তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল একসঙ্গে পরিশোধের নির্দেশ ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

ঢাকা: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৩ মাসের বিদ্যুৎ বিল একসাথে পরিশোধের নির্দেশ ও পরিশোধ না করলে পুনরায় বিলম্ব মাশুল ধার্য এবং বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সরকারি আল্টিমেটামকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সারাদেশ যখন স্থবির, মানুষের আয়-রোজগার যখন প্রায় বন্ধ, সাধারণ মানুষের পক্ষে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকাই যেখানে চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে , ঠিক সেই মুহূর্তে গ্রাহকদের এভাবে বাধ্য করা চরম অমানবিক । শুধু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধের বিষয়টিই নয়, ৩ মাসে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক ভুতুড়ে বিলের বিড়ম্বনাও আরেকটি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে অভিহিত করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ বিল দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে গ্রাহকদের সহযোগিতার স্বার্থে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের বিলম্ব মাশুল জুন পর্যন্ত মওকুফ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিল পরিশোধ করলেও কোন সমস্যা হবে না। তাই আর্থিক কষ্টে জর্জরিত সাধারণ মানুষ সরকারের আশ্বাসে আশাবাদী হয়ে বিল পরিশোধ করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার পূর্বেই গত ১০ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে ৩০ জুনের মধ্যে বিগত ৩ মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের আল্টিমেটাম দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ৩০ জুনের পর একদিন দেরি হলেও গ্রাহকদের বিলম্ব মাশুল গুণতে হবে।

মহামারির মধ্যে আয় রোজগারহীন অবস্থায় একসাথে ৩ মাসের বিল পরিশোধের এই আল্টিমেটামে রাজধানীসহ দেশের গ্রাহকরা চরম চাপে পড়ে যান। এরমধ্যে ভুতুড়েভাবে করা অতিরিক্ত বিলের বিড়ম্বনাতো রয়েছেই। বিশ্লেষকরা বলেন, এভাবে মানুষকে একসাথে বিল পরিশোধের আল্টিমেটাম তাদেরকেকে দেয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন। এক সাথে এত বিল নাগরিকদের উপর বোঝা আরো বাড়িয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে নাগরিক প্রতিনিধিরা দাবি তুলেছেন , মহামারি পরিস্থিতিতে মানুষের বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করে সরকারকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সময়সীমা আরো বাড়াতে হবে। বিলম্ব মাশুল সম্পূর্ণ মওকুফ করে আরো ৩ মাস পর প্রতিমাসের সাথে এক মাসের করে বিল যোগ করে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হোক। এতে এক সাথে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধের আল্টিমেটাম গ্রাহকদের উপর যে আর্থিক ও মানসিক চাপ তৈরি করেছে কিছুটা হলেও এ থেকে স্বস্তি মিলবে।

তবে এসব দাবি সরকার এখন পর্যন্ত আমলে না নিলেও ত্রুটিপূর্ণ ভুতুড়ে বিল সংশোধনের জন্য ১০ দিনের সময় দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে। এতে ৩০ জুনের পর বিল পরিশোধে আরো অন্তত ১০ দিন বাড়তি সময় পাচ্ছেন গ্রাহকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *