বিএনপি আবারও দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টির পায়তারা করছে: কাদের
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ এবং নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজ শুক্রবার (১০ মে) রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের যৌথ সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের (বিএনপির) দাবী দাওয়ার কোন নৈতিক যৌক্তিক ভিত্তি নেই। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও যারা রাজনীতি করে তারা দেশের বিরুদ্ধেও যে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র অপরাজনীতি করতে পারে।
কাদের আরও বলেন, বিএনপির ভোট বর্জনের আহ্বানকে দলের নেতা-কর্মীরাই প্রত্যাখ্যান করে ভোট করেছে। আসলে বিএনপির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত উদ্ভট গালগল্পে পরিনত হয়েছে। দলে কেউ কারো কথা শোনেনা, কেউ কারো কথা মানেনা। ভুল আর চোরাবালিতে আটকা পড়ে বিএনপি আর কিছুই করতে পারবে না। বিএনপি এই মুহূর্তে কিছু হাস্যকর কথা বলে নেতা-কর্মীদের চেষ্টা করছে চাঙ্গা করতে, কিন্তু হালে পানি পাচ্ছেনা।
পাশ্ববর্তী দেশকে খুশি করতে রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু কিন্তু ভারতের দয়ায় আমরা রাজনীতি করিনা।ভআমাদের নির্বাচনের সময় আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ যে ভূমিকা নিয়েছিল সেই মুহূর্তে ভারত একটা কথা বলেনি। একেবারেই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে ভারত। এবং আমাদের ভোটাররা ভোট দিয়েছে। নিজের দেশকে এতো খাটো করা এটা গয়েশ্বরদের পক্ষেই সম্ভব। যেটা বাস্তব না, এই মিথ্যাচারই তাদের রাজনীতি, সেটাই তারা করছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতকে খুশি করার আমাদের দরকার নেই, আমরা আমাদের শক্তিতে সামর্থ্যের উপর ভর করে আছি। এখানে ভারতের দয়ার আমরা টিকে থাকবো,ক্ষমতা থেকে সরে যাবো তা তো নয়। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে আমরা ক্ষমতায় ছিলাম তখন কি ভারত আমাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে বাংলাদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আমরা ক্ষমতার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছি। আমাদের দেশের জনগণের ইচ্ছায়, বিদেশি শক্তির ইচ্ছায় না।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, সমাবেশ আমরা করবো, কারণ বিএনপির সমাবেশ মানেই অগ্নিসন্ত্রাস ,বিএনপির সমাবেশ মানেই বিশৃঙ্খলা, বিএনপির সমাবেশ মানেই রক্তপাত।কাজেই বিএনপির কাছে গোটা রাজধানীকে আমরা যদি তাদের উপর ছেড়ে দিই তাহলে জনগণের জানমালের সুরক্ষা সমসা হতে পারে। এবং সে কারণে আমাদের মাঠে থাকতে হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, এ পর্যন্ত কোন নজির নেই আমরা ঢাকা সিটিতে,আশেপাশে, এতোগুলো সমাবেশ করেছি। কখনো কিন্তু বিএনপির সাথে আমাদের কোন পাল্টাপাল্টি, মারামারি,সংঘর্ষ সংঘাত বিরোধ, কিছুই হয়নি। আমরা নাম দিয়েছি শান্তি সমাবেশ,শান্তিপূর্ণভাবেই আমরা শুরু করেছি,শেষ করেছি।
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা যদি মাঠে না থাকি তাহলে ,অতীতের অভিজ্ঞতা বলে বিএনপির সভা মানেই সন্ত্রাস, বিএনপির সমাবেশ নামেই নৈরাজ্য।সমাবেশ মানেই পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা,সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা,পুলিশ হাসপাতালে হামলা,এটা ২৮ অক্টোবর সারা দেশের মানুষ লক্ষ্য করেছে।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলন করেছে আমরা নাকি পালাবার পথ পাবোনা।আর সেদিন দেখলাম, মির্জা ফখরুলসহ একে একে সব নেতা কত যে দ্রুত, দৌঁড় সালাউদ্দিনের চেয়েও দ্রুত সেদিন মঞ্চ থেকে একে একে নেমে অলিগলি খুঁজে পাচ্ছিলো না, পালাচ্ছিলো। পালাই কারা আবারও প্রমাণ হয়েছে। পালাই বিএনপি।
তিনি আরও বলেন, সেই ২০০৭ সালে তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুচলেকা দিয়ে আর রাজনীতি করবে না বলে লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছে। সেই নেতার আজও বাংলাদেশে ফেরার সৎ সাহস হয়নি। যেই নেতার নির্দেশে এখন বিএনপি চলে সেই নেতৃত্ব রিমোট কন্ট্রোল লিডারশীপ। বাংলাদেশের আন্দোলন নেতৃত্ব যদি বাংলাদেশের রাজপথে না থাকে সেই আন্দোলন কোনদিনও সফল হয়না৷ আর এই বাংলাদেশে আন্দোলন যদি ব্যর্থ হয় নির্বাচনেও বিজয়ী হতে পারেনা।
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা অতীতে যেটা দেখেছি,সমাবেশ থেকে সহিংসতা নৈরাজ্য এটাই বিএনপির রাজনীতি, তাই আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, সজাগ থাকতে হবে, সুযোগ পেলেই আবারও ফনা তুলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করবে,জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধন করবে। দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে ব্যহত করতে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়,কথা বলে। তাদের কোন গণতন্ত্র নেই। তাদের ঘরেও কোন গণতন্ত্র নেই,বাইরেরে গণতন্ত্রকে বারেবারে তারা প্রহসনে পরিণত করেছে। এগুলোর সঙ্গে জনগণের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তারা ভোটে আসেনা কারণ তারা ভোটারদের ভয় পাই।ভোটারদের ভয় পাই বলে তারা ভোটে আসেনা, এটা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। বিএনপি কেন ভোটে আসতে চাইনা,আসলে ভোটে তারা আসলে জিততে পারবে না,হেরে যাবে এই ভয়টিতে তারা নির্বাচন বয়কট করে।
উপজেলা নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্র আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা নির্বাচন পরবর্তী কোন সহিংসতা চাইনা, কোন সংঘাতে আমরা জড়াবো না, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজাই রাখবো।
বাংলাদেশের যে গণতন্ত্র সেটা শেখ হাসিনা শৃঙ্খলমুক্ত করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আজকের স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সেটার অবদান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এই গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এতো ষড়যন্ত্র চক্রান্তের মধ্যেও সাধারণ নির্বাচনে ৪২.৮ শতাংশ ভোটার টার্ণ আউট এটা কেউ বিশ্বাস করতে পারেনা। তারপরও বিএনপি বলে জনগণ ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রত্যাখ্যান করলে আপনারা,আপনার সমমনারা নির্বাচনে যাননি তাহলে এতো ভোটার কি করে ভোট দিয়েছে। উপজেলা নির্বাচনেও ভোট পড়েছে ৩০-৪০ শতাংশ। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন বলেছে ৩৬.১ শতাংশ ভোট পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি এবং সাম্প্রদায়িক কিছু সংগঠনের ভোট বর্জনের প্রেক্ষাপটে যে ভোটার টার্ণ আউট এবং যে ফলাফল সেটা সন্তোষজনক । বাংলাদেশে বিএনপির আমলে কোন স্থানীয় সরকার নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে? এবং সংঘাত ছাড়া নির্বাচন হয়েছে? যারা সমালোচনা করে তাদের আমি বলবো এই উপজেলা নির্বাচনটা নিয়ে অনেকেই বলেছিলেন এখানে রক্তপাত হবে। অনেক লোক মারা যাবে, নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। বাস্তবে কি সেটা হয়েছে। কোথাও কোন সংঘাত ও প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটেনি। তাহলে এই কৃতিত্বের প্রশংসা সরকার, প্রশাসন,নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সভাপতিমণ্ডলির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, এড জাহাঙ্গীর কবির নানক, এড কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, ডা: দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম,বি এম মোজাম্মেল হক, এড আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক চাপা শামসুন্নাহার, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।