সাহেদ ঠান্ডা মাথার প্রতারক ,অর্থলিপ্সু: র্যাব
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: গ্রেপ্তারের পর রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব। আজ বুধবার সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনার পর সাহেদকে প্রথমে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাহেদ একজন ঠান্ডা মাথার প্রতারক। তিনি আগেও জেলে গেছেন। ফলে আইনি বিষয়গুলো তার ভালোভাবেই জানা। সে নানা সময় নানা কথা বলছে। বিভ্রান্তিকর তথ্যও দিচ্ছে।
গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর পর সাহেদ বারবার স্থান পরিবর্তন করছিলেন বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে সাহেদ জানান, প্রথমে তিনি মহেশখালির একটি সাইক্লোন সেন্টারে ছিলেন। পরে সেখান থেকে চলে আসেন কুমিল্লায়। এরপর চলতি মাসের ১২ তারিখে তিনি ঢাকার গুলশানে আসেন। কিন্তু এখানে নিরাপদ মনে না করায় সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকায় চলে যান। সেখানে গিয়ে দালালদের মাধ্যমে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন তিনি। এর মধ্যেই গোয়েন্দা জালে আটকা পড়ে আজ ভোরে র্যাবের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
র্যাবের গণমাধ্যম পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা কিছু দালালের খোঁজ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রিজেন্ট হাসপাতালে কর্ণধার সাহেদ করিম নিজেকে যতোই ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করুক না কেন, সে মূলত চতুর ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু। সকালে এই পলাতক আসামীকে আটকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি এসময় তার বিরুদ্ধে প্রতারণার কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন এবং কীভাবে তাকে ধরা সম্ভব হলো সেসব নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরা থেকে আটক করে ঢাকায় আনার পর সাহেদ ও তার সঙ্গী গ্রেফতারকৃত মাসুদকে নিয়ে অভিযানে যায় র্যাব। সেখানে রিজেন্ট গ্রুপের এক কার্যালয় থেকে এক লাখ ৪৬ হাজার জাল টাকা উদ্ধার করা হয়।
সে নিজেকে কখনো অবসরপ্রাপ্ত কখনও চাকুরিররত সেনা কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিতো। কখনো মিডিয়া ব্যক্তিত্ব পরিচয় দিতো এবং সুকৌশলে ছবি তুলে সেটা ব্যবহার করতো। এমনকি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, সাহেদ বালু, পাথর ব্যবসায়ীদের ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে প্রতারিত করেছে।
১০ হাজার পরীক্ষায় ৬ হাজার ভুয়া রিপোর্ট : তার বিরুদ্ধে অনেক মামলার বিষয়ে জানা গেছে। সেসবের তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এর নামে প্রতারণা করছিল উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিনামূল্যে পরীক্ষা করার কথা থাকলেও ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা করে নেওয়া হতো এবং পুনরায় পরীক্ষার জন্য ১০০০ গ্রহণ করতো। আইসিইউতে ভর্তি করে মোটা অংকের টাকা দাবি করতো। এখন পযন্ত ১০ হাজারের অধিক পরীক্ষা করে ৬ হাজার ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে সাহেদের প্রতিষ্ঠান। একদিকে রোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, আরেক দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের বিলেরও জন্য জমা দিয়েছে সাহেদের হাসপাতাল রিজেন্ট।
কোথায় আত্মগোপনে ছিল : গত কয়দিন সে কোথায় ছিল জানাতে গিয়ে ডিজি বলেন, জিজ্ঞাবাদে জানা যায়, একেকদিন একেক জায়গায় আত্মগোপনে ছিল। ঢাকা কক্সবাজার সাতক্ষীরা অঞ্চলে সুকৌশলে আত্মগোপনে ছিল সে। দেড়হাজার কোমড়পুর সীমান্তে লবঙ্গবাতি খাল দিয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করলে সে ধরা পড়ে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগকার্যক্রম গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কীভাবে ধরা হলো : কীভাবে এই প্রতারককে ধরা হলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে র্যাবের ডিজি বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা জেনেছেন সাহেদ কী মানের প্রতারণার কাজ করতে পারে। গত কয়েকদিন ধরেই তিনি এক জায়গা থেকে এক জায়গায় স্থান পরিবর্তন করছিল। আমরা তাকে ফলো করেছি। এবং সবশেষে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছি। ঢাকা কবে ছেড়েছে প্রশ্নে র্যাব মহাপরিচালক জানান, সে ঢাকা ছেড়েছে আবার ঢাকায় ফিরেছে, আবার বেরিয়েছে। এসবের মধ্যেই ছিল। এই পুরো সময়টাতে তিনি কখনো ব্যক্তিগত গাড়ি, কখনও হেঁটে, কখনও ট্রাকে চলাচল করছিল। অবশেষে নৌকা দিয়ে পার হওয়ার সময় আমরা তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছি।