প্রধান সংবাদরাজধানী

ঢাবিতে ছাত্রলীগের পদত্যাগের হিড়িক


নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা মন্তব্য ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে পদত্যাগ করা শুরু করেছেন সংগঠনটির নেতারা। এ হামলার ঘটনাকে ‘নৃশংস’ উল্লেখ করেছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের অন্তত ১৮ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর রোববার (১৪ জুলাই) রাতেই পদত্যাগ করেন।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত এই ১৮ জনের পদত্যাগের ঘোষণা কথা জানা যায়। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

পদত্যাগকারী শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, যেই ছাত্র সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়, নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা করে, তারা সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ নয়। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা অনুচিত।

সদ্য পদত্যাগ করা নেতারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সহ সভাপতি জান্নাতুল মাওয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক জুয়েনা আলম মুন, আইন সম্পাদক সিরাজাম মনিরা তিশা, প্রচার সম্পাদক আমরিন জান্নাত তাইরু এবং নাট্য ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মেহেরুন্নিসা মিম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম হৃদয়, বিজ্ঞান উপসম্পাদক জেবা সায়ীমা, সার্জেন্ট জহরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ওয়াসিক, শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের উপপাঠাগার সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা, বিজয় একাত্তর হল শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপসম্পাদক শাহ সাকিব সাদমান প্রান্ত, জসীমউদ্দিন হল ছাত্রলীগের মো. রাফিউল ইসলাম রাফি, কার্যনির্বাহী সদস্য মেহেদী হাসান।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পর রোববার রাতেই পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া নেতারা হলেন- সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রাতুল আহামেদ ওরফে শ্রাবণ, কলাভবন ছাত্রলীগের ১নং সহসম্পাদক মো. মুহাইমিনুল ইসলাম, আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম এবং রাসেল হোসেন।

বিজয় একাত্তর হলের সহসভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করা শিপন মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন, আমি চলমান ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান করছি। ন্যায়ের পক্ষে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শোকজ খাওয়া এবং মুচলেকার মুখে পড়া ছাত্র আমি। আমি আজীবন নজরুল। প্রতিবাদ আমার রক্তে। আমি আজন্ম প্রতিবাদী পুরুষ। আমি মো. শিপন মিয়া, সহসভাপতি, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। চলমান যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বিজয় একাত্তর হল-এর সহসভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। অন্যায় আর শিপন এক লাইনে থাকে না।

রোকেয়া হলের সহ-সভাপতি জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হলসহ সভাপতি পদ থেকে মুক্তি নিলাম, পদত্যাগ ঘোষণা করেছি, যেহেতু রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছেন, রাজাকার হয়েই থাকতে চাই।

হাসিবুল হাসান হাসিব বলেন, ছাত্রলীগের সাথে আমার পূর্বের সব সম্পর্ক ত্যাগ করলাম, আমার ছোটভাই বন্ধুদের অনেককে নির্মমভাবে পেটানো হইছে। ঘৃণা হচ্ছে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসাবে এতদিন কাজ করায়। বিদায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর করা বক্তব্যের প্রতিবাদে রোববার রাত ১১টার দিকে বিক্ষোভে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এসময় বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে কোটা সংস্কারের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে গতকাল সোমবার বিক্ষোভ কর্মসূচির একপর্যায়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত তিন শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন।

প্রসঙ্গত, রোববার (১৪ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? এই বক্তব্যের প্রতিবাদেই সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *