বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি: টাকা ছাড়া মেলে না গেজেট-সম্মানি
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশ। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা, তাদের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি মেলেনি আজও। এখনো কেউ স্বীকৃতির জন্য, কেউ স্বীকৃতি পেলেও ভাতার জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। তাদের হাহাকার শোনার কেউ নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গেলে হয় বিরূপ অভিজ্ঞতা। অথচ যারা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কাজ করেন, তাদের সব হয়ে যায় অনায়াসে। এমনকি অনিয়ম-দুর্নীতির জেরে ফাঁকগলে কেউ মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও পেয়ে যান স্বীকৃতি-ভাতা!
সাম্প্রতিক গেজেটে ভাতা পান না, উপজেলায় যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ পেয়েছে এবং সুপারিশ পাননি- এমন তিন ক্যাটাগরির তিনজন মুক্তিযোদ্ধার আবেদন নিয়ে অনুসন্ধান করেছে জাগো নিউজ। উঠে এসেছে অনিয়মের মহাযজ্ঞ। উপজেলা থেকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুক)-সব জায়গায় টাকা ছাড়া নড়ে না ফাইল। টাকা না দিলে যৌক্তিক আবেদনেও সাড়া মেলে না। বাদ দিয়ে দেওয়া হয় বা ফাইলবন্দি পড়ে থাকে বছরের পর বছর।
টাকার বিনিময়ে সেবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীও। তবে তিনি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও ভাতা নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার জন্য দুঃখপ্রকাশও করেছেন তিনি। বিশিষ্টজনরা বলছেন, অভিযোগগুলো যাতে ভালোভাবে বিচার হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। তবে এই বিষয়টা বন্ধ হওয়া উচিত। একবারেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত। পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে তালিকা হয়নি।
শহীদের স্মরণে রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ, তবু পরিবারের সদস্যদের সম্মানি পেতে হয়রানি
শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে বরুড়া উপজেলা পয়ালগাছা ইউনিয়নের বটতলী এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। তিনিসহ পাঁচ শহীদের স্মরণে তাদের সমাধিস্থল বটতলীতে স্মৃতিস্তম্ভ করেছে সরকার। সেখানে পাঁচ শহীদের এক নম্বরে তার নাম।
মুক্তিযোদ্ধার গেজেটেও তার নাম আছে। আছে লাল মুক্তিবার্তা ও বেসামরিক গেজেটেও। এমনকি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি বাস্তবায়ন কমিটি ৫ নভেম্বর ২০২২ তারিখে তার পরিবারের অনুকূলে ভাতা দিতে সুপারিশও করেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তার ‘বেসামরিক গেজেট নম্বর- ১২৪৯ জামুকার সুপারিশকৃত নয় জানিয়ে তার অনুকূলে এ মুহূর্তে সম্মানি ভাতা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই’ বলে ১২ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে উপজেলাকে জানায়।
শহীদের নাতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা নিয়ে নানার সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তারকে নিয়ে দফায় দফায় জামুকা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এমনকি মন্ত্রীর কাছে গিয়েও সমাধান পাইনি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যের গানম্যান মানিক মিয়া এ কাজটি করে দিতে প্রথমে চার লাখ, পরে তিন লাখ টাকা দাবি করেন।’
এ নিয়ে মানিক মিয়ার সঙ্গে কথা বললে তিনি এই প্রতিবেদককেও ফাইল নিয়ে দেখা করতে বলেন। এছাড়া একাধিক মাধ্যমে ওই গানম্যানের অর্থের মাধ্যমে কাজ করে দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। একই বিষয়ে ২৪ মার্চ ২০২৪ তারিখে জামুকায় গেলে মহাপরিচালকের দপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর (ব্যক্তিগত সহকারীর দায়িত্বে) হাফিজ আহম্মদ বলেন, ‘ঈদের পরে আসেন, দেখবো।’ একই সঙ্গে উপজেলাকে বেসামরিক গেজেটের পাশাপাশি লাল মুক্তি বার্তার নম্বর উল্লেখ করে ফের সম্মানির জন্য সুপারিশ করতে বলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন। ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। তার প্রমাণস্বরূপ আছে ওসমানী সনদ। মুক্তিবার্তা সবুজ বইয়ে আছে তার নামও। নম্বর ০২০৪০৪০৪৪৪। সহযোদ্ধারা উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সামনে এসে সাক্ষ্যও দিয়েছেন। কিন্তু কমিটির সভাপতি তিন লাখ টাকা দাবি করেন, তা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় সুপারিশে তার নাম দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তার ছেলে ছায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘কমিটির সভাপতি ছিলেন তৎকালীন এমপি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন। তার পিএ আবির ফোন করে আমার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। এবং আমাকে তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রসমাজে যোগ দিতে বলেন। আমি বলেছি, ছাত্রলীগের নেতা হয়ে আমি ছাত্রসমাজ করবো? আর টাকাও দেওয়া সম্ভব নয়। শুনেছি সুপারিশে যাদের নাম দিয়েছেন, তাদের কাছ থেকেও ২/৩ লাখ করে টাকা নিয়েছেন এমপি।’
উপজেলায় সুপারিশবঞ্চিত হয়ে আপিল করেন আমির হোসেনের ছেলে ছায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আপিলে সাক্ষী দিতে বাবার সহযোদ্ধারাই টাকা দাবি করেন। তারা বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার রক্ত এখন মুক্তিযোদ্ধারা খায়।’ তাদের দাবি করা টাকা দিয়ে সাক্ষ্য নিয়ে আপিল করছি। তখনও জামুকা থেকে এক কর্মকর্তা দুই লাখ টাকার মধ্যে কাজটি করে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু আমি বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি টাকা দিয়ে নিতে রাজি হইনি। যার কারণে আপিলের আট বছরেও কোনো সাড়া পাইনি। অথচ আমার জানামতে ৭/৮ জন টাকা দিয়ে করে নিয়েছে।’
বিষয়টি অনুসন্ধানে একাধিকবার জামুকায় গিয়ে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বেরিয়ে আসে। জানা যায়, টাকা ছাড়া মেলে না কোনো সেবা। দেওয়া হয় না তথ্যও।
গত ২০ মার্চ বিষয়টি নিয়ে জামুকার মহাপরিচালকের কাছে গেলে তিনি এ বিষয়ে এখন কথা বলবেন না বলে প্রথমেই প্রতিবেদককে ফেরত পাঠান তার সহকারী। পরে পিয়নের মাধ্যমে ভিজিটিং কার্ড দিয়ে মহাপরিচালকের কাছে যেতে পারলেও তিনি বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি উল্টো জানতে চান, এসব তথ্য কি ডিজির কাছে থাকে? পিয়নকে দিয়ে নয়ন দেবনাথ নামের সার্টিফিকেট সহকারীর কাছে পাঠান। তিনি আরও দুই কাঠি সরেস। বাইরে নোটিশ দেখে নিতে বলে বিদায় করতে উদ্যত হন। ডিজির রেফারেন্সেও তিনি কথা বলতে নারাজ। বলেন, এসব কাজ বন্ধ। এগুলো কথা বলে বিরক্ত করবেন না।
আপিল শুনানি কবে নাগাদ শুরু হবে, বা এটি শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে কি না অন্তত এ তথ্যটা দেওয়া যায় কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপিলের আবেদন গ্রহণ বন্ধ আছে। এমনকি আপিল শুনানিও হচ্ছে না। মন্ত্রী শুনানির অনুমতি দিলে ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তারিখ দিলে শুনানির জন্য ডাকা হবে। এখন যান।’
সেখান থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিনের কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘আপিলের কিছু শুনানি হয়েছে। কিছু হয়নি। আপনাদের বরুড়া হয়েছে কি না, খবর নেন। তবে এখন শুনানি বন্ধ আছে। সামনে শুনানি হলে ডাকা হবে।’
কর্মকর্তাদের এমন আচরণের পেছনে রহস্য খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, আপিল শুনানি, গেজেট প্রকাশ, ভাতা প্রাপ্তি এসব তথ্য মেলে টাকা দিলে। চুক্তিতে পুরো কাজ করেন তারা। এর বাইরে কাউকে তথ্য দিতেও অপারগতা প্রকাশ করেন। টাকা ছাড়া মুখ নাড়াতেও নারাজ তারা। তাদের কাছে সবাই সমান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, টাকা না দিয়ে পদে পদে আমির হোসেনের স্বীকৃতি পিছিয়ে গেলেও তার এলাকার আরও দুজন টাকার শক্তিতে এগিয়ে গেছেন। আনোয়ারুল হক ও আব্দুল মান্নান নামে দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা উপজেলার যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশবঞ্চিত হয়ে আপিল করেছেন। ডিজিসহ কর্মকর্তারা অফিসিয়ালি আপিল শুনানি হয়নি দাবি করলেও তাদের কাজ হয়ে গেছে।
তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তাকে জনপ্রতি সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে গেজেট করিয়ে নিয়েছেন। সনদও পেয়েছেন। এমনকি তারা এখন ভাতাও পাচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে আরও ৬-৭ জনের কাজ হয়েছে টাকার বিনিময়ে। আমির হোসেনের ছেলে ছায়েদুর রহমানকেও ওই লাইনে কাজ করতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিবেশী ও বাবার সহযোদ্ধা সেসব মুক্তিযোদ্ধা। আট বছর অপেক্ষা করে নিরূপায় হয়ে সে লাইনে যোগাযোগ করলে এখন তার কাছে চার লাখ টাকা দাবি করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।
অভিযুক্ত সেই ব্যক্তির সঙ্গে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বললে তিনি স্বীকার করেন, এগুলো আগে হতো। এখন বন্ধ আছে। যোগাযোগ রাখলে হবে।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ পেয়েও স্বীকৃতি পাননি অনেকে। এর মধ্যে একজন তাজুল ইসলাম খোদ উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি এবং তৎকালীন এমপির ভাই। জনশ্রুতি আছে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তবে, মো. আব্দুল হাকিম নামে একজন উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতির অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নিলেও তার স্বীকৃতি মেলেনি। তার পক্ষে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি সুপারিশও করেছে। তার ছেলে শরীফের দাবি, এ নিয়ে কোনো আপডেট আমরা পাইনি। কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে কেউ বলে না। হলে হয়ে যাক, না হলে কেন হবে না জানিয়ে দিক। কিন্তু কোনো তথ্যই তো পাচ্ছি না।
এসব বিষয়ে বরুড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার আবুল বাসার বলেন, ‘গ্রামগঞ্জে এমন বহু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রয়ে গেছে, যারা স্বীকৃতি পায়নি। তাদের দাম নেই। দাম আছে যারা ৫/৭ লাখ টাকা দিতে পারছে। আমাদের উপজেলা জেলা পর্যায়ে কিছু নেই। সব করে জামুকা। জামুকার নিজস্ব সংকেত (টাকার) আছে। লাইন আছে। সংকেত মতো কথা বললে বা সে লাইন মতো গেলে কাজ হয়। অন্যথায় আপনার সঙ্গে কথাও বলবে না তারা। আমার উপজেলার ১৭/১৮ জন সেই লাইন মতো কাজ করে নিয়ে আসছে। আরও লাইনে আছে। হয়ত রমজানের পরে হয়ে যাবে। কিন্তু যারা ওই টাকার লাইনে না যাবে, তাদেরটা হবে না, হয় না। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের সম্মানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। মন্ত্রণালয়ে পর্যন্ত যাওয়া হয়েছে এটা নিয়ে। সমস্যা হলো- শহীদের তালিকা হয়নি। তারা শহীদ ভাতাও পায় না। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে, কাজ হয়নি। মন্ত্রীও জানে। তিনি বলছেন, এখন আর সময় নেই।’
উপজেলা পর্যায়ে যাচাই বাছাইয়ে এবং জামুকায় টাকা লেনদেনে কাজ হয়েছে, এমনটা স্বীকার করে বরুড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার আবুল বাসার এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধে গেছি। জানি, যুদ্ধের যারা গেছে তারা মুক্তিযোদ্ধা। অথচ জামুকা এখন মুক্তিযোদ্ধা বানায়। জামুকায় যারা গেছে, তারা বলতে পারে মুক্তিযোদ্ধা কেমনে হয়! যারা হতে পারে নাই। তারা জ্যাক (টাকার দেওয়ার লাইন) করতে পারে নাই।
এসব বিষয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম রাহেল বলেন, ‘ক’ তালিকার শুনানি চলছে। বাকিটা শুনানি শুরু হয়নি। তদবিরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী আমাদের কাছে কিছু পাঠালে আমরা স্পেশাল কমিটিতে দেই। কখনো মঞ্জুর হয় বা বাতিল হয়। অসাধু প্রক্রিয়ায় গেজেট করে নেওয়ার বিষয়ে জামুকা ডিজি বলেন, ‘এমন বিষয়ে আমার জানা নেই। এখানে কোনো স্টাফ চাইলে স্বীকৃতি দিতে পারবে না। মিটিংয়ে অনুমোদন হতে হবে। যা করেন, সদস্যরা করেন। উপজেলার সুপারিশেরগুলো হচ্ছে। এর বাইরে এখনো হয়নি।’
বরুড়া উপজলার শুনানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি চট্টগ্রাম বিভাগে। ওই বিভাগের দায়িত্বে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাহেব। উনি তো বয়স্ক এবং অসুস্থ। তেমন সময় দিতে পারেন না। দেখি উনি সময় দিলে করে দেবো।’
এ বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, ‘এখন যেসব অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এগুলোর বিষয়ে উত্তর দেবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বা জামুকা। আমরা বাইরে থেকে মনে করি, এগুলোর নিরসন হওয়া দরকার। এতদিন ধরে যাদের দেওয়া হচ্ছে তারা মুক্তিযোদ্ধা, আবার আরেক সরকার আসলে অন্যরা মুক্তিযোদ্ধা হবে। তখন তো অনেকে বেঁচেও থাকবে না। এই বিষয়টা বন্ধ হওয়া উচিত। একবারেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত। অভিযোগগুলো যাতে ভালোভাবে বিচার হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে তালিকা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হওয়ার জন্য যুদ্ধে গেছেন। তারা কিন্তু সম্মানি ভাতা বা উপাধির চিন্তা করেননি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করেছি, সবই দিচ্ছি। সেটা নিয়ে আমাদের কারও কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছয়বার তালিকা হবে কেন? তার মানে- যদি সুযোগ-সুবিধার বিষয় না থাকলে ছয়বার তালিকা হতো না। ছয়বার তালিকা হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানের বিষয় না। দ্বিতীয় হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাটা কী হবে? আমরা যদি জনযুদ্ধ বলি। তাহলে তো যারা দেশের অভ্যন্তরে কাজ করেছে, তাদেরকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। বিদেশে একজন নিরাপদে ছিল, তিনিও বাংলাদেশের জন্য কাজ করেছেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা হলেন। দেশের অভ্যন্তরে অনেক বন্ধু শহীদ হলেন, তাদের কী হবে? ফলে দুটো বিষয় কিন্তু পরস্পরবিরোধী। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা যদি হতো, যারা যুদ্ধ করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা হবে। তাহলে ঠিকাছে, এটা চলত। কিন্তু যখন জনযুদ্ধ বলা হবে, তাহলে সবাইকে সংযুক্ত করতে হবে। সেটা করা হয়নি।’
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক কাছে দাবি করেন, ‘সম্মানির জন্য কেউ অপেক্ষমাণ নেই। শুধু আপিলে অপেক্ষমাণ আছে। এটাতে একটু সময় লাগে। এটা ১৫০ বা ২০০ হবে। শুনানি রমজান মাস বলে বন্ধ রাখছি। তবে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এগুলো আরও আগে হলে আমরা খুশি হতাম। এটি সবার প্রত্যাশা। আমরা দুঃখিত বিলম্বের জন্য। গেজেট হলেও সম্মানি না দেওয়া বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, এতে আমাদেরও সমস্যা থাকতে পারে। আবার তারও সমস্যা থাকতে পারে। ফাইল না দেখে বলতে পারবো না।
জামুকা বলছে আপিল শুনানি হয়নি অথচ টাকা দিয়ে গেজেট করিয়ে নেওয়ারও তথ্য আছে— এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ক্যাটাগরি অনুযায়ী সেটা হওয়ার কথা নয়। তবে দুর্নীতি দুনিয়ার সব জায়গায় আছে এখানেও থাকতে পারে। দয়া করে, কাগজপত্র নিয়ে আসেন। অন্যায়ভাবে যদি কেউ এটা করে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’