রাজনীতিলীড

গণতন্ত্রকামী দলগুলোর দূরত্ব তৈরি হলে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে: তারেক রহমান

নিউজ দর্পণ, ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের কথা বলেছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ দেড় দশক পর জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে। তবে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথের সহকর্মী-যোদ্ধা বা কোনো দলের নেতাদের বক্তব্যে জনমনে নানা জিজ্ঞাসা জন্ম দিয়েছে। আমি গণতন্ত্রের পক্ষের সকল দলের নেতাদের দৃষ্টি আকষর্ণ করে বলবো- ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতন্ত্রকামী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে পরাজিত ফ্যাসিবাদ মাথাচড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হবে। এজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাই। সংবিধান লিখে ফ্যাসিবাদ ঠেকানো যায় না।

আজ মঙ্গলবার রাতে এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আগামীর কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছে বলে তিনি জানান। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মরহুম শফিউল বারী বাবুসহ যারা মারা গেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন তারেক রহমান। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠান হয়। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে হলে সরাসরি ভোটে মাধ্যমে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। না হলে রাষ্ট্র এবং সরকার শক্তিশালী হয়ে ওঠেনা। এজন্য নির্বাচনই হচ্ছে অন্যতম প্রধান মাধ্যম। সুতরাং নানারকম শর্তারোপ করে জনগণের রাজনৈতিক শক্তিশালী হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি হলে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ সঙ্কটে পড়বে। রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের বলবো- স্বৈরাচারী শাসনের সময় বিরোধী দলীয় কর্মী বা কেউই নিরাপদে ছিল না। কারও পরিবার নিরাপদে ছিলনা। গণতন্ত্রের পথ সঙ্কটে পড়লে সামগ্রিকভাবে গোটা দেশকে সমস্যায় পড়তে হবে। রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে জনগণ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটিয়েছে রাজপথে নেমে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক অভিভাবক নিজের ও সন্তানের জন্য চান নিরাপদ ভবিষ্যত। বিএনপি সেই প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করছে ও সাজাচ্ছে। বিএনপি মনে করে বর্তমান প্রজন্মের সামনে নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে হলে প্রচলতি ধারার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার পরিবর্তনের পক্ষে। এ আই’র এই বিশ্বে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। বিএনপি বিভিন্ন সেক্টরকে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট খাতের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। একজন শিক্ষার্থীকে আর যাতে বেকার জীবন কাটাতে না হয়, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে স্কুল থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা কারিকুলামে কারিগরি শিক্ষার প্রচলন করতে চাই। ইতিমধ্যে বিএনপি শিক্ষা বিশেষজ্ঞ টিম শিক্ষার আধুনিকায়ন নিয়ে কাজ করছে। এই টিমে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতা ছাড়াও অভিজ্ঞ মানুষ কাজ করছেন। ধর্মীয় মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ ও সমাজ গড়তে বিএনপি নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির আগামীর রাজনীতি হবে জনগণের জীবন মান উন্নয়নের রাজনীতি। সেটি দেশে কিংবা বিদেশে হোক। আমাদের লক্ষ্য থাকবে কর্মসংস্থান ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশ তৈরি করা। সেজন্য স্বেচ্ছাসেবক দলের ভূমিকা আগামীতে আরও বেশি প্রয়োজন দেখা দেবে। এখন শুধু অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতাকেও মৌলিক বিষয় হিসেবে দেখা হয় বিভিন্ন দেশে।
তিনি বলেন, কৃষি এবং গবেষণার উন্নয়নে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সবুজ বিপ্লব করেছিলেন। খাল খনন করেছিলেন। রাস্তার দুই পাশে গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। খালেদা জিয়ার আমলে বৃক্ষমেলা হতো। মানুষ চারা কিনে বৃক্ষ রোপণ করতো। আমরা অতীতে এগুলো দেখেছি। একই ধারাবাহিকতায় পরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিএনপি আল্লাহর রহমতে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি সারাদেশে ৫ বছর ২৫ কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আছে। কৃষকদের সেচ সুবিধার জন্য পুনরায় খাল খনন কর্মসূচি শুরু করবো। এরকম কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে। এজন্য স্বেচ্ছাসেবক দলের বিপুল ভুমিকা রাখার সুযোগ হবে।
তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জনগণের রায়ে ক্ষমতায় গেলে বিএনপির কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমাদের পরিকল্পনাগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আসুন আমরা সকলে জনগণের সামনে দাঁড়াই। সকলে বলি- ‘ভোট দিলে ধানের শীষে দেশ গড়বো মিলে-মিশে’। ‘জনশক্তি-জনবল বিএনপির মনোবল’। জনগণের ভালোবাসায় থাকুন, জনগণকে ভালোবাসায় রাখুন।
সংগঠনের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সাবেক মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা উত্তরের সভাপতি ফরিদ হোসেন, দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন, বিগত ১৫ বছরে আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ ও গুম পরিবারের মধ্যে ২০১৮ সালে ক্রসফায়ারে নিহত মিরপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. সাগীর আহমেদের কন্যা সুরাই বিনতে সগীর, শহীদ নজরুল ইসলামের ছেলে রিয়াজ আহমেদ রাজু, ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর গুম হওয়া স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কাওসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আকতার মিম। এছাড়াও ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক শওকত আলী দিদারের (ক্রিকেটের প্রথম শ্রেনির আম্পায়ার) স্ত্রীয় রাবেয়া রহমান। অনুষ্ঠানে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াসিন আলী এবং সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, কেন্দ্রীয় নেতা ফখরুল ইসলাম রবিন, ডা. জাহেদুল কবির, জামির হোসেন, গোলাম সারোয়ার, সাদরাজ্জামান, আনু মো. শামীম আল আজাদ, রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, সরদার নূরুজ্জামান, আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর এবং আশেপাশের বিভিন্ন জেলার কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার যেমন কর্মপরিকল্পনা ছিল তেমনই তারেক রহমানের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য দরকার সমন্বিত প্রয়াস। তিনি বলেন, দেশ সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে যে কাজ সেটিই তো সংস্কার। আমরা এখনও ভোট দেওয়ার গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারিনি। এখন গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়া (পিআর পদ্ধতি) বদলে দেওয়ার আলোচনা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে কিন্তু আপনার এলাকার সুনির্দিষ্ট এমপি থাকবে না, যে আপনি তার কাছে গিয়ে কোনো কথা বলবেন। এই যে বিরাট পরিবর্তন সেটি করার সম্মতি কী জনগণ দিয়েছে? ফলে জনগণকে আঁধারে রেখে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে কয়েকজন মানুষ বা কয়েকটি দল সেটি গ্রহণযোগ্য হয় না। অর্থাৎ অন্যভাবে চেষ্টা চলছে। আমরাই তো সব ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে। অন্য কেউ না। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো সংস্কার প্রস্তাব ৩১ দফা।
নিহত শওকত আলী দিদারের স্ত্রী রাবেয়া রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে আমার মতো অনেক নারী বিধবা হয়েছেন আমি তাদের বিচার দেখতে চাই।
সুরাইয়া বিনতে সগীর বলেন, আমার বাবাকে হারিয়েছি, আমরা দুই ভাই-বোন এতিম। মা অসহায়। আমার মতো আর কোনো শিশু যেন বাবাহীন হয়ে বড় না হয়।
লামিয়া আক্তার মিম বলেন, আমি আমার বাবাকে ছাড়াই ১৩টি বছর চলেছি। আমার কী বাবার ছায়া পাওয়ার অধিকার নেই। হাসিনা যাওয়ার পর যারা আয়না ঘর ভেঙ্গে ফেলেছে আমি তাদের দেখতে চাই। যারা আয়না ঘরের দেওয়ালে বিভিন্ন লেখা ও রক্তের দাগ মুছে ফেলেছে আমি তাদের বিচার চাই। শেখ হাসিনা ছিল পাষাণ। আমার বাবার জন্য ১৩ বছরে তার চোখে এক ফোঁটাও পানি পড়েনি। আমার বাবার কী দোষ ছিল আমি জানতে চাই। দল করাটাই কী দোষ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *