প্রধান সংবাদলিড

সিলেটে বন্যা অব্যাহত: ত্রাণের অপেক্ষায় পানিবন্দি লাখো মানুষ

নিউজ দর্পণ, সিলেট: সিলেটে বন্যা কবলিত এলাকার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি। বহু বাড়িঘর রাস্তাঘাট এখনো পানিতে ডুবে আছে। ত্রাণের অপেক্ষায় পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ। জলমগ্ন দুতলা-তিনতলা আশ্রয়কেন্দ্র ও বাড়িতে গাদাগাদি করে এখনও অনেক মানুষ বসবাস করছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ ও গবাদিপশুসহ একসাথে বসবাস করছেন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও আরও ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পানিবন্দি মানুষেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশ্রয় শিবিরে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট রয়েছে। পানি থাকার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানি কমতে শুরু করলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। সিলেটের মহানগর ও উপজেলার ১৩০টি ইউনিয়ন, পৌরসভার ১ হাজার ৬০২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় ১ হাজার ৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২১ হাজার ৭৮৬জন মানুষ অবস্থান করছেন। তাছাড়া পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮জন।

কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় শিবিরের শরণার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তাদের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তারা জানান ঈদের আগের দিন থেকে এই আশ্রয় শিবিরে তারা অবস্থান করছেন। বন্যার পানিতে অনেকের বাড়িঘর ডুবে আছে। বিশুদ্ধ পানি, রান্নার সরঞ্জামাদি ও ঘরে খাবার না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় প্রায় সকল আশ্রয় শিবিরের।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শাকিল আহমেদ তিনি সাদা পাথর এলাকায় নৌকা চালাতেন। বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে শাকিলের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া তিন দিন থেকে তিনি পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তিনি বলেন, তিন দিন থেকে পানি বন্দি অবস্থায় আছি। বর্তমানে পরিচিত এক বাসার ছাদে আশ্রয় নিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি, এতে করে না খেয়ে দিনযাপন করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিত্তবানদের কাছে আহ্বান করব, আমরা যারা পানিবন্দি আছি তাদের সবার পাশে এসে দাঁড়ানোর।

গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি ইউনিয়নের রুবিনা বেগম জানান, পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৫জন এরমধ্যে উপার্জনকারী একমাত্র ব্যক্তি তাদের স্বামী লবিব আহমেদ। লবিব আহমেদ কৃষি কাজ করে সংসার চালান। বন্যার পানি পুরো উপজেলাই পানির নিচে রয়েছে, এতেকরে কাজ করতে পারছেন না লবিব আহমেদ। এ অবস্থায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে চরম খাদ্য সংকটে রয়েছেন তিনি। ঈদের পর থেকে একদিনও পেঠে ভাত পরেনি। সরকারিভাবে চিড়া-মুড়ি দিয়ে গেছেন সেগুলো খেয়ে বেচে আছেন।

একই ইউনিয়নের আমিনা, জুমা ও ফাতেহা বেগম জানান, বন্যা আসলেই তাদের ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। তাদের অধিকাংশই কৃষি কাজ করে জীবনযাপন করে। এতে বন্যা আসলেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে তাদের ঘরে পর্যাপ্ত খাবার থাকে না।

গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যেই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ৯৯ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা, ৯০ হাজার টাকার শিশু খাদ্য ও ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ মজুদ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বুলবুল জানান, বিগত বন্যা থেকে এখন পর্যন্ত ৬০৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন চাল, ২৭ লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকা, ১ হাজার ৪৯৫ বস্তা শুকনা খাবার, ৯ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৯ লাখ টাকার গোখাদ্য উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ত্রাণের পরিমাণ আর বাড়ানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *