ধর্মের নামে ট্যাবলেট বিক্রিকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে : সালাহউদ্দিন
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: একটি দল ‘ধর্মের নামে ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণকে প্রতারণা করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। আজ সোমবার সকালে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। রাজধানীর ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির আয়োজনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনার কর্মসূচি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠান হয়। বিকালে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারা ( জামায়াতে ইসলাম ) কেবলই বলছে যে, এখানে একটু মার্কাতে ভোট দিলে তরতরাইয়া জান্নাতে যাবে। তার আগে ইহকালে কিভাবে চলবো এর কোন বক্তব্য নাই। যেই দলের কোন নীতি আদর্শ নাই, কোন পরিকল্পনা নাই, শুধুমাত্র ধর্মের নামে একটা ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সাথে প্রতারণা করার পরিকল্পনা করছে। তাদেরকে জনগণ ইতিমধ্যে চিনেছে, তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। সালাহ উদ্দিন ছাত্র দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদেরকে প্রথমেই বলতে হবে যারা বিনা কষ্টে জান্নাতে যেতে চাচ্ছেন সেটার বাস স্ট্যান্ড কোথায় একটু আগে জেনে নেবেন। জনগণ এগুলো বুঝে। আমরা বিএনপি যা করছি সেগুলো হচ্ছে প্ল্যানিং। প্ল্যানিং ইজ হাফ অব দি জব। ইফ ইউ ডোন্ট প্ল্যান, ইউ আর প্ল্যানিং টু ফেইল। কারণ যদি আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আগের থেকে পরিকল্পনা প্রণয়ন না করি তাহলে আমরা ফেল করার জন্যই পরিকল্পনা করলাম। এই কথা আমাদের ধর্ম ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়ে গেলো মনে হয়।
তিনি বলেন, বিএনপি আমরা দেশের মানুষের কাছে সমর্থন চাইছি, ভোট চাইছি। জনগণ আমাদের কাছে কী চায়? তা আমাদের দিতে হবে। আমরা তো কেবল ধর্মের একটা ট্যাবলেট বিক্রি করতে চাই না। আমরা চাই জনগণের কল্যাণের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, আমাদের সুষ্ঠু পরিকল্পনা কী আছে সেটা জনগণের সামনে রাখা।
‘গণতন্ত্রের অপর নাম বিএনপি বলে মন্তব্য করে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যিনি সৃজন করেছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের। রাজনৈতিক জন্ম থেকে তার শাহাদাত বরণ পর্যন্ত এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে পদারপণ থেকে আজ পর্যন্ত, আমাদের অহংকার আমাদের তারুণ্যের অহংকার আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমানের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসৃ এখন পর্যন্ত এই তিনটা বিশ্লেষণ করলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশ মানেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীর দল। আমি বলেছি গণতন্ত্রের বিকল্প নাম, অপর নাম হচ্ছে বিএনপি। কারণ দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছেন সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ৭ নভেম্বর। তারপর ১৯৭৯ সালে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করে পঞ্চম সংশোধনের মধ্য দিয়ে এই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের রচনা প্রচলন করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেই পঞ্চম সংশোধনী আমাদের সবাইকে জানতে হবে। জিয়াউর রহমান কিভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংসদীয় পদ্ধতি চালু, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন সালাহ উদ্দিন। ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মস কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড প্রভৃতি বিষয়গুলো তৃণমূল পরযায়ের মানুষের কাছে সহজভাষায় ছাত্র দলের নেতা-কর্মীদের বলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মাস্টার ট্রেইনাররা কিভাবে ট্রেনিং দেবেন জানি না। আমি তো আম জনতার মানুষ তো। আমি মনে করি, আমদের সাথে যতি আম ভাবে কথা না বলা হয়, ইংরেজীতে কথা বলা হয় তাহলে কাজ হবে না। সহজভাবে তাদেরকে বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো বলতে হবে।
সালাহ উদ্দিন বলেন, সারাদেশে যারা বয়ান দিচ্ছে যে, জ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিভিত্তিক, মেধা ভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে। আসলে চর্চা কি আমরা করছি? বিএনপিকে এমনভাবে জ্ঞানভিত্তিক, মেধা ভিত্তিক প্রযুক্তিভিত্তিক রাজনীতির চর্চা করতে হবে যাতে করে অন্য কোন সংগঠন ধারে কাছেও না আসতে পারে। শুধুমাত্র গুলিস্থান থেকে পুরানা পল্টন ‘মানি না’ ‘মানি না’ শ্লোগান দিলে হবে না। যখন বিরোধীদলেও থাকবো আমরা তখনও আমাদেরকে জ্ঞানভিত্তিক সংগ্রাম করতে হবে যুদ্ধ করতে হবে, ফাইট করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্র দলের নেতা-কর্মীদের বেশি সোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
সালাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান শ্লোগান দিয়েছেন সবার আগে বাংলাদেশ। এর চাইতে সহজ কোনো বক্তব্য আছে? সমস্ত কর্ম পরিকল্পনায়, সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সকল বিষয়ে আমাদের মাথায় থাকতে হবে এখানে আমাদের স্বার্থটা উপরেৃ সবার উপরে বাংলাদেশ। সেটা পররাষ্ট্র নীতি হোক, সেটা যুদ্ধ নীতি হোক, সেটা অন্যান্য কুটনৈতিক বিষয় হোক, দ্বিপাক্ষিক বিষয় হোক, বহুপাক্ষিক চুক্তি হোক, আন্তর্জাতিক ট্রিটি হোক, মেমো অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং হোক সব জায়গায় আমাদের দেশের স্বার্থটা আমরা উপরে রাখবো। সেজন্য আমরা সবার আগে বাংলাদেশ। ‘বাংলাদেশের শক্তিশালী গণতান্ত্রিক আগামী রাষ্ট্র বিনির্মাণ হতে পারে সাম্য এবং ন্যায়বিচার ভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ হতে পারে সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের আপনাদের সবাইকে আগামীতে ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে সেই কাজটাই আপনারা করবেন।
‘দেশ গড়া পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

