহজ হয়ে যাবে। ‘নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি একটি কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই আজকের এই দিনে বিএনপি মনে করে রাজনীতি মানেই শুধু প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নয় বরং নীতি মানে জনগণের জীবন মানের উন্নয়ন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণ। সেই লক্ষ্যেই বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজম্যের জন্য বিএনপি কি ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন করেছে বেশ কিছু বিষয় ইতিমধ্যেই একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে আমরা তুলে ধরেছি বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে। বিএনপি শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ করেই ক্ষান্ত থাকে নাই কিভাবে কোন উপায় গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে সে ব্যাপারেও বিএনপির পেপারওয়ার্ক চূড়ান্ত পর্যায়। বিএনপির গৃহীত পদক্ষেপগুলো সারাদেশে মা, বোন, তরুণ জনগোষ্ঠী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার জনগণের কাছে আমাদের সকলকে পৌঁছে দিতে হবে। জনগণের সঙ্গে নিবির সম্পর্ক আমাদেরকে বজায় রাখতে হবে। তারেক রহমান বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি অবাধ সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্র ঝুঁকিমুক্ত নয়। প্রায় এক বছর আগে আমি বলেছিলাম, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। জনগণ লক্ষ্য করতে শুরু করেছেন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ বিনিষ্ট বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রস্তুতে সেই অশুভ শক্তির অপতৎপরতা সাম্প্রতিক সময় ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছে তখন কোন কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে তাদের দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করা জন্য নানা শর্ত আরোপ করছে এবং এই শর্ত আরোপ করে নির্বাচনের পথে হয়তবা পরিকল্পিত উপায়ে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে বলে বহু মানুষ এরই ভিতরে ভাবতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপি দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। কারণ বিএনপি মনে করে, আগে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচিত সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে যদি ব্যর্থ হয় তাহলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণের জনগণ ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ পাবে। যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে প্র্যাকটিস করা হয়ে থাকে। পুথিগত সংস্কারের চেয়েও কার্যকর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা অনেক বেশি জরুরি। রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি সম্পূর্ণভাবে একমত। সংস্কারের গুরুত্ব আছে বলেই বিএনপি ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করার পরেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে নেওয়া সংস্কার প্রস্তাবে সক্রিয়ভাবে সমর্থন এবং সহযোগিতা দিয়েছে। আমি রাজপথের সহকর্মী সহযোদ্ধা প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে অবশ্যই। তবে জনগণের অধিকার চর্চা এবং প্রয়োগের পথে বাধা সৃষ্টি করে কোন সংস্কারকেই টেকশই করা যাবে না। তারেক রহমান বলেন, পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের অভিপ্রায়ের সরকার। তবে এই সরকারের কাছে অবশ্যই একটি দক্ষ এবং জবাবদিহীমূলক রাজনৈতিক সরকারের মতন পারফরমেন্স আশা করা কোন যৌক্তিক কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। সংগত কারণেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবে তাদের দুর্বলতাও তত বেশি দৃশ্যমান হতে থাকবে। বিভিন্ন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতা যত বেশি প্রতীয়মান হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী অপশক্তি ৫ আগস্ট নিয়ে তত বেশি বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ পাবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের রাজপথের সহযোদ্ধা গণপরিষদ সভাপতি নুরুল হক নূরের উপর হামলাসহ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় তা স্পষ্ট।’
‘মব বায়োলেন্সকে প্রশ্রয় নয় বলে উল্লেখ্য করে তারেক রহমান বলেন, মব ভায়োলেন্সকে আমরা কেউ প্রশ্রয় দেবো না। নারীর সম্মান, মর্যাদা এবং অধিকারের প্রতি শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতিটি সৈনিক সংবেদনশীল এবং শ্রদ্ধাশীল থাকবে। আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ বিএনপির দিকেই তাকিয়ে আছে, কারণ বিএনপিই একমাত্র দল যারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক শূন্যতা অনুভব করেই বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি শুধু বহুমত গণতন্ত্রই প্রতিষ্ঠা করেননি, বরং বাংলাদেশকে মুক্তবাজার অর্থনীতির পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ অর্থনীতিতে এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। আজ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে নির্বাচনকে ঘিরে ষড়যন্ত্র চলছে। নানা অজুহাতে নির্বাচনকে ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি—বাংলাদেশের মানুষ কোনো হুমকিতে মাথা নত করবে না। আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণের সরকার ও বিএনপির সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইনশাআল্লাহ, বিএনপি জনগণের আস্থা ও ভোটে আবার ক্ষমতায় ফিরবে। মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যের শেষাংশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, এখন থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, আর সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বিএনপির।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আগামী দিনে জনগণের আস্থা অর্জন করে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। গত দেড় যুগের আন্দোলনে যেসব মানুষ শহীদ হয়েছেন, গুম হয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমি সহমর্মিতা জানাই। আমরা আশাবাদী, গুম হওয়া প্রিয়জনদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে পারবো। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের কথা স্মরণ বলেন, দেশপ্রেমের মাত্রা যে শতভাগ হতে হয়, যার উদাহরণ শহীদ জিয়া। তিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই দেননি, অস্ত্র হাতে নিয়ে লড়াই করেছেন, জীবন উৎসর্গ করেছেন। এজন্যই আজও মানুষ তাকে স্মরণ করে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর যখন দেশ অরাজকতায় নিমজ্জিত ছিল, তখন জনগণ আস্থা রেখেছিল শহীদ জিয়ার প্রতি। সেই আস্থাই তাকে দেশের নেতৃত্বে এনেছিল। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সংগ্রামের প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, ১৯৯১ সালে অনেকে বলেছিল বিএনপি ১০টি আসনও পাবে না। কিন্তু জনগণ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিকেই বেছে নিয়েছিল। কারণ, বিএনপির অতীত হলো মানুষের পাশে দাঁড়ানো, পালিয়ে যাওয়া নয়। ভবিষ্যৎ কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার ১৯ দফা, ভিশন ২০৩০’র মতোই তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই আগামী বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। বিএনপি জন আকাঙ্ক্ষার দল হিসেবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়বে বলেও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আশা প্রকাশ করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে আজকের বাংলাদেশ অস্তিত্বশীল হতো না। তিনি নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের সত্য জানতে ও জিয়াউর রহমানের গুণাবলি ধারণ করে আধুনিক বাংলাদেশ গঠনের আহ্বান জানান। ড. মঈন খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যদি সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন, যদি সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে না পড়তেন, তাহলে আজ আমরা নিজেদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে পারতাম না। আওয়ামী লীগ যতই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবি করুক, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের কালরাত্রিতে তারা ছিল একটি পলায়নপর শক্তি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ থেকে। সেই আদর্শে দীক্ষিত হয়ে আজ আমরা নিজেদের বাংলাদেশি হিসেবে গর্ববোধ করি। জিয়াউর রহমানের কীর্তিগাথা অনন্তকাল ধরে বললেও শেষ হবে না। তবে আমি নতুন প্রজন্মকে শুধু একটি কথা বলব-আসুন, আমরা দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও সততা-শহীদ জিয়ার এই তিন গুণ নিজেদের ভেতর ধারণ করি। বিএনপির এই নেতা বলেন, আশির দশকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের আরেকটি গুণ শিখিয়েছেন-নীতির প্রশ্নে আপসহীন রাজনীতি। তার নেতৃত্বেই সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশকে আধুনিক, সম্মানিত জাতি হিসেবে পুনর্গঠন করতে হলে শহীদ জিয়ার দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও সততা এবং বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন রাজনৈতিক শিক্ষাকে ধারণ করার আহ্বান জানান এই নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজকের বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। বাংলাদেশের মানুষ এখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন স্বপ্ন দেখছে এবং দেশের সর্বস্তরের জনগণ তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এ সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে তিনি বলেন, এই দিনে আমাদেরকে স্মরণ করতে হবে, যিনি ষড়যন্ত্রমূলক অবস্থায় বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন, মুক্ত করেছেন, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আজকে প্রত্যেক মানুষ বিন্দুমাত্র দ্বিধা ছাড়াই স্বীকার করছেন- শহীদ জিয়া এই দেশের অবিসংবাদিত নেতা। আমীর খসরু আরও বলেন, স্বৈরাচার এরশাদের পতনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগ ছিল অনন্য। তাকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা হলেও আজকে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রিয় নেতৃত্ব বেগম খালেদা জিয়া। তারেক রহমান প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র ও বাধা-বিপত্তির মুখেও তারেক রহমান আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি জিয়াউর রহমানের দেখানো স্বপ্নই আজকের প্রজন্মকে দেখাচ্ছেন। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ আজকে তার নেতৃত্বে আগামী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, তারেক রহমান দেশের উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তারেক রহমান বলেছেন খাল খনন করতে হবে, ৩০ কোটি গাছ লাগাতে হবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। আমাদেরকে এখন শুধু আন্দোলন নয়, জনগণের কাছে উন্নয়নের এ পরিকল্পনাও পৌঁছে দিতে হবে এবং তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। আমীর খসরু উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদেরকে সচেতনভাবে সেই পথে চলতে হবে। মাঠে যেতে হবে, গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়তে হবে। আন্দোলন যেমন জরুরি, তেমনি দেশ গড়ার পরিকল্পনায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করাও জরুরি। ইনশাল্লাহ শহীদ জিয়ার আদর্শ, বেগম খালেদা জিয়ার সাহস আর তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠা করব, দেশ গড়ার কাজও সম্পন্ন করব।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. এজেডেএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, মহানগর দক্ষিনের রফিকুল ইসলাম মজনু, যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুর রহমান।