খুমেক হাসপাতালেও বিক্রি হচ্ছে করোনা পজিটিভ -নেগেটিভ ভুয়া সাটিফিকেট

নিউজ দর্পণ, খুলনা প্রতিনিধ: রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথকেয়ারের পর খুলনা মেডিকেল কলেজে করোনা পজিটিভ -নেগেটিভ ভুয়া সাটিফিকেট ‘বিক্রির’ খবর পাওয়া গেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ‘ভুয়া সাটিফিকেট’ দেশ- বিদেশে যখন আলোচনা-সমালেচনার ঝড় বইছে,  তখনই  জানা গেলো খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে গড়ে উঠেছে একটি জালিয়াতির শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা সুযোগ বুঝে করোনার পজিটিভ -নেগেটিভ ভুয়া সাটিফিকেট বিক্রি করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করছে।

জানা যায়, সাধারণ চিকিৎসার জন্যও এখন হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি হতে গেলেই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট চায়। এই সার্টিফিকেট ছাড়া রোগী ভর্তি তো দূরের কথা অনেক সময় চিকিৎসাই দিতে চায় না চিকিৎসকরা। এর বাইরে কর্মস্থল, পোশাক কারখানা এবং ভ্রমণের জন্য করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়েছে। কিন্তু সাধারণভাবে করোনার টেস্ট এখানে সময় সাপেক্ষ এবং উপসর্গ ছাড়া পরীক্ষা করানো কঠিন। এই সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র।

তারা করোনা সার্টিফিকেটের স্টাইল জাল করে ভুয়া সার্টিফিকেট দিচ্ছে। তারা শুধু নেগেটিভ নয়, পজিটিভ সার্টিফিকেটও দিচ্ছে।পজিটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে কেউ কেউ আবার অফিসে না গিয়ে বাসায় ছুটি কাটানোসহ নানা সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে খুমেক হাসপাতালের লিফটম্যান পদে কর্মরত নওশাদ নামে ব্যক্তির মাধ্যমে করোনা নেগেটিভ সনদ দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। তবে এই সিন্ডিকেটের রাঘব বোয়ালরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

গত ১২ জুলাই নওশাদ মহানগরীর ২৬ বিকে রায় ক্রস রোডে করোনা পজিটিভ তানিয়া নামে এক গৃহবধূকে নেগেটিভ সনদপত্র দেন। ওই নারীর নেগেটিভ রিপোর্টে স্যাম্পল আইডি নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে কেএমসি-২০০২৩ এবং স্যাম্পল গ্রহণের তারিখ ৭ জুলাই, টেস্টের তারিখ ১২ জুলাই উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া মহানগরীর পশ্চিম বানিয়াখামার ঠিকানায় শামীম আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ৮ জুলাই খুমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্নারের স্যাম্পল টেস্ট পজিটিভ রিপোর্ট এলেও নওশাদ একদিন আগের তারিখে আইডি নম্বর কেএমসি-১৯০৩১ দেখিয়ে পজিটিভ রিপোর্টকে নেগেটিভ উল্লেখ করেছে।

শামীম আহমেদ জানান, নওশাদ তার পরিচিত ছোট ভাই। তার মাধ্যমেই নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়েছেন। এটি নকল রিপোর্ট তা-কি আপনার জানা আছে ? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যবসার কাজে চুকনগরে আছি। খুলনায় গিয়ে খোঁজ নেব।

গৃহবধূ তানিয়া জানান, হাসপাতালেই নওশাদের সাথে তার পরিচয় হয়, সেই পরিচয়ের মাধ্যমেই তার কাছ থেকে তিনি রিপোর্ট পেয়েছেন। সঠিক না নকল রিপোর্ট তা তার জানা নেই। তবে নওশাদ এসব অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করেন।

এদিকে, খুমেক হাসপাতাল আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও আইসোলেশন ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মিজানুর রহমান জানান, কেএমসি-১৯০৩১ এবং কেএমসি-২০০২৩ স্যাম্পল আইডি নম্বর দুটোই ভুয়া। এই নম্বরে কোনো রিপোর্ট নেই। তিনি অসাধু চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার পুনরাবৃত্তি ঘটছে খুলনায়। তাও আবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও দুর্বলতা রয়েছে। যে কারণে অনিয়ম-দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও অনৈতিক কাজ হচ্ছে। তিনি এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি করছি।

খুমেক হাসপাতালের পরিচালক রেজা সেকেন্দার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অনুসন্ধানে সত্যতা পেলে অবশ্যই এই দুষ্টচক্রকে পুলিশে সোর্পদ করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *