গণঅভ্যূত্থানের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে বাংলাদেশ: রিজভী
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন বাংলাদেশের বিপজ্জনক অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি আদায়ে বাঁধভাঙ্গা আন্দোলনে স্ফুলিঙ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অনিবার্য গণঅভ্যূত্থানের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বৈরাচারীনী নিপীড়কের পতনের কাউন্টডাউনের মধ্যে আরেকটি একতরফা পাতানো ভূয়া নির্বাচনের অপচেষ্টা চলছে। মেরুদন্ডহীন পাপেট নির্বাচন কমিশন আওয়ামী নির্বাচনী তফসিল বাস্তবায়ন করতে মুখ লুকিয়ে জোরেসোরে মাঠে নেমেছে। আর নিশিরাতের সরকারের অবৈধ মন্ত্রী-এমপি, নেতা-কর্মী, আওয়ামীলীগ সমর্থক পুলিশ- র্যাাব- গোয়েন্দারা গোটা দেশে ভোটাধিকারের দাবীতে আন্দোলনরতদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে হায়েনার মতো। ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে গ্রাম গঞ্জ হাট বাজার জনপদ লোকালয় শহর-বন্দরে থাকা গণতন্ত্রকামীদের। আওয়ামী নিপীড়নে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা যেন মৃত্যু থেকে কয়েক মিনিট দূরে অবস্থান করছেন। বাড়ী ঘর, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হচ্ছে।
আজ রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হঠাৎ বিদেশ থেকে এসে গতকাল সাভারে জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে তার দাম্ভিকতাপূর্ন কন্ঠ শুনে দেশের মানুষ স্তম্ভিত-হতবাক হয়েছে। একই সাথে জনগণ অট্টহাসিও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আগামী ১০-১৫ বছরে বিএনপি বলে কোন দল বাংলাদেশে আর থাকবে না।” তার মানে এই সময়ে তারা বিএনপিকে ধ্বংস ও নিঃশেষ করে দিবেন! দেশে শুধুমাত্র একটাই রাজনৈতিক দল থাকবে। যেখানে ভিন্ন মতাদর্শের কেউ থাকতে পারবে না, কেউ স্বৈরাচারী সরকারের সমালোচনা করতে পারবে না। বাকশাল-২ স্থাপিত হবে। এই উপদেষ্টা সাহেবের মা নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার অনুগতরা দশকের পর দশক ধরে বিএনপিকে ধ্বংসের জন্য উঠে-পড়ে লেগে আছেন। ওয়ান ইলেভেনের বেআইনী সরকারও সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। বরং বিএনপি এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে তৃণমূল শক্তি। যতবার আঘাত এসেছে ততবার আরো শক্তিশালী হয়েছে। বিএনপি প্রতিবারই চক্রান্তের চোরাবালি থেকে জেগে ওঠে চতুর্দিকে আবার বিস্তার লাভ করেছে। বিএনপির রাজনীতি তো হচ্ছে এই দেশে মৃত্তিকা থেকে উৎসারিত ও মানুষের বুকের ভেতরে প্রথিত। উপদেষ্টা সাহেবদের সরকার বিএনপি এবং জিয়া পরিবারকে ধ্বংসের জন্য বহুমুখী চক্রান্ত করে ব্যর্থ। দলের চেয়ারপার্সন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের আশা ভরসার স্থল বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশী রায়ে বন্দী রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটির পর একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৫০ লক্ষ নেতা-কর্মীর নামে দেড় লক্ষাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের ঘরছাড়া করা হয়। যা বিশ্ব ইতিহাসে এক নজিরবিহীন রেকর্ড। গ্রেপ্তার, নির্যাতন, গুম, আয়নাঘরে বন্দী ও ক্রসফায়ার করেও বিএনপি নেতাকর্মীদের দমানো যায়নি। বিএনপিকে ভাঙার সরকারের কোনো অপচেষ্টাই সফল হয়নি। তাই শত শত কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন সংস্থা ও মাধ্যম দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কুৎসিত অপপ্রচার করেও লাভ হয়নি। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রেরণা এবং মুক্তিকামী মানুষের আশা-ভরসার স্থল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গোটা বাংলাদেশ আজ ঐক্যবদ্ধ। সুতরাং আগামী ১০-১৫ বছর কেন বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকাটি যতদিন থাকবে ততদিনে বিএনপি থাকবে এই দেশে ইনশাআল্লাহ! আমি শুধু সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেবকে বলবো-ইতিহাস পড়–ন। স্বৈরাচাররা যখন ক্ষমতার মসনদে বসে থাকে তখন অন্ধের মতো দাম্ভিকতা দেখায়। ফেরাউন পানিতে ডুবে যাওয়ার আগেরদিনও জানতোনা আগামীকাল তার শেষ দিন। এধরনের কথা আপনি পূর্বেওৈে নকবার বলেছেন। আপনার কথাগুলো এখন বাসি হয়ে গেছে। জনগনের দাবী মেনে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখুন আওয়ামীলীগের অবস্থান কি হয়।
তিনি বলেন, যশোরে প্রখ্যাত জননেতা মরহুম তরিকুল ইসলাম সাহেবের বাস ভবনে বর্বরোচিত ভয়াবহ বোমা হামলার মতো সারাদেশে নারকীয় তান্ডব চালাচ্ছে। দিশাহীন, উন্মাদ হয়ে পাইকারী গ্রেফতার, আর্ত চিৎকার-হুংকার, খুনের হুমকী দিয়ে ভীতিকর ভয়ানক পরিবেশ তৈরী করেছে। লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে, গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারার বিভৎস কাজ করেছে আগুন সন্ত্রাসের দল আওয়ামীলীগ। আর দেশের বাইরে বিএনপি’র বিরুদ্ধে নাশকতার অপবাদ দিয়ে প্রচার চালিয়েছে। পূনরায় সন্ত্রাসের অপবাদ দিয়ে ২০১৪-১৫’র ন্যায় আর বিদেশে মার্কেটিং করতে পারছেনা। কারণ সারা দুনিয়া টের পেয়েছে বিএনপি’র নামে সন্তাসের অপবাদ মূলত একতরফা নির্বাচনের কৌশল। এবারও অর্ন্তঘাতমূলক নাশকতার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই আওয়ামী দুর্বৃত্ত অক্ষ শক্তির পক্ষ নিয়েছে জনগনের কষ্টার্জিত টাকায় বেতনভোগী আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর আওয়ামী দলীয় পোষ্য দলদাস কর্মকর্তারা। তাদের বিরোধীদল দলন-দমন-নিঃশেষ করার ভয়ংকর জুলুম, নিপীড়ন, গ্রেফতার তান্ডব সমস্তসীমা লংঘন করেছে। কিন্তু তাদের জানা উচিত এই নিশুতি সরকারই শেষ সরকার নয়। কিছুদিন পরেই হবে জনগনের সরকার। তখন এই আজ্ঞাবাহী দলদাস পোশাকী সন্ত্রাসীদের পরিণতি কি হবে জনগন সিদ্ধান্ত নিবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবীতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ হাজার-হাজার নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ চলমান আন্দোলনের একদফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক একতরফা নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিলের প্রতিবাদে শুরু হওয়া ৪৮ ঘন্টার শান্তিপূর্ণ হরতালের প্রথমদিন সারাদেশে স্বত:স্ফুর্তভাবে সফল করায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমি সারাদেশের নেতাকর্মী ও জনগণকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে আরো জোরদার ও তীব্রতর করার মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিত করুন।