আইনজীবীদের জীবন জীবিকা অনিশ্চয়তায়: ঢাকা ছাড়ছেন মুহুরিরা
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: করোনাভাইরাস একটি দীর্ঘ মেয়াদি বৈশ্বিক সমস্যা। কোভিড-১৯ কতদিন স্থায়ী হবে তা কেউই জানে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবজাতিকে দীর্ঘদিন ধরে করোনা মোকাবিলা করেই টিকে থাকতে হবে। প্রয়োজন সচেতনতা ও সাবধানতা। জীবনতো আর থেমে থাকতে পারে না এবং জীবিকা ছাড়া জীবন অচল।
করোনাভাইরাসের মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবিকার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে অফিস, দোকানপাট, মিল, কল-কারখানা, বাস, লঞ্চ খুলে দেয়া হয়েছে। তবে এখনো আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। সীমিত আকারে ভার্চুয়ালি আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন প্রায় ৬০ হাজার আইনজীবী।
গত ১৩ মার্চ থেকে সুপ্রিম কোর্ট এবং ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিগত তিন মাস আইনজীবীরা নিয়মিত কোর্ট করতে না পারায় অধিকাংশ আইনজীবী চরম অর্থ সংকটে পড়েছেন। বিচারপ্রার্থী জনগণের চাপ সামাল দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সরকার ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থা চালু করেছে। বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ আইনজীবীর প্রশিক্ষণ না থাকায় ও ইন্টারনেট সুবিধার অভাবে ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা করতে পারছেন না। অধিকাংশ আইনজীবীর সঞ্চিত টাকাও নেই।
জানা গেছে, তিন মাস ধরে আর্থিক সংকটে ঢাকায় টিকতে না পেরে আইনজীবী সহকারীদের অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। লম্বা সময় আয়-রোজগারের অনিশ্চয়তায় এরই মধ্যে ভিন্ন পেশায় ঝুঁকছেন কেউ কেউ। প্রতিষ্ঠিত ও প্রথিতযশা আইনজীবী কিংবা চেম্বারের সহকারী ছাড়া অন্যদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। পেশার আইনি স্বীকৃতি পেতে ‘আইনজীবী সহকারী কাউন্সিল (ল ক্লার্ক) আইন’ পাসের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই তারা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
গত মার্চ মাস থেকে নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আইনজীবীদের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। আর নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় মানুষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করেন আইনজীবীরা। তাই অন্যান্য সেক্টরের মতো অবিলম্বে নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার দাবি আইনজীবীদের।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সহকারী সমিতির সভাপতি এ বি এম গোলাম রহমান মন্নান বলেন, ‘উচ্চ আদালতে ২ হাজার ২০০ তালিকাভুক্ত আইনজীবী সহকারীসহ আরও অনেকেই কাজ করেন। করোনার এই পরিস্থিতিতে তাদের ৯০ ভাগ অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে আছেন। খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের পরিবারগুলো। কারও চিকিৎসার টাকা নেই, কেউ বাসাভাড়া দিতে পারছেন না। আবার কেউ অর্থাভাবে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন।’
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, লকডাউন পরবর্তী সময়ে জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে অফিস, দোকানপাট, মিল, কল-কারখানা, বাস, লঞ্চ খুলে দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি অল্প কয়েকজন বিচারপতিকে নিয়ে ভার্চুয়াল আদালত চালু করেছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো কাজ হয়েছে এবং এজন্য প্রধান বিচারপতি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিকে স্থায়ী পদ্ধতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাধারণ আইনজীবী ও বার (আইনজীবী সমিতি) সংশ্লিষ্ট সব আইনজীবীরা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
এ বিষয়ে সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা বলেন, করোনায় সবকিছুই তো খোলা, অফিস, মার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে, চলছে বাস। করোনার মধ্যে মানুষ সব কিছুই করছে। কোনো পেশার লোক বসে নেই, পুলিশ বাহিনী, আর্মি, বিডিয়ার, ডাক্তার সবাই কাজ করছে। শুধু আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। নিয়মিত আদালত খোলা না থাকায় মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। এ কারণে আমরা অবিলম্বে আদালত খুলে দেয়ার কথা বলছি।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের সব আদালত অবিলম্বে নিয়মিতভাবে খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা বারের আইনজীবীরা।
বেশ কিছুদিন থেকে সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে।
সংগঠনের পক্ষে অবিলম্বে আদালত খুলে দেয়াসহ পাঁচটি দাবি জানানো হয়েছে। এগুলো হলো :
এক. অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের সব আদালত নিয়মিতভাবে খুলে দিতে হবে।
দুই. আইন অঙ্গনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তিন. ২০২০ ও ২০২১ সালের সুপ্রিম কোর্ট ও নি¤œ আদালতের সব ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল করতে হবে।
চার. দেশের সব আদালতে চার মাস যাবৎ নিয়মিত কোর্ট বন্ধ থাকায় ৬০ হাজার আইনজীবীর প্রত্যেককে সরকারি কোষাগার থেকে আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে ১ লাখ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
পাঁচ. আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামানতবিহীন ও সুদমুক্ত ৫ লাখ টাকা ৫ বছর মেয়াদি ব্যক্তিগত ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করতে হবে।