রাজনীতি

২০০৮ সালের নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি: ড. মঈন খান

নিউজ দর্পণ, ঢাকা: ২০০৮ সালের নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। তিনি বলেন, সেই ভোটের আগে কে কোথায় নির্বাচিত হবে তা আগেই ঠিক হয়েছিলো বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ঐ সরকার গত ১৫ বছরে পরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংস করেছিলো।

শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদ ও আহতদের স্মরণে ঢাকা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগেই ৩০০ আসনে কে কোথায় নির্বাচিত হবে সেটার পূর্ব নকশা আগে থেকেই কিন্তু করা হয়েছিল। এবং সেভাবেই বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি করা হয়েছিল। মিথ্যা ইতিহাস যেটা ওয়ান ইলেভেন আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেছিলো, সেই মিথ্যা ইতিহাসের মুখোশ উন্মোচন করে দিতে হবে। পরবর্তীতে ভোটার লিস্ট করা হয়েছিল এটা সত্য কিন্তু সেই ভোট ছিল পুরো নিয়ন্ত্রিত।

তিনি বলেছেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক দেশ গঠন করা হবে, যেখানে শহিদদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আজকে আমরা যেখানেই যাই শুনি একটি সংগঠনের লোক সেখানে বসে আছে। ডিসি কে? তারা বলছে—এইটা একটি বিশেষ দলের লোক। ওরা ডিসি-গিরি করছে না, ঐখানে তারা তাদের সংগঠনের কাজ করছে।’

তিনি বলেন,’আমি এমনও শুনেছি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যিনি ডি-জি তিনি তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে বলেছেন—তোমরা রুকন না হলে তোমাদের চাকরি থাকবে না। এটা একদম সত্য কথা, আজকে আমাকে বলেছে। আমি আপনাদের সামনে কোনো মিথ্যা কথা বানিয়ে বলছি না। এইজন্য কি আহনাফ, মুগ্ধ, আবু সাঈদ, ওয়াসিম শেখ হাসিনার পুলিশের গুলিতে জীবন দিয়েছে? নিজের শার্টের বোতাম খুলে দিয়ে পুলিশের গুলি বরণ করে নিয়েছে এই গণতন্ত্রের জন্য? একটি রাজনৈতিক চেতনার রঙে আমাদের প্রশাসন থাকবে? শেখ হাসিনা যে চেতনা তৈরি করেছিলেন সেই পাঁতানো চেতনার জন্যই কি এত রক্তপাত, এত হানাহানি?’ শেখ হাসিনা যেমন তার অপশাসনের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই বলতো—“একে ধরো, এদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দাও।” আবার নতুন করে আমরা দেখছি অন্য চেতনা—ধর্মের নামে। যে রুকন না হলে চাকরি করতে পারবে না।’

রিজভী বলেন, ‘আমাদের অনেকেই উপদেষ্টার পদ পেয়েছেন, অনেকেই ভালো আছেন। তাহলে কি আবার নতুন করে নতুন আঙ্গিকে শেখ হাসিনার যে অপশাসন, দুঃশাসন, চুরি-ডাকাতি, সন্ত্রাস, টাকা লুট, চাঁদাবাজিভর্তি বাণিজ্য, চাকরি-বাণিজ্য—সেটার কি আবার পুনরাবৃত্তি মানুষ দেখতে চায়? এই জন্য কি প্রায় দেড় হাজারের মতো শিশু-কিশোর, তরুণ, শ্রমিক, রিকশাওয়ালারা জীবন দিয়েছে? এই উপলব্ধি তো সবার হওয়া উচিত।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এখনো তো নির্বাচন হয়নি, কে ক্ষমতায় যাবে, জনগণ কাকে ভোট দেবে—এটা তো এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। তাহলে এই কথাগুলো এখনই কেন আসছে? এগুলো কেন আমাদেরকে শুনতে হচ্ছে? অনেক সরকারি দপ্তর থেকে অনেকেই আসছে, তারা বলছে—আমরা কি করব ভাই? আমরা যদি ওই দলের সদস্য, রুকন না হই, আমরা তো চাকরি করতে পারব না। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার ভূত, তার আত্মারা আবার নতুন করে, নতুন কায়দায়, নতুন চেতনায় ভর করেছে। এটার জন্য তো এই ছেলেরা জীবন দেয়নি।’

রিজভী আরও বলেন, ‘আমরা সেই গণতন্ত্র চেয়েছি, যে গণতন্ত্রে এই দেশের ভোটাররা ভোট দিয়ে যাকে ইচ্ছা তাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাবে। এই জন্যই আমাদের লড়াই, এজন্যই আমাদের এত সংগ্রাম, এত ত্যাগ। এই জন্যই স্কুল-কলেজের ছেলেরা এত রক্ত দিয়েছে, নিজেদের জীবন দিয়েছে। এখানে এক চেতনাধারী বিদায় নিয়ে আরেক চেতনাধারী ক্ষমতার মধ্যে বসবে—এটা তো জনগণ প্রত্যাশা করে না। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই চেতনাধারীরা, তাদের লোক হতে হবে। তাদের লোক ছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারবে না, কোনো চাকরি হবে না। আবার সেই একমাত্রিক একটি দেশ গড়ার প্রচেষ্টা চলছে, গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রের জন্য তো দীর্ঘ ষোল বছর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া লড়াই করেননি। এই জন্য গোটা দেশকে সংগঠিত করেননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’

আলোচনা সভায় কালের কণ্ঠ’র সম্পাদক ও বিশিষ্ট কবি হাসান হাফিজ বলেন,’আমরা যেন জুলাই শহীদের সঙ্গে বেইমানি না করি। ৩৬ দিনের আন্দোলনে কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়নি। তার আগে দীর্ঘ সময় ধরে দেড় দশক ধরে পটভূমি তৈরি হয়েছে। অনেক গুম হয়েছে, অনেক খুন হয়েছে। সম্পদ পাচার হয়েছে, চুরি হয়েছে। তারপর প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করা হয়েছে। আপনারা জানেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে।’

নির্বাচন বানচালের জন্য ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। আপনারা জানেন দেশের ভিতরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সীমান্তে রক্তপাত হচ্ছে, দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নির্বাচন বানচালের জন্যে বিভিন্ন মহল একটা সিন্ডিকেট করে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য নানান বিষয় তুলে নির্বাচন বিলম্বিত করার এবং ভণ্ডুল করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমরা যেন সচেতন থাকি, সচেতন থেকে যেন রুখে দাঁড়াই, সম্মিলিত প্রয়াসে যেন রুখে দাঁড়াই। তাহলে কিন্তু জুলাইয়ের আত্মদান বৃথা যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখন সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন করে আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি প্রগতির পথে, কল্যাণের পথে। আর আমাদের যে উপদেষ্টা মণ্ডলী আছেন, তাদের আর সমালোচনায় এখন যাব না। তারা যেন সুসম্মানে বিদায় নিতে পারেন, সেই জন্য তাদেরও সচেতন থাকতে হবে, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।’

সংগঠনের সভাপতি মীর সরফৎ আলী সপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম, সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *