ঈদে বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে লঞ্চযাত্রীদের

নিউজ দর্পণ, বরিশাল: এবার ঈদুল আজহায় লঞ্চযাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে। ঈদযাত্রীদের ভাড়া ২০ ভাগ বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ভাড়া ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটের লঞ্চসহ অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। যদিও ভাড়া বাড়ার বিষয়টি অস্বীকার করে লঞ্চ মালিকরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে সরকারি রেট কার্যকর করা হচ্ছে।

প্রতিবার ঈদের এক মাস আগেই শুরু হয় ঈদ প্রস্তুতি। বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের চলাচলকারী লঞ্চগুলোয় রঙ করা, ঘষামাজার কাজই জানান দেয় ঈদের আগমনী বার্তা। এমনকি ঈদ এলেই নতুন নতুন বিলাসবহুল লঞ্চ নৌবহরে যুক্ত করার উদ্যোগও দেখা যায়। তবে এবারের কোরবানির ঈদের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। লঞ্চগুলোয় নেই ঈদের পূর্ব প্রস্তুতি। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাব ঈদের সব প্রস্তুতি ভন্ডুল করে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই প্রথম কোনো ঈদে বিশেষ সার্ভিস অর্থাৎ ডাবল ট্রিপ ছাড়াই যাত্রী পরিবহন করবে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের লঞ্চগুলো। তাও আবার সব লঞ্চ ঈদ সার্ভিসে যুক্ত হবে কিনা সে নিয়েও সন্দিহান মালিকরা।

লঞ্চ মালিকরা জানান, করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে দুই মাসের অধিক সময় মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় মালিক ও শ্রমিকদের। প্রতি রোজার ঈদে যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে সারা বছরের লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখার আশা করেন তারা। কিন্তু করোনার প্রভাবে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় লাভের পরিবর্তে কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।

তারা বলেন, রোজার ঈদে যে ক্ষতি হয়েছে তা কোরবানির ঈদে কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে ঈদের ১০ দিন আগেও চলাচলরত লঞ্চগুলোয় যাত্রীদের উপস্থিতি সেই প্রস্তুতিকে হতাশায় ঠেলে দিয়েছে। তাই কোরবানির ঈদেও লোকসান ধরে নিয়েছেন অনেক লঞ্চ মালিক।

জানা গেছে, সারা বছর রাজধানী থেকে বরিশালগামী লঞ্চগুলোর ডেকের ভাড়া ২০০ টাকা নেয়া হয়। আর সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া নেয়া হয় ৯০০ এবং ডাবল কেবিন ১ হাজার ৮০০ টাকা। ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নেয়া হয় প্রকারভেদে ৩-৫ হাজার টাকা। কিন্তু ঈদ এলেই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অজুহাত তুলে মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। সে অনুযায়ী এবারো সরকার নির্ধারিত রেটের অজুহাতে ঈদ সার্ভিসে ডেকের ভাড়া ২৫০ টাকা, সিঙ্গেল (এসি/নন-এসি) ১ হাজার ১০০ ও ডাবল (এসি/নন-এসি) ২ হাজার ২০০ টাকা এবং ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬-৭ হাজার টাকা।

ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা থেকে বরিশালে আসার অপেক্ষায় থাকা চাকরিজীবী আশরাফুজ্জামান নামে এক লঞ্চযাত্রী জানান, লঞ্চ মালিকরা দুই ধরনের রেট দিয়ে যাত্রীদের হয়রানি করছেন। প্রতি বছরই তারা এভাবে প্রতারণা করেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান ও সুন্দরবন লঞ্চ মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নিই না। তবে স্বাভাবিক সময়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নিয়ে থাকি। ঈদের সময় সদরঘাট বা বরিশাল লঞ্চঘাটের এক প্রান্ত থেকে যাত্রী ছাড়াই ফিরতে হয়। তাই এ সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে থাকি।

বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ঈদে ভাড়া বেশি নেয়া হয় না। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নেয়া হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া থেকে কম নিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে বেশি নিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *