সরকার বা আদালত নয়, আ.লীগ নিষিদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ: ডা. জাহিদ
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: আওয়ামী লীগ গণশত্রেু পরিণত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস ‘ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যম জিটিও‘র মেহেদি হাসানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি’ বলে যে বক্তব্য রেখেছেন তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি এই মন্তব্য করেন।
আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘আজহার-শফিক’ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠান হয়। সংগঠনটি ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ অক্টোবর। তিনি বলেন, মেহেদি হাসানকে প্রধান উপদেষ্টা যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সেটি আপনাদের মত আমিও পত্র-পত্রিকায় বা মিডিয়ার কল্যাণে কিছুটা পড়া এবং দেখার সুযোগ হয়েছে। উনি বেশ কতগুলো কথা বলেছেনৃ অমর্ত্য সেন উনাকে কি বলেছেন বা মেহেদি হাসান যে প্রশ্ন করেছেন এবং মেহেদি হাসানের প্রশ্নের উত্তরে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন যেটা মানুষের মধ্যে একটু, ইভেন আমার মধ্যেও এক ধরনের প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়েছে। বিএনপি বিশ্বাস করে কোন অবস্থাতে গণহত্যাকারী এবং গণদুশমন যারা ছিল, যারা গুম করেছে, যারা মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে, যারা মানুষের সম্পদ লুন্ঠন করে বিদেশে নিয়ে পাহাড় গড়েছে তাদেরকে বিচার এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি, আয়না ঘর বলেন, গুম বলেন, এনকাউন্টার বলেন এবং অট্টহাসি অর্থাৎ প্রতিহিংসা পরায়ণতার যে চরমপরাকাষ্ঠা উনারা দেখিয়েছেন এর বিরুদ্ধে বিএনপি সবসময় সোচ্চার এবং আমরা মনে করি, তারা গণদুশমন।
ডা. জাহিদ বলেন, তাদের(আওয়ামী লীগ) বিচার ছাড়া বা তাদের অনুশোচনা ছাড়াৃ আজকে যদি আমরা একাত্তর নিয়ে এত কথা বলি। তাহলে এই ’২৪ এ গত ১৫ বছরে দেশের ভোটাধিকার চুরি, দিনের ভোট রাতে করেছে তার জন্য তাদের অনুশোচনা হবে নাৃ এটা তো হতে পারে না। তাদেরকে অবশ্যই আনকন্ডিশনালি জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে যেটা জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে ক্ষমা করবে কি করবে না। এটি ব্যক্তিগতভাবে কারো করার বিষয় আছে বলে আমি মনে করি না।
অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মিডিয়ায় আমরা দেখেছি যে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।যদিও এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বলেছিল যে, নিষিদ্ধের বিষয়টা, কাকে গ্রহণ করবে বা করবে না এটা জনগণের বিষয়। এটা কোন অবস্থাতেই আইন আদালত অথবা সরকারি সিদ্ধান্তে যে করার যে প্রক্রিয়া এটার সাথে বিএনপি সবসময় দ্বিমত পোষণ করেছিল।বিএনপি বলেছিল জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে। আমরা সবসময় একটা কথা বলছি, এই গণহত্যাকারী এবং এটার যারা আদেশ দিয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচার করা এবং সেটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোক, উনার দলের বড় বড় নেতারা হোক অথবা দলের অন্যান্য যে কর্মীরা আছে যারা এগুলোর সাথে জড়িত এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা অতি উৎসাহী হয়ে বিভিন্ন বাহিনীর লোক এবং অনেক সংস্থার লোক সর্বোপরি আপনার প্রশাসন দেখেন, বিচারালয় দেখেন। অনেকে ওয়ান স্টেপ এহেড তারা অতিরিক্ত করেছে যেটি তাদের জুরিডিকশনেরর মধ্যে পড়ে না। কাজেই তাদের বিচারের ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সবসময়ই সোচ্চার ছিলো এবং এখনো আছে।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, যেকেনো সময়ে তাদের নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে সেক্ষেত্রে বিএনপি ভীত কিনা জানতে চাইলে জাহিদ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং গণতন্ত্রকাগামী শক্তির যে ঐক্য হয়েছে এই ঐক্য কোন অবস্থাতেই ভয়ে ভীত হলে ৫ আগস্ট উনি(শেখ হাসিনা) পালাতেন না। উনি যদি সত্যিকার অর্থে রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে মাঠে থেকে রাজনীতি মোকাবেলা করতেন। কি হতো? যা হওয়ার সেটা হতোৃ জেলখানায় যেতেন। আমরা ’৯০ এ স্বৈরাচারের পতন দেখি নাই। ‘৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা দেখেছি স্বৈরাচার জেলখানায় গিয়েছে। কাজেই সেই ক্ষেত্রে উনি রাজনীতিবিদ হিসেবে যেটা করেছেনৃ. যে অন্যায় করেছে, যে অন্যায়কারী তার মনের যে দুর্বলতা সেটা উনি প্রকাশ করেছেন। তাদের নিয়ে আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছে তারা মোটেই ভীত বা সন্ত্রস্ত নই জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে।
‘ঢাকায় জলাবন্ধতার প্রসঙ্গে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, গতকাল ও আজকে রাতের বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের অনেক মানুষের বাসায় কোমর এবং হাঁটু পর্যন্ত পানি, অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে আছে, সার্ভিস টোটালি ডিজরাপ্টেড হয়েছে। এটি কি আগে হতো? আমরা সবসময় বলি ড্রেনেজ সিস্টেম ইয়েস ড্রেনেজ সিস্টেম ইজ এ প্রবলেম, আমাদের হেবিট ইজ এ প্রবলেম। সবসময় আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে হোয়াট ইজ বেস্ট ফর টুডে হোয়াট ইজ বেস্ট ফর নেক্সট ডে এবং এই সমাজটা খালি শুধু আমার না এই সমাজটা আমাদের। এই আমাদের চিন্তাভাবনা যদি না আসে তাহলে আপনি ইনক্লুসিভনেস থাকবে না। আর ইনক্লুসিভনেস যদি আপনার মধ্যে না থাকে তাহলে আপনি কিছুদিনের জন্য চলতে পারেনৃ সাস্টেইনেবল হবেন না। সাস্টেইনেবল হইতে হলে আপনাকে ইনক্লুসিভনেস আনতে হবে।
প্রবীণদের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন অধ্যাপক জাহিদ। তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্র যদি আজকে বয়স্ক ভাতা দেয়, আজকে যদি বিধবাদের ভাতা দেয়, আজকে যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মানজনক ভাতা দেয় তাহলে বয়স্কদের জন্য আলাদা উইন্ডো করা, আলাদা সুযোগ-সুবিধা করা ৃএটার জন্য খালি চিন্তা দরকারৃ এটার জন্য খুব বেশি ফিনান্সিয়াল রিসোর্স মোবিলাইজ করতে হবে নট নেসেসারি। আপনার যে লক্ষ লক্ষ কোটি বিলিয়ন বিলিয়ন যা শুনি আর কি অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভুট্টাচায্র্ যেটি বলছেন যে, এতো বিলিয়ন চলে গেছে দেশের বাইরেৃ এতো বিলিয়নের তো দরকার নাই আমাদের অল্প বিলিয়ন হলে অর্থাৎ ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টটা যদি প্রপারলি আমরা করতে পারতাম এবং আমরা যদি প্রজেক্ট করতে পারতাম, প্রবীণদের যদি একুমেডেটেড করতে পারতাম তাহলে তাদের প্রতি সেবার করা হতোৃ এটা করা উচিত। আজহার-শফিক ফাউন্ডেশন’ এর সভাপতি একেএম শামসুল ইসলাম রঞ্জুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তরা বক্তব্য রাখেন।

