বিএনপি নেতা শাহজাহান সিরাজের জানাজায় মানুষের ঢল

নিউজ দর্পণ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী, বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী শাহজাহান সিরাজের জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে।  শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর চোখের জলে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী এই মুক্তিযোদ্ধাকে শেষ বিদায় জানান টাঙ্গাইলের সর্বস্তরের মানুষ।

আজ বুধবার  বেলা সাড়ে ১১টায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে শাহজাহান সিরাজের মরদেহ ঢাকা থেকে এলেঙ্গায় পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রিয় নেতাকে দেখার জন্য দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে।

দুপুর ১২টার দিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা সরকারি শামসুল হক কলেজ মাঠে তার প্রথম জানাজা ও দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে কালিহাতী সদরের শাহজাহান সিরাজ কলেজ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে।

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আরা নিপার উপস্থিতিতে এই বীর সন্তানকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ তার জানাজায় অংশ নেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় মাঠে জায়গা হয়নি সবার। পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেক মানুষ জানাজা পড়েন। দুই জানাজায় প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষে ফুল দিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহজাহান সিরাজের অবদানের কথা স্মরণ করে বক্তব্য দেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন শাহজাহান সিরাজের মেয়ে ব্যারিস্টার সারোয়ার সিরাজ শুক্লা। জানাজা শেষে তার মরদেহ ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

জানাজায় অংশগ্রহণ করেন টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বিকম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল, টাঙ্গাইল জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম রফিক, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শুকুর মাহমুদ ও কালিহাতী পৌরসভার মেয়র আলী আকবর জব্বার।

প্রসঙ্গত, শাহজাহান সিরাজ মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শাহজাহান সিরাজ ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হতো শাহজাহান সিরাজ ছিলেন তাদেরই একজন।

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বিশাল এক ছাত্রসমাবেশে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন তৎকালীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ। এরপর যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’র (বিএলএফ) দায়িত্ব নেন। মুক্তিযুদ্ধের পর শাহজাহান সিরাজ সর্বদলীয় সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নেন।

পরবর্তীতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন। এরপর জাসদ বিভক্ত হলে তিনি একাংশের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে তিনি তার নেতৃত্বাধীন জাসদ বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে যোগদান করে দলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। ষাটের দশকে বঙ্গের আলীগড় খ্যাত টাঙ্গাইলের করটিয়ার সরকারি সা’দত কলেজের দুবার ভিপি ছিলেন তিনি।

এরপর তিনি ১৯৭০-৭২ মেয়াদে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে দক্ষ, জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ শাহজাহান সিরাজ জাসদ ও বিএনপির প্রার্থী হয়ে ১৯৭৯, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পাঁচবার টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি বিএনপি সরকারের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী, বন ও পরিবেশ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *