গোলাপগঞ্জের নতুন ইউএনওকে হত্যার হুমকি
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলেছে নির্বাচনী ট্রেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির এ ভোট ঘিরে প্রশাসনকে ঢেলে সাজাচ্ছে সরকার। পদায়ন চলছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও। এর মধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জে যাচ্ছেন ৩৬ ব্যাচের কর্মকর্তা শাখী ছেপ। কিন্তু যোগদানের আগেই তাকে দেওয়া হচ্ছে নানান হুমকি। ‘শাহজালালের পুণ্যভূমিতে পা রাখতে দেওয়া হবে না, আসামাত্রই রক্তের বদলা নেওয়া’ সহ প্রাণনাশের এমন হুমকি আসছে অনবরত।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে রদবদল করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নির্দলীয় ব্যক্তিদের পদায়নের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ রয়েছেন ৩৬তম ব্যাচের কর্মকর্তা। পদায়ন পাওয়া অনেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে; আবার কারও কারও বিরুদ্ধে তাদের স্বামী, স্ত্রী বা পরিবারের কেউ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ দিচ্ছে জুলাই আন্দোলনের সাথে জড়িত নেতা-কর্মীরা। এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে অনেকের পদায়ন বাতিলও হয়েছে। আবার অনেকে যোগদান করতে গিয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের এক সময়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা শিবানী সরকার নারায়নগন্জে যোগদান করতে গেলে তৌহিদী জনতা নামক সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে যোগদান করতে ব্যর্থ হন। তার চাকুরী জীবনের ইতিহাস নিয়ে জুলাই রেবুলেশনারী ফেইসবুক পেইজে বিস্তারিত লিখে পোস্ট করা হয়।
এইবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে পদায়ন পাওয়ার পর কয়েকজনকে নিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিউজ হওয়ার পর আবারও সক্রিয় হয় জুলাই আন্দোলনের কর্মীরা। তবে এইবার সিলেটের তৌহিদী জনতা পদায়ন পাওয়া এক নির্বাহী অফিসার কে হত্যার হুমকি দিলেন। হুমকি পাওয়া নির্বাহী অফিসার এর নাম শাখী ছেপ।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নিউজ ও সোশ্যাল মিডিয়ার কমেন্ট সেকশন থেকে জানা গেছে, প্রশাসনে ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন শাখী ছেপ। নতুন পদায়নে তার নতুন কর্মস্থল পড়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জে। আর এরপরই তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানান আলোচনা সমালোচনা। কেউ বলছেন যে, অতীতে
নিরপেক্ষভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করার কারণেই তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে পদায়ন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অথচ তাকে কেন আওয়ামী লীগের দোসর তকমা লাগিয়ে নামে-বেনামের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে অবন্তী আয়েশা নামের একজন বলেন, ‘হযরত শাহজালালের পুণ্যভূমিতে এই ফ্যাসিস্টকে পা রাখতে দেওয়া হবে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হঠকারী পদায়নের পর সিলেটের তৌহিদি জনতা জাগ্রত আছে। যে গোলাপগঞ্জে ফ্যাসিস্টদের সন্ত্রাসে সাতজন শহীদ রক্ত দিয়েছে; শত শত গাজী বহু কষ্টে বেঁচে আছে; সেই গোলাপগঞ্জে খুনি হাসিনার প্রেতাত্মা আসামাত্র রক্তের বদলা নেওয়া হবে।’
এছাড়া আরও অনেকেই নানাভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন এই ইউএনওকে। প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে এভাবে প্রকাশ্যে থ্রেট দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার তাগিদও দিয়েছেন তারা।
সিলেট অঞ্চলের মানবাধিকার কর্মী আরিফ চৌধুরী বলেন, পদায়ন পাওয়া নির্বাহী অফিসার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও যেহেতু তাঁর স্বামী নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত সেহেতু তার উক্ত উপজেলায় দায়িত্ব পালন করতে আসলে নানাবিধ সমস্যায় পড়বেন। বিষয়টি বিতর্কের আগেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিবেচনায় নিতে পারতেন।

