দুর্নীতির সঙ্গে সরকার ও প্রশাসনের যোগসূত্র ওপেন সিক্রেট : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিটি দুর্নীতির সঙ্গে সরকার ও প্রশাসনের যোগসূত্র ছিল প্রায় ওপেন সিক্রেট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী জাহেলিয়াতের এই অন্ধকার সময়ে ক্ষমতাসীন দলের সরকার ও প্রশাসনের প্রশ্রয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ার কিংবা আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য শাহেদ চক্রের দৌরাত্ম শুধুমাত্র নগদ অর্থ কেলেঙ্কারির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এরা মানুষের জীবন নিয়েই ব্যবসা শুরু করে দিয়েছিলো করোনা পরীক্ষার নকল সনদ দিয়ে। তাদের এই ব্যবসার বলি হচ্ছে জনগণ। বর্তমান আমলে দুর্নীতি-অনিয়ম-চুরি-বাটপারী এখন যেভাবে নির্বিঘেœ অবাধ হয়েছে আওয়ামী শাসন ব্যাতিরেকে কখোনোই এমন ছিলনা। শাহেদরাই বর্তমান আওয়ামী শাসনের নমুনা। করোনার আঘাতে মানুষ চিকিৎসা বঞ্চিত। জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে কাতরাতে কাতরাতে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটছেন তারা। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। কতো মানুষ মারা যাচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যা নিয়েও জনমনে সন্দেহ রয়েছে। এই দুর্বিসহ সংকটের মধ্যেও চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়করার নামে শত-শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সরকারী দলের লোকেরা।
তিনি বলেন, প্রতিটি দুর্নীতির সঙ্গে সরকার ও প্রশাসনের যোগসূত্র ছিল প্রায় ওপেন সিক্রেট। শুধু তাই নয়, এইসব দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতাসীন দলের পদ-পদবীধারী নেতা হওয়ায় সখ্যতা দেখা গেছে প্রভাবশালীদের সঙ্গে। টকশো’তে এইসব দুর্নীতিবাজরা বিরোধীদলের মুন্ডুপাত করে আর সরকারের পক্ষে জিগির তুলে। এখানেই শেষ নয়, ভোট চুরি করে নয়, এই সরকারটি গঠিতও হয়েছে জনগণের ভোট ডাকাতি করে। সুতরাং, এই সরকার ‘চোর’ নয়। এই সরকার ‘ভোট ডাকাতির সরকার’। গত এক দশকের বেশি একটানা ক্ষমতায় থেকেও নিশিরাতের এই সরকারটির নিজেদের সাফল্যের কিছু নেই বলেই এখনো তাদেরকে অতীতের কাসুন্দি ঘেটে নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইতে হয়।
তিনি আরো বলেন, একটানা একযুগের বেশি ক্ষমতায় থাকার পর একটি সরকারের জন্য বর্তমান ব্যর্থতা ও অধ:পতনের এমন করুণ পরিণতি যে কতটা লজ্জার সেই বোধ এই সরকারের আছে বলেও কেউ মনে করেনা। সুতরাং, দেশে কারা ডাকাত, কারা ধোকাবাজ, কারা দুর্নীতিবাজ, কারা দুর্নীতিতে লিপ্ত, কোন সরকারের আমলে দুর্নীতিবাজদের উত্থান হয়েছে এটা দেশের মানুষ জানে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব নিজেই আক্ষেপ করে বলেছিলেন, তিনি পেয়েছেন ‘চোরের খনি’। দগত একদশকের বেশি সময় ধরে সেই ‘চোরের খনি’ এখন ‘ডাকাতের খনি’তে রূপান্তরিত হয়েছে। এটাই হলো আওয়ামী লীগ সরকারের সুমহান কীর্তি।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে- লক্ষ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী। ভারী বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সিলেট ও সুমানগঞ্জ জেলায় শত শত কিলোমিটার সড়ক বিপর্যস্ত হয়ে কয়েকশো কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর শহরেও এখন বিপজ্জনক অবস্থায়। এছাড়াও ভারতের গজলডোবায় সবকটি গেট খুলে দেয়ায় এবং বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল- কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধায় হু হু করে বন্যার পানি ঢুকে বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও উজানের পানিতে ফরিদপুরসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় অসংখ্য মানুষ এখন পানি বন্দী। কিন্তু বন্যাকবলিত এলাকায় সরকার সর্ম্পুনরুপে নির্বিকার। বন্যাউপদ্রুত মানুষের সাহায্যের জন্য সকারের কোন তৎপরতা নেই। এমনিতেই করোনার অভিঘাতে বিপর্যস্ত দেশ তার উপর ধেয়ে আসার বন্যার কবলে জনজীবন এখন চরম ভোগান্তির মধ্যে। অবিরাম বর্ষনে গরীব মানুষের ঘরবাড়ী তলিয়ে যাওয়ায় গৃহপালিত গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে মানুষ। আমরা অবিলম্বে বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষকে বাঁচাতে দেশবাসীকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি।
টিটু হায়দারকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নোয়াখালী জেলাধীন বেগমগঞ্জ থানার চন্দ্রগঞ্জ আলাইপুর ইউনিয়নে গুম হওয়া সাবেক ছাত্রদল নেতা মোঃ টিটু হায়দারকে এখনো আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনী তার পরিবারের কাছে ফেরত দেয়নি। সবাই জানে যে টিটু হায়দার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেই আছে। কিন্তু তারা এখনোপর্যন্ত টিটুকে হস্তান্তর করছে না। তার পরিবার গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে অপেক্ষা করছে। অবিলম্বে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য আমি জোর আহ্বান জানাচ্ছি।