মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা বেড়েই চলেছে: জাতিসংঘ
নিউজ দর্পণ ডেস্ক: মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের শোষণ ও দুর্দশার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাতে হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির সাবেক এমপি চার্লস সান্তিয়াগো।
বিদেশি কর্মীদের শোষণ থেকে রক্ষা করতে উভয় দেশের ব্যর্থতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একটি দলের সমালোচনার বিষয়ে অবিলম্বে প্রতিক্রিয়া জানাতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন সান্তিয়াগো।
১৯ এপ্রিল জারি করা বিবৃতিতে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘শোষণ, অপরাধীকরণ এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অন্যান্য দেশের কর্মীদের মধ্যে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে।
চার্লস সান্টিয়াগো প্রতিক্রিয়া জানাতে সরকারের ব্যর্থতাকে ‘ভয়াবহ’ এবং ‘সমস্যাজনক’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি দেশের বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে এবং মালয়েশিয়ায় পণ্য বিদেশে বিদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। এটি এমন কিছু যা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে মোকাবিলা করতে হবে বলেও সান্তিয়াগো মন্তব্য করেছেন।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) ক্লাংয়ের সাবেক এমপি সান্তিয়াগো, দেশটির ফ্রি মালয়েশিযা টুডেতে এক সাক্ষাতকারের বলেছেন, আপনাকে (সরকারকে) বলতে হবে আপনি কী করতে যাচ্ছেন এবং কীভাবে আপনি এটির বিরুদ্ধে লড়াই করতে যাচ্ছেন। আপনি চুপ করে থাকতে পারবেন না। জাতিসংঘের বিবৃতিতে উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাতে হবে।
বিবৃতিতে, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশি অভিবাসীদের ভুয়া কোম্পানি দ্বারা নিয়োগ করা হচ্ছে এবং মালয়েশিয়ায় আসার জন্য নিজ দেশে অতিরিক্ত নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য হচ্ছে, ফলে তাদের আজীবন ঋণের চক্রে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
তারা বলছেন, তাদের অনেকেই মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেখেন, তাদের যে কাজের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা নেই, থাকার স্থান নেই, বেতন নেই। ফলস্বরূপ, তারা প্রায়ই অতিরিক্ত অবস্থানে বাধ্য হয়, তাদের আটকে রাখা, দুর্ব্যবহার করা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক গ্রেফতার-জেল-জরিমানা করে এবং নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে পরিচালিত অপরাধমূলক নেটওয়ার্কের জন্য প্রতারণামূলক নিয়োগের ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেনের (আর্থিক অপরাধ) বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উভয় দেশের সরকারের কিছু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই অবৈধ ও অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দাসপ্রথা, মানবপাচার এবং অভিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টোমোয়া ওবোকাটা, সিওভান মুল্লালি এবং গেহাদ মাদির নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের একটি দল এই বিবৃতি দিয়েছে।
এফএমটি-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে, পার্টি সোসিয়ালিস মালয়েশিয়ার (পিএসএম) অভিবাসী ডেস্ক সমন্বয়কারী, মোহনা রানী রাসিয়াহ বলেছেন, মালয়েশিয়ায় শ্রম অভিবাসন দীর্ঘদিন ধরে অপরাধমূলক প্রতারণা, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজশ এবং ‘শোষণ’ এর সঙ্গে জড়িত। তার দল জানুয়ারিতে এই সমস্যাটি কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সে বিষয়ে সরকারের কাছে আটটি প্রস্তাব পেশ করেছে।
তিনি বলেন, তা সত্ত্বেও, এখনও বেকার এবং ক্ষুধার্ত অভিবাসী শ্রমিকদের অসংখ্য গল্প রয়েছে যারা অবৈধভাবে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে তাদের নথিভুক্ত মর্যাদা হারিয়েছে। এটি নতুন কিছু নয় অনেক বছর ধরে, আমরা প্রস্তাব দিয়ে আসছি। যা ঘটছে তার ওপর ভিত্তি করে, দেখে মনে হচ্ছে এই বিশাল সঙ্কটকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনা করার জন্য কোনো সমন্বিত প্রচেষ্টা নেই বলেও মন্তব্য করেন মোহনা রানী রাসিয়াহ।