অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এরাতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৩৩০ বন্দীকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত 

নিউজ দর্পণ ডেস্ক: খুনের মামলায় ২০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সাজা খেটেছেন এমন ৩৩০ জন বন্দীকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি এসব বন্দীর তালিকা চূড়ান্ত করেছে। জেলা কারাগারের সুপারিশের ভিত্তিতে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে।

কারা অধিদপ্তর এসব বন্দীর মুক্তির বিষয়ে সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, কয়েদিরা দীর্ঘদিন ৫৬৯ ধারায় মুক্তি না পাওয়ায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। এ ক্ষোভ থেকে যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। অতীতেও অনুরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সংঘটনের ইতিহাস রয়েছে। সুষ্ঠু প্রশাসনের স্বার্থে এই বন্দীদের দ্রুত মুক্তির জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে কারা অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী এই বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে। এরা সবাই ২০ বছরের ওপরে সাজা খেটেছেন। বিতর্কিত কারও জন্য এ ধারা প্রযোজ্য হবে না। ধর্ষণ বা নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন এমন কাউকে মুক্তি দেওয়া হবে না। মন্ত্রী বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পেলে তাঁরা মন্ত্রিসভা বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাবজ্জীবন তো হয় খুনের মামলার আসামিদেরই। তাই বলা যায়, যাঁদের মুক্তি দেওয়া হবে, সবাই খুনের মামলার আসামি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুসারে কোনো বন্দী তাঁর সাজার মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ খাটলে, সেই বন্দীর বিরুদ্ধে যদি অন্য কোনো অভিযোগ না থাকে, তবে সরকার চাইলে বিশেষ সুবিধায় তাঁকে মুক্তি দিতে পারে। এ জন্য রাষ্ট্রপতির কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। এই সুবিধায় মুক্তি দেওয়ার জন্য দেশের সব কারাগার থেকে ১ হাজার ৪১২ বন্দীর তালিকা তৈরি করা হয়। বন্দীদের বয়স, সাজার ধরন, মেয়াদ, শারীরিক অবস্থা এবং কারাগারে তাঁরা কোনো অপরাধ করেছেন কি না, তা বিবেচনায় নিয়ে প্রথমে ৪৫৫ জনের নাম চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়।এরপর গোয়েন্দাদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের পর ৩৩০ জনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। সবশেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে এক মাসের মধ্যে এসব বন্দী মুক্তি পাবেন।

আইন ‌ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, যাঁরা অসুস্থ কিংবা ভালো ব্যবহার বা ভালো কাজ করেছেন, এমন বন্দীদেরই এ সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। শীর্ষ সন্ত্রাসী বা দুর্ধর্ষ ডাকাতেরা এ সুবিধা পাবেন না। এঁরা প্রত্যেকেই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। এর আগে ২০১০ সালে দীর্ঘ কারাবন্দী বৃদ্ধ, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ—এই পাঁচটি শ্রেণির এক হাজার বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ২০ বছর সাজা খাটার পর কারাবিধির ৫৬৯ ধারায় অসুস্থ ও অচল বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। আগেও দেওয়া হয়েছে। তবে এখন যেহেতু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি সামনে আসছে, তাই গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বন্দী মুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, এর আগে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ২ হাজার ৮৮৪ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *