বগুড়ায় ছুরিকাহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রনির মৃত্যু
নিউজ দর্পণ,বগুড়া: বগুড়ায় পুলিশের তথ্যদাতা (সোর্স) ও তাঁর সহযোগীদের হামলার সময় ভাগনেকে রক্ষা করতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রনি (৩২) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল রোববার রাত দেড়টার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোকনুজ্জামান মারা যান।
রোকনুজ্জামান বগুড়া শহরের মালগ্রাম মধ্যপাড়ার বাসিন্দা। তিনি বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। এ নিয়ে গত পাঁচ মাসে বগুড়া শহরে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের পাঁচজনকে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হলো।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মালগ্রাম এলাকার একটি কবরস্থানে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় মালগ্রাম মধ্যপাড়ার রিফাতুজ্জামান ছদ্মের (২৩) সঙ্গে বিরোধ বাধে মালগ্রাম কসাইপাড়ার আমিন নামের এক যুবকের। রিফাতুজ্জামান বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রোকনুজ্জামানের ভাগনে। আমিন বগুড়া শহরের বাদুরতলা প্রেসপট্টি এলাকার একটি ছাপাখানার শ্রমিক।
পুলিশ বলছে, রিফাতুজ্জামানের সঙ্গে পূর্ববিরোধের জেরে ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাদুড়তলা এলাকায় আমিনকে পেয়ে মারধর করেন কয়েকজন তরুণ। তাঁরা রিফাতুজ্জামানের সহযোগী বলে আমিন সন্দেহ করেন। আমিনকে মারধরের বিষয়টি তাঁর ভাই মুক্তার হোসেন জানার পর তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পুলিশের ‘সোর্স’ হিসেবে পরিচিত আবদুস সোবহানের কাছে নালিশ করেন। এরপর সোবহান তাঁর সহযোগী মুক্তার, নোমান, রহিম, সম্রাট, মুন্না, রকিবুলসহ আরও কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে রিফাতুজ্জামানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে মারধর ও পেটে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় রোকনুজ্জামান তাঁর ভাগনেকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে তাঁকেও পাঁজরে ও পায়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় মামা-ভাগনেকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় রোকনুজ্জামানের বড় বোন শারমিন আকতার বাদী হয়ে ১৯ জুলাই বগুড়া সদর থানায় আবদুস সোবহানসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। পুলিশ ওই দিনই রাকিবুল নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার বাদী শারমিন আকতার অভিযোগ করেন, তাঁর ভাই রোকনুজ্জামান ও ছেলে রিফাতুজ্জামানকে ১৮ জুলাই সন্ধ্যার আগে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সোবহান ও তাঁর সহযোগীরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেছেন। দুজনের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাঁর ছেলে রিফাতুজ্জামানের অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাতে তাঁর ভাই রোকনুজ্জামান মারা গেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শহরের স্টেডিয়াম ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মামলার পরপরই এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবদুস সোবহান ও তাঁর সহযোগীরা পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, আবদুস সোবহান পুলিশের সোর্স কি না, তা তাঁর জানা নেই। তবে পুলিশের নিয়োগ দেওয়া সোর্স নেই। পুলিশকে যেকেউই তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেই পারে। ওই ঘটনার পর থেকে সোবহান ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।