ফেনীতে দুর্যোগ কবলিত ২৮২ হেক্টর জমির আমন, বন্ধ বিদ্যুৎ সরবরাহ
নিউজ দর্পণ, ফেনী: ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে শুক্রবার বিকেল থেকে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বয়ে গেছে ফেনীতে। এতে জেলার বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাছ কেটে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। অন্যদিকে ঝড়ো বাতাসে ২৮২ হেক্টর জমিতে পাকা ও আধপাকা আমন ধান নুয়ে পড়েছে। গাছ ভেঙে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটির। এতে জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে জেলায় দুর্যোগ কবলিত হয়েছে ২৮২ হেক্টর জমির আমন ফসল। শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৩৯২ হেক্টর। দুর্যোগের কবলে পড়েছে ২৩ হেক্টর। সরিষা আবাদ হয়েছে ২০ হেক্টর জমিতে। দুর্যোগ কবলিত হয়েছে দুই হেক্টর জমির সরিষা। এছাড়া দুর্যোগের কবলে পড়েছে আধা হেক্টর জমির খেসারি। ঝড়ের কারণে ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও রবিশস্য আবাদ পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দমকা হাওয়ায় জেলায় ৫৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনটি ঘরের চাল উড়ে গেছে।
ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান বলেন, বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া ও গাছ ভেঙে পড়ে ৫৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৭২টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গেছে। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জেলার প্রায় ৬০ শতাংশ জায়গায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়নি। বিদ্যুৎ কর্মীরা নিরবচ্ছিন্ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ফেনীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একরাম উদ্দিন বলেন, দুর্যোগ আক্রান্ত আমন ফসলি জমির মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ১১০ হেক্টর, ছাগলনাইয়ায় ৭০ হেক্টর, ফুলগাজীতে ১৫ হেক্টর, পরশুরামে ২০ হেক্টর, দাগনভূঞায় ১৭ হেক্টর ও সোনাগাজীতে ৫০ হেক্টর।
এছাড়া শীতকালীন সবজি ও সরিষা ফেনী সদর উপজেলায় ছয় হেক্টর, ছাগলনাইয়ায় সাড়ে ৪ হেক্টর, ফুলগাজীতে আড়াই হেক্টর, পরশুরামে ২ হেক্টর, দাগনভূঞায় ৫ হেক্টর, সোনাগাজীতে ৫ হেক্টর, খেসারি আধা হেক্টর। ফেনীতে ১৭ নভেম্বর বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৭ দশমিক ৩৩ মিলিমিটার ও ১৮ নভেম্বর বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬১ দশমিক ৩৩ মিলিমিটার।
তিনি আরও বলেন, ঝড়ো বাতাসের কবলে ধান হেলে পড়েছে। আক্রান্ত ধানের স্তর দানা ও পাকা পর্যায়ে রয়েছে। সবজি ও অন্যান্য আক্রান্ত ফসল আর বৃষ্টি না হলে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
পরশুরামের বীরচন্দ্র নগর এলাকার কৃষক আবুল কালাম বলেন, ফলন ভালো হলেও আমন ধান ঘরে তুলতে পারবো কি না জানি না। বাতাসে ২০ শতকের বেশি জমির ধান নুয়ে পড়েছে। এছাড়া সকাল থেকে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। সবকিছু স্বাভাবিক না হলে আমাদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের কে.পাহালিয়া এগ্রোর উদ্যোক্তা মো. মজিবুল হক রিপন বলেন, ঝড়ে এগ্রো ফার্মে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একশর বেশি পেঁপে গাছ ভেঙে পড়েছে। প্রতিটি গাছে এক-দেড় মণ পেঁপে ছিল।
শীতকালীন সবজি চাষি সোনাগাজীর চর দরবেশ এলাকার সিরাজ উল্লাহ বলেন, বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় সবজির বীজ থেকে গাছ না ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে অক্টোবরেও কয়েকদিনের টানা বর্ষণে সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। যার প্রভাব পড়েছিল সবজির বাজারে। এবারো সেই আশঙ্কা রয়েছে।
সোনাগাজীর চর চান্দিয়া এলাকার কৃষক আবদুল গফুর বলেন, ওই এলাকার ফসলি মাঠজুড়ে টমেটো, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউসহ নানা জাতের শাকসবজির গাছ রয়েছে। খেতে পানি জমে এখন চারা মরার পথে। আবার ঝড়ো বাতাসে টমেটোর গাছ ভেঙে নষ্ট হচ্ছে।
সোনাগাজী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খামারি ক্রীড়াবিদ জসিম উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তাণ্ডবে গাছ উপড়ে পড়ে ডেইরি ফার্মের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেছি।
সোনাগাজীর চর চান্দিয়া এলাকার সালেহা খাতুন বলেন, মিধিলির ঝড়ো বাতাসে কাঁচা ঘরের টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। মেরামতের টাকা নেই। খোলা আকাশের নিচে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছি। সোনাগাজীর চর চান্দিয়া এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক জানান, ধান কাটা শুরু করেছি। হঠাৎ এই ঝড় বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গেছে। পানি দ্রুত শুকিয়ে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা কম।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, সড়কের যেসব স্থানে গাছ পড়েছে তা রাতে থেকে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস গাছ সরিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করেছে। সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে। ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, মিধিলির প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। ঘর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে টিন দিয়ে সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন।