রাজনীতিলীড

দেশের মানুষ আর স্বপ্ন নয় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায়: তারেক রহমান

নিউজ দর্পণ, ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বলেছেন, সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশ এবং জলবায়ুর পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অত্যন্ত। এটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বোধয় কোন সুযোগ নেই। পরিবেশের ব্যালেন্স রক্ষা করার জন্য ইনশাল্লাহ পাঁচ বছরে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ কোটি গাছ লাগানো। যেই গাছ পরিবেশকে যেমন রক্ষা করবে একইভাবে বাংলাদেশকে বন্যা খর থেকেও রক্ষা করবে।

আজ “জুলাই গণঅভ্যুত্থান শোক ও বিজয় আয়োজিত যুব-সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
রমনা ইন্জিনিয়ারিং ইনিস্টিউট প্রাঙ্গনে এ সমাবেশে আয়োজন করে যুবদল। যুব সমাবেশে ১৫ বছরের শহীদ পরিবারকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

তারেক রহমান বলেন, বিগত ১৭ বছর এই দেশের মানুষ তাদের রাজনৈতিক অধিকার, কথা বলার অধিকারের জন্য আন্দোলন – সংগ্রাম করেছে। কত অত্যাচার নির্যাতনের শিকার তা আজ এই সমাবেশের মঞ্চে শহীদ পরিবারের সদস্য যারা বসে আছেন তাদের দেখেলেই বোঝা যায়।

তিনি বলেন, শুধু জুলাই আগস্ট না বিগত ১৫ বছর ধরে বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মী রাজনৈতিক কর্মীর বাইরেও সমাজের বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষরা নিজেদের অধিকারের কথা তুলে ধরতে গিয়ে, দাবি আদায়ের করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে সেই পলাতক স্বৈরাচারে অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই সকল মানুষগুলোকে, সকল শহীদ এবং সকল অত্যাচারিত মানুষ যারা বেঁচে আছেন, নির্যাতিত হয়ে বেঁচে আছেন, প্রত্যেককে সত্যিকারভাবে সম্মানিত করতে চাই। তাদের ত্যাগের প্রতি যদি সম্মান জানাতে হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে সামনে এগোতে হবে। এই দেশকে সামনে নিয়ে যেতে হবে । তাদেরকে শ্রদ্ধা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে তারা যে প্রত্যাশা নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছে , সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা । সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদেরকে সম্মান জানানোর একটি মাত্র উপায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ পরিবর্তন চায়। এখন আর স্বপ্ন কিংবা প্রতিশ্রুতি চায় না। জনগণ এবার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায়। সেই আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়নের চেষ্টা করছি। আগামী দিনের নীতি, জনগণের জীবন উন্নয়নের রাজনীতি, দেশে বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এটি হবে আমাদের রাজনীতির অন্যতম মূল লক্ষ্য। অর্থাৎ মানুষের ভোটের অধিকারকে যেরকম নিশ্চিত করা , মানুষের বাক স্বাধীনতাকে যেমন নিশ্চিত করা, একই সাথে সমাজের দেশের প্রত্যেকটি মানুষ যার যে যোগ্যতা, সেই হিসাবে তাকে তার অবস্থান থেকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। এবং সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএনপির একাধিক টিম দেশের প্রতিটি সেক্টরকে নিয়ে গভীরভাবে কাজ করছে ।

তিনি বলেন, কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্ল্যান প্রোগ্রাম বা কর্মসূচি আমরা পর্যায়ক্রমে তৈরি করছি। হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার নিয়োগের পরিকল্পনা করেছি আমরা। এবং এই হেলথ কেয়ার নিয়োগের শতকরা ৮০ শতাংশ হবে যুবসমাজের মধ্য থেকে নারী সদস্য । তারা একদিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটবে অপরদিকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন ।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি বিখ্যাত এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি কর্মসূচি খাল খনন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা পরিচালনা করে দেখেছি, ইনশল্লাহ আগামী দিনে সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে আমরা যেকোন মূল্যে সমগ্র দেশে শহীদ জিয়ার খাল খনন কর্মসূচি আবার শুরু করব। মানুষকে রক্ষায় এই খাল খনন কর্মসূচি একটি এন্টিবায়োটিকের মত কাজ করে।

তারেক রহমান বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষ কথামালার রাজনীতি আর চাচ্ছে না। তারা একটি পরিবর্তন চাচ্ছে, প্রতিশ্রুতি চাচ্ছে না । বরং প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাচ্ছে। জনগণ এখন সুস্থ পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ছিল এবং জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণের লক্ষে বিএনপি জনগণের জীবন মান উন্নয়নের সুনির্দিষ্টভাবে কতগুলো পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।

তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য কিন্তু প্রয়োজন জনগণের সমর্থন। শুধু জনগণের সমর্থনই প্রয়োজন নয়। একই সাথে প্রয়োজন সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের সহযোগিতা। প্রয়োজন বিএনপির প্রতি জনগণের রায়। কারণ আমরা মনে করি, জনগণীতি বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে যত দ্রুততার সাথে সম্ভব এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু করব। নেতা-কর্মীদের এ পরিকল্পনা গুলো দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

যুবদলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, আপনারা জনগণের বিশ্বাস ধরে রাখুন। মনে রাখবেন, জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে আপনি নেতা। জনগণ প্রত্যাখ্যান করলে আপনি নেতা নন। প্রশাসনিক সহায়তায় নেতৃত্ব হয়তো প্রদর্শন করা যায় কিন্তু জনগণ সহায়তা করলে নেতৃত্ব দেয়া যায়।মনে রাখবেন, আপনাদের প্রতি জনগণের সমর্থন থাকার কারণেই পলাতক স্বৈরাচারের প্রশাসন কিংবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী- যুবদলের নেতা-কর্মী সমর্থকদেরকে রাজপথ থেকে দূরে রাখতে পারে । সুতরাং আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান জনগণের আস্থায় থাকুন।

জাতীয়তাবাদী যুব দলের সভাপতি এম আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মেহেদি আমিন, মানবাধিকার কর্মী সাইয়েদ আবদুল্লাহ, যুব দলের রবিউল ইসলাম নয়ন, দীর্ঘদিন গুম হয়ে থাকা অ্যাডভোকেট সোহেল রানা, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের হাসপাতালে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সায়েম আল মনসুর ফয়েজী, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের হাসপাতালে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সায়েম আল মনসুর ফয়েজী, শহীদ মোসলেহ উদ্দিনের ছেলে আপন, ইয়াহিয়া আলীর মেয়ে তাইয়েবা খাতুন, হাফিজুর রহমান সুমনের স্ত্রী বিধী আখতার, নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসসুম আখতার নেহা বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *