অপরাধরাজধানী

পুলিশ কর্মকর্তার মা-বাবাকে কুপিয়ে হত্যা


নিউজ দর্পণ ঢাকা: পুলিশের বিশেষ শাখার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) উপপরিদর্শক (এসআই) ইমন হোসেনের বাবা মাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (২০জুন) ভোরে যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়া এলাকার পশ্চিম মোমেনবাগের আড়াবাড়ি বটতলার নিজ বাসা থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. তৌহিদুল হক মামুন। নিহতরা হলেন জনতা ব্যাংকের সাবেক গাড়িচালক শফিকুর রহমান (৬০) ও তাঁর স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন (৫০)।

পুলিশ জানিয়েছে, শফিকুর-ফরিদা দম্পতি পশ্চিম মোমেনবাগের আড়াবাড়ি বটতলায় নতুন একটি চারতলা বাড়ি তৈরি করেছেন। তাঁরা দোতলায় থাকতেন। নিচতলার এক পাশ এবং তিন ও চারতলা ভাড়া দেওয়া। এই দম্পতির একমাত্র ছেলে এসআই ইমন ও তাঁর স্ত্রী একই বাসায় মা–বাবার সঙ্গে থাকেন। ঈদের পরের দিন রাতে ইমন তাঁর দাদাবাড়ি ফেনী যান। এবং তাঁর স্ত্রী নিজের বাবার বাড়িতে চলে যান।

পুলিশ আরও জানায়, আজ সকালে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা বাসার নিচতলার পার্কিংয়ে শফিকুরের লাশ দেখতে পায়। তাঁর গলা ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। পরে দোতলায় গিয়ে শোবার ঘরে মশারির ভেতর স্ত্রী ফরিদার গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। তাঁর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানেও ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারটওাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে। শফিকুর নামাজ পড়ে ফেরার সময় ওত পেতে থাকা খুনিরা তাঁকে প্রথমে হত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে তারা দোতলায় উঠে তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করে। বাসার নিচের প্রধান ফটক ও ঘরের দোতলার দরজা খোলা ছিল। শফিকুরের কাছে বাসার প্রধান ফটকের চাবি পাওয়া গেছে। বাসার পেছনের দেয়াল–লাগোয়া একটি ভবন বেয়ে এই ভবনে ওঠা যায়। বাসার ভাড়াটেরা দাবি করেছেন, তাঁরা কেউ বিষয়টি টের পাননি।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ইকবাল হোসাইন বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কিছুই পাইনি। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি ওনি ওনার পরিবারসহ একসাথে থাকেন। নিচতলা চারতলায় ভাড়াটিয়া আছেন। ওনি যথারীতি প্রতিদিন ভোরবেলায় উঠে পানির মটর ছাড়েন। আমাদেরও ধারণা আজকেও ওনি মটর ছেড়েছেন। মটরের পানি যখন ওভারপ্লো হচ্ছিলো রাস্তা থেকে যখন কেউ আওয়াজ করছিলো চারতলা থেকে মহিলা নেমে মটর বন্ধ করেছে এবং ওনার ডেড বডি পরে থাকতে দেখেন। আমরা যা বুঝতে পেরেছি এটা চুরি বা ডাকাতির ঘটনাও হতে পারে। অথবা পরিকল্পিতও হতে পারে।বাসায় লাকার আলমেরিও এলোমেলো ভাবে পরে আছে। তবে বাসা এখন পর্যন্ত এমন কিছু খোয় যাওয়ার প্রমান পাইনি। ভদ্র মহিলাকে ওনার বেড রুমে খুন করা হয়েছে। তবে ধারণা করিছি ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত। পারিবারিক সম্পতি বিষয়ক ও হতে পারে আমরা সব কিছু বিভেচনা করেই আগাচ্ছি। বাকিটা তদন্ত সাপেক্ষ্যে বেরিয়ে আসবে।

নিহত দম্পতির একমাত্র ছেলে পুলিশের বিশেষ শাখার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) উপপরিদর্শক (এসআই) ইমন হোসেন বলেন, আমি ঈদের পরের দিন গ্রামের বাড়ি ফেনিতে যাই। আমার স্ত্রী কাল আমার সাথে কথা বলে বাবার বাড়ি বেড়াতে গেছে। কিন্তু কারা আমার মা-বাবাকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করলো আমি ধারণা করতে পারছি না।

আমাদেরও সাথে কারো কোন বিরোধ নেই। আমরা বহু বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। এলাকার সবার সাথে আমাদেরও একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। আশাকরি তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসবে। আর যদি নাও আসে একজনের কাছে দাঁড়াতে হবে তিনি আল্লাহ। আমার সহজ সরল বাবা মাকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার আল্লাহর কাছে দিয়ে রাখলাম

নিহতের বড়ভাই মফিজুর রহমান বলেন, আমার ছোট ভাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করেন। আজও নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যেই সকালে উঠেছেন বলে আমরা ধারণা করছি। এলাকায় তাকে সবাই সম্মান করে। কারো সাথে তার বিরোধ আছে বলে আমার জানা নেই। তবে কারা কি কারণে আমার ভাইকে হত্যা করেছে এর বিচার দাবি করছি।

নিহতের স্ত্রীর ছোট ভাই রুপম বলেন, আমার দুলাভাই অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। এলাকায় খোঁজ নিলে জানতে পারবেন। আজ পর্যন্ত শুনিনি কারো সাথে কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। কারা এমন পাশবিক হত্যা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।

নিহত দম্পতির একমাত্র মেয়ের জামাই বাপ্পী বলেন, আমার শশুর প্রতিদিন সকালে মটরে পানি ছেড়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যান। আমি যতদিন এ বাসায় থেকেছি তাই দেখেছি। ধারণা করছি আজও তিনি নামাজের উদ্দেশ্যেই বের হয়েছেন। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কোন কিছু নেয়নি। এমন কি আমার শাশুড়ির গলায় যে চেইন ছিলো তাও তার গলায়ই ছিলো। তাহলে এটা পরিকল্পিত হত্যা ছাড়া আর কিছু না। যদি চোর ডাকাত আসতো ঘরের টাকা পয়সা স্বর্ণ অলংকার নিয়ে যেতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *