রাজনীতি

সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, সেটা যেন মার্চ না হয়: দুদু

নিউজ দর্পণ, ঢাকা: বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে, সেটা যেন মার্চ না হয়, এপ্রিল না হয়। বিএনপি সহ রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল। কিন্তু সরকার ফেব্রুয়ারির কথা বলেছে, আমরা মেনে নিয়েছি এবং সরকারকে সহযোগিতা করছি।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ জাতীয় ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত “আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মব সৃষ্টি, চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাস রুখতে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নাই” শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

দুদু বলেন, দেশে মব সৃষ্টি, চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাস গত এক বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু মানুষের প্রত্যাশা ছিল, স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হলে, স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলে, শেখ হাসিনাকে বিদায় করা সম্ভব হলে মানুষ একটু শান্তিতে থাকবে। কিন্তু শান্তি তো দূরে থাক, এখন বিভেদ, মুসিবত নিয়ে মানুষকে বসবাস করতে হয়। চাকরি নাই। যাদের চাকরি ছিল, সেই চাকরিও এখন রক্ষা করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তাঘাটে কখন কে বিপদে পড়বে, এটা আল্লাহ পাক ছাড়া আর কেউ জানে না।

দিনের বেলায় নির্জন রাস্তায় যেকোনো সময় ভয়ংকর ব্যক্তি হাজির হয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নিচ্ছে। পুলিশ তার দায়িত্ব কি সঠিকভাবে পালন করছে?

তিনি বলেন, তাদের (পুলিশের) আবার আরেকটি বক্তব্য আছে, তাদের উপর নাকি ছাত্র জনতা অত্যাচার করেছিল। তাদেরও বুঝতে হবে, ১৫ বছর ধরে তারা বিগত সরকারকে যেভাবে সহায়তা করেছে, ছাত্র জনতাকে গুলি করেছে, এটা ঠিক হয়নি। তাদের নিজেদের সংশোধন হতে হবে, কারণ দেশটা আমাদের সবার। দেশের বালা-মুসিবত থেকে মুক্তির যে পথ, সেটি হচ্ছে মানুষের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তাহলেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, আমরা স্বৈরাচারিতার হাত থেকে মুক্ত হয়েছি, গণতন্ত্রের উত্তরণ এখনও কিন্তু সম্ভব হয়নি। যারা শাসক আছে, তারা আশ্বস্ত করেছেন, ঐতিহাসিক নির্বাচন করবেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। আমরা সেই কারণে, দল বিএনপি, নেতা তারেক রহমান, বেগম জিয়া এবং দেশবাসী সরকারকে সমর্থন করছে। আমাদের পক্ষ থেকে, বিএনপির পক্ষ থেকে, সকল রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দাবি ছিল ডিসেম্বর। কিন্তু তারা বলেছে ফেব্রুয়ারি লাগতে পারে, আমরা সেটা অস্বীকার করিনি। কিন্তু ফেব্রুয়ারি যেন মার্চ না হয়, ফেব্রুয়ারি যেন এপ্রিল না হয়—এটি সরকারকে মনে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মব সৃষ্টি, চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাস এগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সংকট তত কমে আসবে। আর নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, সন্ত্রাসগুলোও বাড়বে, দেশ বিপদে পড়বে। কারণ ফ্যাসিস্টরা পার্শ্ববর্তী দেশে আছে। তাদের হাতে লুণ্ঠিত অর্থ, সীমাহীন লুণ্ঠিত তিন-চার বছরের বাজেটের অর্থ তাদের কাছে আছে। প্রচুর অস্ত্র তাদের হাতে আছে।

সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, দেশের অবস্থা খুব ভালো বলা যাবে না। এর চেয়ে বেশি খারাপ না হোক, বরং উত্তরণের পথ সরকার গ্রহণ করবে। সেটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে—এটা আমরা আশা করি, প্রত্যাশা করি। কারণ আমরা জানি, যারা ১৬ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, গুম হয়েছে, নির্যাতন ভোগ করেছে, রক্ত দিয়েছে, ১৬ বছরে বিএনপির প্রায় ৫,০০০ শহীদ হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী, ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে। তাদের সবারই চাওয়া দেশ সুষ্ঠুভাবে চলুক, দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। আর এই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচিত সরকার দরকার—এইটাই সরকারের মনে রাখতে হবে।

আয়োজক সংগঠনের ডা. মো. এ বি সিদ্দিক হাওলাদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ, ফরিদা ইয়াসমিন, তাঁতি দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, কৃষক দলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এস কে সাদি, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীম মিয়া প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *