চ্যালেঞ্জ ও শঙ্কার মধ্যে রাজধানীতে বসছে ১৭টি পশুর হাট 

নিউজ দর্পণ, ঢাকা: ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর হাটকে ঘিরেও এক ধরনের উৎসবের আমেজ বিরাজ করত প্রতিবার। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই বসছে পশুর হাট। যেখানে বিরাজ করছে ভিন্ন এক পরিস্থিতি, সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যেই চলছে হাটের প্রস্তুতি। স্বাস্থ্য ও হাটের শর্তপূরণ- সবমিলিয়ে এবার সঠিকভাবে হাট পরিচালনা করাটাই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

জানা গেছে, এবার ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) এলাকার ১৭টি স্থানে বসবে কোরবানির পশুর হাট। এর মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় ৬টি পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে একটি স্থায়ী হাট এবং ৫টি অস্থায়ী। স্থায়ী হাটটি বসবে গাবতলীতে। অস্থায়ী হাটগুলো হলো- উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ ভবন পর্যন্ত খালি জায়গায়; কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গায়; ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গায়; ভাটারা (সাইদ নগর) পশুর হাট এবং উত্তরখান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গায়।

অন্যদিকে, ডিএসসিসি এলাকায় বসবে ১১টি হাট। উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা; হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজির মাঠ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা; সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা; আমুলিয়া মডেল টাউনের খালি জায়গা; রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা; লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ; কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা; আফতাব নগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই; এফ জি এইচ ও সেকশন-১ ও ২–এর খালি জায়গা; মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা; দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা এবং ধুপখোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গাতে হাটগুলো বসবে।

নিয়ম অনুযায়ী ঈদুল আজহার ৫ দিন আগে থেকেই হাটে পশু কেনা-বেচার জন্য আনা হয়। কিন্তু এবার রাজধানী ঢাকার সব অস্থায়ী হাটগুলোতে নির্ধারিত সময়ের আগেই আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি, হাটের শর্তপূরণসহ এবারের হাট সঠিকভাবে পরিচালনা করাই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে পশুর হাটের কারণে করোনা ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। এসব বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমাদের এবারের পরিকল্পনা হচ্ছে, যত্রতত্র যেন পশু বেচাকেনা না হয়। অপরিকল্পিতভাবে যেন পশুর হাট না বসে, যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা যেন না ফেলা হয়। এ বিষয়ে হাট ইজারাদারদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। দিন ঘনিয়ে এলে আমরা আরও যেসব পরিকল্পনা নিয়েছি, সেসব বাস্তবায়নে বিশেষ তাগিদ থাকবে।

অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে যারা হাট ইজারা নিয়েছেন তাদের জন্য কিছু শর্ত নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তবে শর্তগুলো মানাতে কর্তৃপক্ষের মনিটরিং টিম কতটা ভূমিকা পালন করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের গণসংক্রমণ এড়াতে প্রত্যেক ইজারা গ্রহীতাকে কোরবানি পশুর হাটে সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় ইজারা বাতিল করা হবে। হাট মনিটরিং করার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা হাটগুলো প্রতিদিন পরিদর্শন করবেন। এছাড়া প্রতিটি হাটে একটি করে মোবাইল কোর্ট থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য শর্ত মেনে চলছে কি না তা নিশ্চিত করতে একটি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।’

অন্যদিকে কোরবানি পশুর হাটে স্বাস্থ্য বিধি এবং অন্যান্য শর্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা মনিটরিংয়ের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা গেছে, কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমানকে। অন্য সদস্যরা হলেন- ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আফসার উদ্দিন খান; ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসমাইল মোল্লা; ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন রশীদ; ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসহাক মিয়া; ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জাকির হোসেন; ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নুর ইসলাম; ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন; ১০ নম্বর সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হামিদা আক্তার মিতা এবং ১৭ নম্বর সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা।

এছাড়া প্রতিটি হাটে একটি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *