রাজনীতিলিড

দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকার থাকা উচিত নয়: মির্জা ফখরুল

নিউজ দর্পণ, ঢাকা: অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন দেশ পরিচালনায় থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘দ্রুত নির্বাচনের ফের দাবি করে তিনি বলেন, আমি আবারো বলছি, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে এবং আমরা যেটা চাই যে, তারা সফল হোক এবং এজন্য সমস্ত রকম সহযোগিতা করতে আমরা তৈরি আছি। সবচেয়ে বেশি অনুরোধ করব, দ্রুত করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। তা না হলে সমস্যাগুলোর সংকট বাড়তেই থাকবে এবং আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বলেন, বর্ডার সমস্যা বলেন, সাবোটজ করার যে সমস্ত সব ঘটনাগুলো হচ্ছে, এই ঘটনাগুলো কমানো যাবে না।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি’র (জাগপা) উদ্যোগে আয়োজিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ২৪ এর ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের চেতনায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ভোটার হওয়ার ন্যুনতম বয়সসীমা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দেয়া বক্তব্যের জনমনে বির্তক সৃষ্টি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ পত্রিকায় দেখলাম, ড. মুহাম্মদ ইউনুস নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছেনৃ সেই প্রস্তাব হচ্ছে, ১৭ বছর ভোটার হওয়ার জন্য ন্যুনতম বয়সসীমা। এখন তা হলে কি করতে হবে? নতুন করে আবার ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। আমি মনে করি যে, এই বিষয়টাকে এভাবে না বলে এটা উচিত ছিলো এই বিষয়ে স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলে তারপরে এই বিষয়টা আনতে পারলে ভালো হতো, কোনো বির্তকের সৃষ্টি হতো না। এখন তো আপনার আরও বেশি করে মানুষ আশাহত হয়ে যাবে যে, এটা করতে গিয়ে আরও সময় যাবে, আরও সময় খাবে, আরও সময় ক্ষেপন হবে, আরও বিলম্ব হবে। তিনি বলেন, আমার না কিন্তুৃ. কেনো জানি না মানুষের মধ্যে একটা ধারণা হচ্ছে, এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্ব করছে এটা সঠিক নয়। বাট এট দ্যা সেইম টাইম মানুষের মধ্যে এই আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই জিনিসটা (ভোটার তালিকার ন্যুনতম বয়সমীমা নির্ধারণ) তো কন্সনসাস না। ইউ আর দ্যা চীফ এক্সিকিউটিভৃ আপনি প্রথমেই বলে দিচ্ছেন যে, ১৭ বছর হলে ভালো আপনি যখন বলছেন, তখন দ্যাট বিকামস বাইন্ডিং অন ন দ্যা ইলেকশন কমিশন, যেটা ইলেকশন কমিশন ঠিক করবে। এই বিষয়টা ইলেকশন কমিশনকে ছেড়ে দিন। দ্যাট দ্যা ডিসাইড ১৮ বছর তো আছে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে। যদি এক বছর কমাতে চান তাহলে সেটা ইলেকশন কমিশন প্রস্তাব করুক যারা নতুন হয়েছে। কিন্তু উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যখন প্রথমেই বলে দেন তখন ইট ওয়াজ মাইন্ড ইট এটা একটা চাপ তৈরি হয় ইলেকশন কমিশনের জন্য। তবে একই সঙ্গে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথাও পূনর্ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব।
নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আরেকটা সংবাদ দেখলাম, আরও দুই-তিনটা দল গঠিত হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়াতে আরও ২/৩ দল গঠিত হয় আমাদের কোনো আপত্তি নাই। এক‘শটা হলে, দুই‘শটা হলে তাতেও আপত্তি নাই। প্রশ্ন হচ্ছে, জাতির জন্যে কতটুকু কাজে লাগবে সেটাই সবাই চিন্তা করবে। এখন বাংলাদেশে একটা সমস্যা কি জানেন, আমরা সবাই রাজনীতিবিদ। দেখবেন, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে, চর্চা করতে আমরা পছন্দ করি। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া মারাত্মকভাবে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে সবাইকে রাজনীতিবিদ হওয়ার, সবাইকে সাংবাদিক হওয়ার, সবাইকে ইউটিউবার হওয়ার, সবাইকে ফিলিসোফার হওয়াৃ তাই নাৃ সবাই হয়ে গেছেনৃ ভালো কথা, সবাই পারিশ্রমিক পাচ্ছেন, সবাই কাজ করছেন। এটাকে একটা জায়গায় আনতে হবে তো। বাংলাদেশকে একটা পথে নিয়ে যেতে হবে তো।
