সিলেটে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়েও মিলছে না সুফল

নিউজ দর্পণ, সিলেট : সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, ছড়া উদ্ধার ও সংস্কারে গত ১১ বছরে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার চারটি প্রকল্প নেয়া হয়। এরই মধ্যে তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সবশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এ প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান। কিন্তু বছর বছর এত প্রকল্প নেয়া সত্ত্বেও জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের কারণেই নগরজুড়ে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। তাছাড়া নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খাল ভরাটের কারণে বৃষ্টির পানি নামতে দেরি হওয়ায় জলাবদ্ধতার স্থায়িত্ব বেশি হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

গত সোমবার বৃষ্টিতেও জলমগ্ন হয়ে পড়ে নগরীর অনেক এলাকা। বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়ে বৃষ্টির পানি। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

ছড়া উদ্ধার ও জলাবদ্ধতা নিরসনে এত এত প্রকল্প সত্ত্বেও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি না মেলায় প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে নগরীর অপরিকল্পিত উন্নয়নকেও দায়ী করেছেন অনেকে।

তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবহমান সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। নদী খনন না হওয়ায় বৃষ্টির পানি নদী দিয়ে যেতে পারে না। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে সুরমা নদী ছাড়াও প্রবাহিত হয়েছে ছোট-বড় ১৪টি ছড়া ও খাল। মূলত প্রভাবশালীরা ছড়া ও খালগুলো দখল করে রাখায় বর্ষা মৌসুমে লেগে থাকে জলাবদ্ধতা।

৭২ কিলোমিটারের এসব ছড়া-খাল উদ্ধার, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য গত ১১ বছরে নেয়া হয় চারটি প্রকল্প। ২০০৯ সালে নগরীর ছড়াগুলো উদ্ধারে ১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপর ২০১৩ সালে একই লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয় ২০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প। এরপর ২০১৬ সালে নেয়া হয় ২৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার প্রকল্প। এরমধ্যে এ তিন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। গত ডিসেম্বরে অনুমোদন মিলেছে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প।

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নগরী মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, কানিশাইল, উপশহর, তেররতন, সুবিদবাজার, জামতলা, তালতলা এলাকাসহ নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা যায়। এসব এলাকার বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে। সড়কে পানি জমে যানবাহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে।

বৃষ্টিতে বাসায় পানি ঢুকে পড়ে নগরীর লামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনিস মাহমুদের বাসায়। তিনি বলেন, গত বুধবার রাতের বৃষ্টিতে রাস্তায় কোমর পর্যন্ত পানি জমে ছিল। আর আমার বাসায় ছিল হাঁটুপানি। বৃষ্টি হলেই এ এলাকায় পানি ওঠে। এজন্য এলাকার হাজারো মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অসময়ে ও অপরিকল্পিতভাবে সিসিকের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডই নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।

একই রাতে নগরীর ১৩ নং ওয়ার্ডের জামতলা এলাকার বাসিন্দা এএইচ আরিফের বাসায় পানি ঢুকে পড়ে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বৃষ্টি একটু বেশি হলেই নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে নগরীর নিচু এলাকাগুলোর বাসিন্দা বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের গৃহীত প্রকল্পগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

জলাবদ্ধতা নিরসনে এত প্রকল্পের বাস্তবায়ন সত্ত্বেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, সিলেট নগরীর কিছু কিছু নিচু এলাকায় প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে এমনটি হচ্ছে। তবে আগে যেমন অল্প বৃষ্টিতেই নগরজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো এবং সহজে এ পানি নামত না, এখন তেমনটি হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এখন অধিক বৃষ্টি হলে অপেক্ষাকৃত নিচু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। এছাড়া সিলেট নগরীর পানি ছড়া-খাল দিয়ে সুরমা নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু এখন এ নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি কাটতে পারে না। বরং কয়েক দিন বৃষ্টি হলে বা ঢল নামলে নদী উপচে নগরীতে পানি প্রবেশ করে। এ কারণে সুরমা নদী খনন করা জরুরি। আর নগরবাসীর জলবদ্ধতার দুর্ভোগ লাঘবে আমাদের বেশকিছু কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি এলাকায় গভীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বিভিন্ন খাল ও ছড়া উদ্ধার করে সেগুলোকে পরিষ্কার করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে সিসিক কাজ করে যাচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে।

সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সুরমা নদী খনন করা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *