বাংলাদেশের প্রশংসায় ধারাভাষ্যকারের চাকরি হারিয়েছিলেন হর্ষ ভোগলে

নিউজ দর্পণ ডেস্ক: ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ। চরম উত্তেজনাপূর্ণ সেই ম্যাচে বাংলাদেশকে ১ রানে হারিয়ে দেয় ভারত। এরপর বাংলাদেশের জন্য কিছু প্রশংসাসূচক কথা বলেছিলেন জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে। এরপর তার ওপর ক্ষেপে যান বলিউডের শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনসহ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা! যে কারণে তাকে ধারাভাষ্যকারের চাকরিটাও চলে যায়। ভারতের এই খ্যাতিমান ধারাভাষ্যকারের জীবনের দিকে একটু তাকানো যাক।

হর্ষা অনায়াসে হতে পারতেন সফল ইঞ্জিনিয়ার অথবা কর্পোরেট চাকুরে। কিন্তু মেধাবী হর্ষ সাড়া দিয়েছিলেন তার প্যাশন ক্রিকেটের ডাকে। হায়দরাবাদের এক অধ্যাপক দম্পতির ঘরে হর্ষের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৯ জুলাই। তার বাবা ছিলেন ফরাসি ভাষার অধ্যাপক। মা অধ্যাপনা করতেন মনোবিজ্ঞান নিয়ে। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব টেকনোলজি থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন মেধাবী হর্ষ। তার পরবর্তী গন্তব্য ছিল আমদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট।

আইআইএম থেকে ম্যানেজমেন্টে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন হর্ষ। তার প্রথম চাকরি ছিল বিজ্ঞাপন সংস্থায়। পরে দুই বছর এক স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় কাজ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি হর্ষর জীবন জুড়ে ছিল ক্রিকেট। হায়দরাবাদে তিনি ‘এ’ ডিভিশন স্তর পর্যন্ত ক্রিকেট খেলেছেন। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বাইশ গজে খেলার সঙ্গে হর্ষ উপভোগ করতেন ধারাভাষ্য দেওয়া। মাত্র ১৯ বছর থেকে তিনি ধারাবিবরণী দিতেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে।

১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় তাকে ধারাভাষ্য দিতে আমন্ত্রণ জানায় অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন। প্রথম ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হিসেবে হর্ষ এই সম্মান লাভ করেন। ১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপে হর্ষর ধারাবিবরণী তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। পেয়েছিলেন ‘সেক্সিয়েস্ট ভয়েস’ উপাধি। এরপর তিনি কাজ করেছেন এবিসি রেডিও গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের হয়ে। ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সময় হর্ষ ভোগলে ছিলেন বিবিসির ধারাভাষ্যকার।

এরপর ক্রমে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হর্ষ হয়ে ওঠেন বেসরকারি স্পোর্টস চ্যানেলের ক্রিকেট ধারাবিবরণীর অন্যতম মুখ। অস্ট্রেলিয়ার ধারাভাষ্যকার রিচি বেনোর সঙ্গে তার কণ্ঠের তুলনা করা হয়। ক্রিকেট বোধ, সেন্স অব হিউমার এবং চমৎকার বাচনভঙ্গি তার সাফল্যের চাবিকাঠি। ২০০৮ আইপিএলে হর্ষ ভোগলে ছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের উপদেষ্টা। তার পরের মৌসুমে তিনি আইপিএলে ধারাভাষ্য দেওয়া শুরু করেন। তার সঞ্চালনায় জনপ্রিয় হয়েছে বিভিন্ন টেলিভিশন শো। পাশাপাশি বই লিখছেন। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের জীবনী লিখেছেন তিনি।

আমদাবাদ আইআইএমের সহপাঠি অনিতাকে বিয়ে করেছেন হর্ষ। স্বামী স্ত্রী মিলে মুম্বাইয়ে একটা কনসালটেন্সি ফার্ম চালান। কাজে সুখ্যাতির পাশাপাশি এসেছে বিতর্কও। বাংলাদেশের প্রশংসা করায় বিসিসিআই তাকে ধারাভাষ্যকার হিসেবে খারিজ করে। তবে হর্ষর দাবি, কী কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল সেটা বিসিসিআই কখনই স্পষ্ট করেনি।

ভেতরের খবর হলো, বাংলাদেশের প্রশংসা করে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সমালোচনা করায় বিসিসিআই কর্মকর্তাদের রোষের শিকার হয়েছিলেন হর্ষ। যদিও এখনও তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে সবসময় প্রশংসা এবং গঠনমূলক সমালোচনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *