আ’ লীগ হাজার হাজার আজিজ-বেনজীর তৈরি করেছে : মির্জা ফখরুল
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: আওয়ামী লীগ একজন আজিজ, বেনজীর নয়, হাজার হাজার আজিজ -বেনজীর তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার বিকালে জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি এই আহ্বান জানান।
গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনকে জোরদার করতে সকলকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই যে আত্মত্যাগ, মায়ের যেই অশ্রু ধারা এটা কি বিফলে যাবে? আপনারা কি সেটা বিফলে যেতে দেবে?”
‘‘ এখন জেগে উঠা্বার সময় এসেছে। জেগে উঠবে সেই তরুন-যুবক। কবি নজরুল ইসলাম তার কবিতায় বলেছেন, কে আছো জোয়ান হও আগোয়ান, হাকিছে ভবিষ্যৎ। আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমস্ত ভয়-ভীতি সবকিছু তাচ্ছিল্য করে আমাদের দেশমাতৃকা ডাকে, আমাদের মা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবার লক্ষ্যে ও তার ডাকে, আমাদেরকে নেতা তারেক রহমানের ডাকে…. আসুন আমরা সবাই বেরিয়ে পড়ি। আমরা এমন একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলি যে, ভাবহ দানব আমাদের সবকিছু তচনচ করে দিচ্ছে তাদেরকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের রাষ্ট্র, গণতন্ত্রের রাষ্ট্র নির্মাণ করতে সক্ষম হই।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনাদের কাছে আমার একটাই আবেদন, আমরা লড়াই করছি সবাই। আমাদের বয়স হয়েছে। আমাদের যেকথা মেজর হাফিজ উদ্দিন বলেছেন, আমাদের বয়স ৭০ এর উপরে। আমরা লড়াই করেছি, দেশকে স্বাধীন করবার জন্য শহীদ জিয়ার ডাকে যুদ্ধ করেছি। বেগম জিয়া ডাক দিয়েছেন আমরা সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি… তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য সফল হয়েছিলেন নব্বইয়ের ছাত্রদের গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে।”
‘‘ আমি একটা কথাই বলতে চাই, আজকে যে আমাদের সংকট এই সংকট মহাসংকট। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।”
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি এই আলোচনা সভার আয়োজন করেন। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপেতে ভার্চুয়ালি এই যুক্ত হয়ে আলোচনা সভায় বক্তাদের বক্তব্য শুনেন। আলোচনা সভায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের অভ্যুত্থানে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। দিবসটি পালনে বিএনপি ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যা মঙ্গলবার জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে।
৩০ মে সকালে শেরে বাংলা নগরে জিয়ার কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ, মহানগর উত্তর-দক্ষিনের উদ্যোগে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে দুঃস্থদের মধ্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ, নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ও বিনামূল্যে ওষধ বিতরণ কর্মসূচি রয়েছে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও বৃহস্পতিবার সারাদেশে জেলা ও ইউনিটসমূহ কার্যালয়ে জিয়াউর রহমানের স্মরণে আলোচনা সভা, দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
‘আজিজ-বেনজীরের দায় সরকারের’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ এই যে তথাকথিত বিনাভোটে ইলেক্টেড এমপি, আমি তাকে এমপিও বলতে চাই না… আমরা যে বাজারে মাংস কিনতে যাই, গোস্ত কিনতে যাই টুকরা টুকরা করে দেয় না… সেই টুকরা টুকরা করে কেটে নাকি ফেলে দিয়েছে। কি অবস্থা করেন?”
‘‘ আপনি কোন অবস্থায় বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছে যে, সাবেক পুলিশ প্রধান তার আজকে হাজার হাজার দুর্নীতির চিত্র পত্র-পত্রিকায় বেরিয়ে আসছে। তাকে আপনি লালন করেছেন। অনেকে আগে স্যাংশন দেয়ার পরও তাকে আপনি আইজি বানিয়েছেন। আজকে একইভাবে আজকে সাবেক সেনা প্রধান তাকে স্যাংশন দেয়া হয়েছে একটা মাত্র কারণে সে বাংলাদেশে লুট করেছে, চুরি করেছে এবং নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দায় কি শুধু ওদের? এই দায় এই সরকারের যারা আজকে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন।”
তিনি বলেন, ‘‘ এজন্য আমি বার বার বলছি যে, এআপনাদের রিজাইন করা উচিত এই কারণে। একমাত্র বেনজীর বা আজিজ কেনো তৈরি হয়… আপনারা তৈরি হবেন না। দুর্নীতি করেছে কি শুধু তারা। একজন আজিজ শুধু নয়, একজন বেনজীর শুধু নয়। অসংখ্য আজিজ ও বেনজীর আপনারা তৈরি করেছেন যারা লুট করে খাচ্ছে।”
‘‘ একটাই কাজ লুট করা। আমরা যখন ছোট ছিলাম আমাদের মা কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে গিয়ে বলতেন, ছেলে ঘুমালো, পাড়া ঘুমালো বর্গী এলো দেশে। বর্গী কারা? বর্গী সেই সমস্ত লুটেরা যারা বর্মা থেকে আসতো এসে লুট করে সব নিয়ে চলে যেতো। এটাকে তখন বাংলাদেশের মানুষ ভয় পেতো। সেজন্য গান নিয়েছিলো ছেলে ঘুমালো, পাড়া ঘুমালো বর্গী এলো দেশে। আজকে তারা( আওয়ামী লীগ) বর্গীদের পরিণত হয়েছে। তাদের একমাত্র কাজ বাংলাদেশের সম্পদ লুন্ঠন করে বিদেশে পাচার করে সেখানে সম্পদ গড়ে তুলে…।”
তিনি বলেন, ‘‘ নির্বাচন দেন না কেনো। একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছি। আমরা কখনো বলিনি যে, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দাও। আমরা একাই নই, ৬৩টা বিরোধী দল… বাম-ডান সবাই একসাখে সেই লড়াইটা লড়ছি, আমাদের অধিকার, ভোটের অধিকারের জন্য লড়ছি। সুষ্ঠু নির্বা্চন দিন, জনগন সিদ্ধান্ত নিক। তারা সেটা কোনোদিনই করবে না কারণ তারা তারা জানে যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে ১০%ও আসন পাবে না।”
জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভিহিত করে তার যুগান্তকারী কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
‘বিএনপি টিকে থাকবে হাজার বছর’
বিএনপির স্থায়ী কমিটিরে সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই আওয়ামী লীগকে লাইসেন্স দিলো রাজনীতি করার। আর সেই লাইসেন্স নিয়ে আজকে মেলা মেলা কথা বলছে। কার সম্বন্ধে ওই জিয়াউর রহমান সম্বন্ধে, কার সম্বন্ধে বেগম খালেদা জিয়ার সম্বন্ধে, কার সম্বন্ধে তারেক রহমানের সম্বন্ধে।তারা ভেবেছিলো জিয়াউর রহমানকে হত্যা করলে বিএনপি আর থাকবে না।”
‘‘ কিন্তু বিএনপি আছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাল ধরেছেন বিএনপি টিকে আছে। এখন তারেক রহমান হাল ধরেছেন বিএনপি টিকে থাকবে হাজার বছর ইনশাল্লাহ। এই দলকে কেউ ধবংস করতে পারবে না। আর এই দল ধবংস করার কেউ নেই। এই দল না থাকা মানে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিদেশে প্রভুদের কাছে বিকিয়ে দেয়া। সুতরাং বিএনপিকে টিকে থাকতে হবে, বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে টিকে থাকবে, এদেশের মানুষকে টিকে থাকতে হবে।”
‘হতাশা নেয়, সরকার পরিবর্তন হবেই’
সভাপতির বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ বিএনপি আন্দোলন করে যাচ্ছে। কোথায় সেই ছাত্রদল, কোথায় তুরণরা। আশা করবো আপনারা এখানে যারা ছাত্র আছে পুরনো দিনে একাত্তরের কথা স্মরণ করে আপনারা মাঠে নামবেন বিএনপি ডাকে… রাজপথে নেমে আমরা এই লুটেরার দলকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করব।”
‘‘ আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক হতাশ…আওয়ামী লীগ বোধহয় টিকেই গেলো। ভাইরে এই চোরদের দল, যেখানে সেনা প্রধান, পুলিশ প্রধান চোর, দুর্নীতিবাজ… এদের সরকার যদি টিকে থাকে তাহলে সভ্যতার ইতিহাস, প্রগতির ইতিহাস মিথ্যে হয়ে যাবে। অতএব নিচিন্ত থাকুন বিএনপি বাংলাদেশের জনগনের একমাত্র ভরসা। আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শধারী সেই পতাকা বহন করে আমরা ইনশাল্লাহ ক্ষমতায় যাবো। বেগম খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। আমরা এদেশকে মুক্ত করতে চাই, দুর্নীতিবাজ- দুর্বত্তদের হাত থেকে মুক্ত করতে চাই… আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকেন।’’
দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, অধ্যাপক মামুন আহমেদ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।