এখনো মানুষ স্তস্তি পায়নি বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো কিন্তু মানুষ স্বস্তি পায়নি। গতকাল একটা অনুষ্ঠানে ছিলোম সেখানে অধ্যাপক দেবপ্রিয় ভুট্টাচার্য বক্তব্যে বলেছিলেন, খুব ভালো কথা, সংস্কার তো সবাই চায় কিন্তু স্বস্তি চায় বাজারে স্বস্তি চায়, রাস্তায় বেরিয়ে খুন হয়ে যাবে না সেটা চায়, গাড়ি এক্সিডেন্ট করে ৬/৭ জন মারা যাবে না সেটা চায়।ওই দিকে একটু নজর দিতে হবে তো, প্রশাসনের দিকে নজর দিতে হবে, গর্ভানেন্সের দিকে নজর দিতে হবে। আমি আশা করব, সরকার আরও বেশি গর্ভানেন্সের দিকে নজর দেবেন। ব্যাংকের সব টাকা লুট করে নিয়ে চলে গেলো তাদের বিরুদ্ধে তো একটা মামলাও শুরু হলো না।অন্য মামলা হচ্ছে যেটা আগের মতো ওই সেই পুরনো অজ্ঞাতনামা ১০০০/১৫০০ আসামী ওই একই কায়দায় আবার একটা বানিজ্য করার ব্যবস্থা করা হয়েছে এগুলো বন্ধ না করলে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে জায়গা আপনি পৌঁছাতে চাচ্ছেন সেই জায়গায় আপনি পৌঁছাতে পারবেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি সংস্কারের জন্য কয়েকটা কমিশন করেছেন সেসব কমিশন কাজ করছে ভালো কথা। এই কমিশন কাদের সঙ্গে কাজ করছে? তারা কয়েকজন পন্ডিত ব্যক্তিকে নিয়ে এসেছেন আমরা তাদেরকে ভালো করে চিনি, সন্মান করি। কিন্তু একই সঙ্গে জনগণের কাছে যান তারা কি চায় জানুন। আমরা বলেছি, আপনারা সংস্কার করেন আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু যে বিষয়টা নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা সবচেয়ে বড় তৈরি হয়েছে যে, আজকে বাংলাদেশে অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা এগুলো সমস্যা এই সমস্যাগুলো অনেক কমে যাবে যদি একটা নির্বাচিত সরকার থাকে নির্বাচিত সরকারের শক্তিটা অন্য এর পেছনে জনগণ থাকে এই কথাটা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। আমরা সংস্কার চাই, আমরা সংস্কার বেশি চাই। কিন্তু আমরা এটাও চাই, দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমকায় থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, আজকে দেখুন দেশের সংকট বাড়ছে তো বাড়ছেই। সবচেয়ে বড় সংকট সাধারণ মানুষেরৃচালের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে, তাদের পক্ষে চাল কেনাও কঠিন হয়ে গেছে চাল, ডাল, তেল, লবন, ডিম, মরুগি প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এটার দিকে তাদের(অন্তবর্তীকালীন সরকার) কোনো খেয়াল নেই, দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য তারা কাজ করছেন না। কিছু বললে, বলেন, এতো তাড়াতাড়ি সম্ভব না। কিন্তু আমরা উদ্যোগটা দেখতে চাই, কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে সেটা দেখতে চাই। আমরা তো দেখলাম না, উনাদের ক‘জন উপদেষ্টা আছেন বা যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন তারা বাজারে গিয়ে একটু জিজ্ঞাসা করছেন, মানুষকে বুঝার চেষ্টা করছেন যে, সমস্যাটা কোথায়?
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রিয়াজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ন্যাপ চেয়ারম্যান এমএন শাওন সাদেকী প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *