গণমাধ্যম

বদরুদ্দীন উমরের ইন্তেকাল: ড. ইউনূস, তারেক রহমান, মির্জা ফখরুলের শোক

নিউজ দর্পণ, ঢাকা: লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন)। রোববার সকালে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। বদরুদ্দীন উমর দীর্ঘদিন ধরে বার্ধকব্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সকালে তাকে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করা বদরুদ্দীন উমর। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ছিলেন তিনি। এক সময় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন গড়ে সভাপতির দায়িত্ব নেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শোক: মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের অন্যতম অগ্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করে পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়া বদরুদ্দীন উমর ছিলেন আমাদের মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতির সংগ্রামের এক উজ্জ্বল বাতিঘর। ভাষা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা, গবেষণা, ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি তার অবিচল নিষ্ঠা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের পরিবর্তনের জন্য গোড়া থেকেই গণঅভ্যুত্থানের কথা বলেছেন এবং জুলাই আন্দোলনকে উপমহাদেশের একটি অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি দিয়েছেন। ড. ইউনূস বলেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর শুধু একজন তাত্ত্বিক ছিলেন না, ছিলেন একজন সংগ্রামী, যিনি আজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে সরকার। বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তাশীল মানুষদের জন্য তার লেখনী ও জীবনদর্শন এক অনন্য পথনির্দেশ হিসেবে কাজ করবে। শোকবার্তায় বদরউদ্দীন উমরের শোকসন্তপ্ত পরিবার, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর শোকবার্তা: দেশের প্রখ্যাত চিন্তক, প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দিন ওমর অসুস্থ হয়ে আজ সকালে শ্যামলীস্থ স্পেশালাইজড হাসপাতালে যাবার পথে মৃত্যুবরণ করায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। গতকাল এক শোক বিবৃতিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “বামপন্থী প্রগতিশীল রাজনীতির পথিকৃত, লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ বদরুদ্দিন ওমরের জীবনাবসানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও আমি গভীরভাবে মর্মাহত। স্বাধীনচেতা, নির্ভিক কন্ঠস্বরের এই বুদ্ধিজীবীর এই মূহুর্তে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া জনমনে হতাশার সৃষ্টি করেছে। জনগণের সম্মান ও নিদারুন বেদনাকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি এবং সেটিকে প্রতিবাদের ভাষায় মূর্ত করতে পারতেন মরহুম বদরুদ্দিন ওমর। ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা এবং সকল স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রয়াত বদরুদ্দিন ওমরের চিন্তা ও লেখনিসহ সক্রিয় তৎপরতা ছিল অবিস্মরণীয়। জাতির নানা ক্রান্তিকালে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পর্ব নিয়ে তাঁর গবেষণাধর্মী গ্রন্থ সমূহ এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে পাঠক সমাজের নিকট সমধিক সমাদৃত। মরহুম বদরুদ্দিন ওমর বারবার রাজরোষে পড়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে ছিলেন আপোষহীনভাবে স্থির। কোন ভীতি বা হুমকি তাঁকে নিবৃত্ত করতে পারেনি তাঁর কর্তব্যকর্ম থেকে। স্বৈরতন্ত্রকে উপেক্ষা করে তিনি তাঁর স্বাধীন মতামত প্রকাশে কখনোই কুন্ঠিত হননি। তিনি এদেশে ছিলেন স্বাধীন বিবেকের এক প্রতীক। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শোকবার্তায় বদরুদ্দিন ওমরের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবার-পরিজন, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর শোকবার্তা: দেশের প্রখ্যাত চিন্তাবিদ, বাম রাজনীতিক বদরুদ্দিন ওমর অসুস্থ অবস্থায় আজ সকালে শ্যামলীস্থ স্পেশালাইজড হাসপাতালে যাবার পথে ইন্তেকাল করায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “লেখক, গবেষক, বামধারার বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক বদরুদ্দিন ওমরের মৃত্যুতে আমি বেদনাহত। কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের এবং শোষণ মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণা ছিল তাঁর লেখনি। ইতিহাসের পরিক্রমায় নানা উত্থান-পতনের ঘটনা নিয়ে তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। আজীবন বাম প্রগতিশীল রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট মরহুম বদরুদ্দিন ওমর সহজ, সরল, অনাড়ম্বর জীবনযাপন করেছেন নিজ আদর্শে অবিচল থেকে। কখনোই স্বৈরশাসকের ধমকে নিরব দর্শক হয়ে থাকেননি বরং তিনি তাঁর কথা ও লেখনিতে অন্যায় ও অবিচারের স্বৈরতন্ত্রের মূলে প্রচন্ড শক্তিতে কুঠারঘাত করেছেন। আমৃত্যু তিনি জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করেছেন ও কলম ধরেছেন। রাজনীতির দূর্নীতিকরণের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এক জলন্ত প্রতিবাদ। বিদ্যমান রাজনৈতিক সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাঁর মতো নির্ভিক মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবী’র বেঁচে থাকা খুব জরুরী ছিল। আমি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকাহত পরিবারবর্গ, ভক্ত ও শুভাকাঙ্খীদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *