প্রধান নিউজরাজনীতি

বাংলাদেশে আর কাউকে ‘গণতন্ত্র হত্যা এবং ফ্যাসিবাদ কায়েম’ করতে দেয়া হবে না: তারেক রহমান

নিউজ দর্পণ, ঢাকা: বাংলাদেশে আর কাউকে ‘গণতন্ত্র হত্যা এবং ফ্যাসিবাদ কায়েম’ করতে দেয়া হবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে জাতির উদ্দেশ্যে এক ভিডিও বার্ভায় তিনি এই প্রত্যয় জোরালোভাবে ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ হাজারো শহীদের রক্ত স্নাত রাজপথে ফ্যাসিবাদ বিরোধী অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে না ইনশাআল্লাহ, কাউকে গণতন্ত্র হত্যা করার সুযোগ দেওয়া হবে না।”

‘‘ বাংলাদেশকে আর কখনোই তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেওয়া হবে না ইনশাআল্লাহ। আমি মনে করি এসব প্রশ্ন জাতীয় ঐক্য মহাল আছে থাকবে ইনশাআল্লাহ।”

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ আজ এবং আগামীর প্রতিটি পাঁচ আগস্ট হয়ে উঠুক গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠা আর মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার অঙ্গীকারের দিন।”

‘‘ এই সুমহান অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দীর্ঘ যাত্রায় আমি এবং আমার দল বিএনপি দেশের সকল গণতান্ত্রিকামী আমি জনগণের সমর্থন এবং সহযোগিতা আশা করছে।”

‘ভিন্নমত হচ্ছে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে যার যার দলীয় আদর্শ এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইস্যুভিত্তিক ভিন্ন মত থাকবে। এটি বিরোধ নয় বরং এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।”

‘‘ তবে ভিন্ন মত কিংবা বিরোধের মাত্রা যেন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা, উত্থান কিংবা পুনর্বাসনের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়… সে ব্যাপারে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং গণতান্ত্রিক প্রতি সতর্ক থাকার জন্য বিনীত আহ্বান জানাই। আমি মনে করি, প্রতিটি রাজনৈতিক দল যার যার দলীয় কর্মসূচি কিংবা এজেন্ডা নিয়ে জনগণের আদালতে যাবেন। জনগণ কোনটি গ্রহণ করবেন কিংবা কোনটি বর্জন করবেন এটি সম্পূর্ণ জনগণের এখতিয়ার। এভাবেই প্রতিদিনের রাজনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র জনগণকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।”

‘জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ স্থানীয় সরকার থেকে আরম্ভ করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জনগণ যখন সরাসরি নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নিজের ভোট প্রয়োগ করে প্রতিনিধি নির্বাচন না করবে, সরকার গঠন কিংবা সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা অর্জন করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র এবং সরকারে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে না।”

‘‘ আসুন রাষ্ট্র সরকার শাসন প্রশাসন পরিচালনায় আর প্রতিদিনের কার্যক্রমে জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার চর্চা প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলি। জনগণকে শক্তিশালী করে তুলতে না পারলে শেষ পর্যন্ত কোন কিছুই শক্তিশালী এবং টেকসই হবে না।”

‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ ২৪ সালে ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের ঘৃণতম ফ্যাসিস্ট পালিয়ে যাওয়ার পরপরই বীর জনতার উদ্দেশ্যে অভিনন্দন বার্তায় আমি বলেছিলাম বিজয়ের কাছে পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয় সেটি পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আমার আহ্বান কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না, মব-য়োলেন্সকে উৎসাহিত করবেন না, নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করবেন না, অন্যের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন।”

‘‘ একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন আমরা তেমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে দল মত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, সংশয়বাদী, প্রতিটি সন্তান প্রতিটি মানুষ নিরাপদে থাকবে।”

‘ফ্যাসিস্টদের পক্ষে সাফাই গাওয়াও গ্রহণযোগ্য নয়’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে স্বাধীনতা পরবর্তী তিন সাড়ে তিন বছরের সময়কাল ছাড়া আর কোন শাসনামলের তুলনা চলে না। সুতরাং আমি সবাইকে বিনীতভাবে আহ্বান জানাবো, হিটলারের নাফসিবাদ সম্পর্কে যেমন কেউ গৌরব করে না, পলাতক ফ্যাসিস্ট এর শাসনকাল নিয়েও গৌরব করার কিছুই নেই।”

‘‘ ডাকাতি করে কিছু সম্পদ চ্যারিটি করলেও জনগণের চোখের ডাকাত যেমন গ্রহণযোগ্য নয় তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা খুঁজতে গিয়ে কৌশলে পলাতক ফ্যাসিস্টদের পক্ষে সাফাই গাওয়াও তেমন গ্রহণযোগ্য হতেই পারে না।”

‘ফ্যাসিস্টদের মনে এখনও কোনো অনুতাপ নেই’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ যারা কৌশলে ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তুলনা করতে চান তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যা ঘটেছে এটি শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের ইতিহাসেও মনে হয় নজিরবিহীন। ৫ আগস্ট গণভবন ছেড়ে ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে সংসদ ভবন রেখে তথাকথিত সাংসদ পালিয়েছে, আদালত ছেড়ে প্রধান বিচারপতি পালিয়েছে, বায়তুল মোকারম ছেড়ে প্রধান খতিব পালিয়েছে, ক্যাবিনেট ছেড়ে মন্ত্রীরা পালিয়েছে।”

‘‘ ফ্যাসিস্টের দোসররা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে পলাতক ফ্যাসিস্টের চক্রের মনে এখনো কোন অনুতাপ অনুসূচনা নেই।

‘শহীদদের কাছে আমরা ঋণী’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ একাত্তর সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ আর ‘২৪ সাল ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। একাত্তর সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বাংলাদেশ ভুলেনি, ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদদেরকেও বাংলাদেশ ভুলবে না। একাত্তর থেকে আজ পর্যন্ত দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীনতা রক্ষা, স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন এভাবেই ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে লাখো মানুষ হয়েছেন শহীদ। আজকের এই দিনে আমি আবারও সকল শহীদদের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি।”

‘‘ দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে শহীদগণ আমাদেরকে ঋণী করে গেছেন। এবার শহীদদের প্রতি আমাদের ঋণ পরিশোধের পালা। শহীদ পরিবারের কাছে সমগ্র বাংলাদেশ। দেশের জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি ইনসাফ ভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমেই আমরা শহীদদের প্রতি ঋণ পরিশোধ করতে পারি।”

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামালে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এবং ব্যক্তি ও নাগরিকের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, গুম-হত্যা-মিথ্যা মামলায় কারাবাসসহ ’২৪ জুলাই-আগস্টে নিপীড়নের চিত্র তারেক রহমান তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *