রাজনীতিলিড

আ.লীগ নয় দেশ চালাচ্ছে অদৃশ্য শক্তি: মির্জা ফখরুল


নিউজ দর্পণ, ঢাকা:
আওয়ামী লীগ নয় দেশ অদৃশ্য শক্তি চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মিজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আজকে নিজ দেশে থেকে আমরা পরবাসী হয়েছি। আজকে চিকিৎসার দেশের বাইরে গেলে বা আসলে ঘন্টার পর ঘন্টা বিমানবন্দরে বসিয়ে রাখা হয়। আজকে যুবকদের চাকুরি হয়না। বিএনপি করলে তাদের চাকরি নেই। কারও বাবা-চাচা বা পরিবারের কেউ বিএনপি করলে চাকুরি নেই। বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে চাকুরি দেয়। আসলে দেশ কি আওয়ামী লীগ চালাচ্ছে? দেশ চালাচ্ছে অদৃশ্য শক্তি।
আজ শনিবার নয়াপল্টনের জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাসহ নি:শর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। দুপুর থেকেই সমাবেশে অংশ নিতে ব্যানার, ফেস্টুনসহ খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী নয়াপল্টনে জড়ো হয়। এসময় তারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
এদিকে সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি নাকি সন্ত্রাস করছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সন্ত্রাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগের জন্ম। আপনারা মওলানা ভাসানীকে মার দিয়ে রুপমহল সিনেমা হল থেকে বের করে দিয়েছিলেন। পরে ভাসানী বাংলাদেশ ন্যাপ করেছিল। পাকিস্তান আমলে ডেপুটি স্পিকারকে পিটিয়ে কারা হত্যা করেছিল সেটা ভুলে যাইনি। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলন দমিয়ে রাখতে চায়। ২৮ শে অক্টোবর তারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিএনপির নেতা কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছে। আজকেও সমাবেশে স্থলে পটকা ফুটিয়ে বিশৃঙ্খলা করতে চেয়েছে। এসব কারা করে জনগণ জানে।
খালেদা জিয়া শারীকিভাবে অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারর্পাসন বেগম খালেদা জিয়া শুধু বাংলাদেশের মজলুম নেত্রী নন। তিনি সারাবিশে^র গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা, আত্মত্যাগকারী নেতাদের অন্যতম। তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা ও ফিরে পাওয়ার জন্য আজীবন লড়াই করছেন। যিনি গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। কিন্তু দানব সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। ৫ বছরের সাজা পরবর্তীতে দশ বছর করা হয়েছে। অথচ মিথ্যা মামলায় অনেকে জামিন পেলেও খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হয় না। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। কিন্তু তাকে মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। কারণ সরকার মনে করে খালেদা জিয়া মুক্ত হলে তাদের মসনদ টিকে থাকবে না। জনগণের উত্তাল তরঙ্গের মধ্যে ভেসে যাবে। সেজন্য খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখা হয়েছে। আমি খালেদা জিয়াসহ সকল আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের লজ্জা-শরম কিছু নেই। সন্ত্রাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগের জন্ম। নমরুদ-ফেরাউন, হিটলার, মুসোলিনি এমনকি স্বৈরাচার এরশাদও টিকে থাকতে পারেনি। এদেশের মানুষ কিন্তু সংগ্রামী। আমাদের আন্দোলন চলছে। অনেক নেতাকর্মী এখনও জেলে। আমাদের নেতা তারেক রহমান বিদেশে আছেন। তাকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের লজ্জা-শরম বলতে কিছু নেই। তারা লজ্জা-শরমের মাথা খেয়েছে। তারা দেশকে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে দেশ চালাচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন জনগণের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। তাদেরকে বাধ্য করবেন না উত্তাল তরঙ্গ তৈরি করতে।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার টিকেই আছে মিথ্যা মামলা ও আদালতকে ব্যবহার করে। নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে মিথ্যা মামলা ও আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনকে নিদারুণভাবে পন্ড করে দিয়েছে। তারা এভাবে আন্দোলন দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে এভাবে নির্যাতন-নিপীড়ণ ও গুম-খুন করে গণতন্ত্র ও স্বাধিকারের আন্দোলন কখনই স্তিমিত করা যাবে না। অতীতেও যায়নি।
যুবদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে লড়াই সংগ্রাম করেছি। আজকে দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর হলেও দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। ২০০৮ সাল থেকে দেশের মানুষ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেনা। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতায় এসে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে ৭৫ সালের মতো আবারও একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চায়। সেটা হলো গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল। সুতরাং তরুণ-যুবকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। না হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব জলাঞ্জলি যাবে।
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, কিছু দিন পর পর বন্ড বের করে শেয়ারবাজার লুট করা হচ্ছে। আর সামিট গ্রুপ দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে সিঙ্গাপুরে শীর্ষ ধনী হয়েছে। ভারতের আদানি গোষ্ঠীও বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। গত ১৮ বছর ধরে দেশের জনগণের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে বাকশাল কায়েমের চূড়ান্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। মানুষ ভোটাধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সাধারণ মানুষ বাজারে গেলে চাল, ডাল, পেয়াজ-রসুন কিনতে পারেনা। প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে। রেলের ভাড়া বাড়ছে। রিকশা ওয়ালা, মধ্য বিত্তরা ঠিকমতো খেতে পারে না। তারাও খাওয়ার মেন্যু পরিবর্তন করেছে। অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছে। ব্যাংক লুট পাট করছে নতুন আইনের মাধ্যমে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সহযোগী হয়েছে। তারা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোথায় যাবেন? আসলে আমরা নিজ দেশে পরবাসী। বিমানবন্দরগুলোতেও হয়রানি করা হয়। তাহলে দেশ চালাচ্ছে কে? আমার মনে হয় অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছেন। এখানে জড়িত আছেন দেশের পুলিশ, প্রশাসনসহ অনেকেই। বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা তো নেই। এখন আবার ডামি নির্বাচন শুরু হয়েছে। মানে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে আর তাদেরই লোকজন বিরোধী প্রার্থী হবে। এখানে কিছু গৃহপালিত দলও আছে। একটা ক্যারিকেচার বা তামাশা শুরু করেছে। এজন্য তো দেশ স্বাধীন করিনি। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস,গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জাতীয়তাবাদের যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *