যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

নিউজ দর্পণ, ঢাকা: চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাবুল। আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়। দাফনের পর এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এর আগে বাদ জোহর রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।

কর্মপ্রাণ ও সফল এ উদ্যোক্তার জানাজায় অংশ নিয়ে সবাই তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন। জানাজার আগে বাবার রুহের মাগফিরাত ও বেহেশত কামনায় দোয়া চান মরহুমের ছেলে ও যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময়ে দেশের কল্যাণে তার বাবার অবদানের কথা স্মরণ করেন। জানাজায় অংশ নেয়ার জন্য সব মুসল্লির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শামীম ইসলাম।

সোমবার বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শিল্পপতি নুরুল ইসলাম। গত ১৪ জুন নুরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।বিশিষ্ট এই শিল্পোদ্যোক্তার চিকিৎসায় এভার কেয়ারের আইসিইউ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহবুব নুরের নেতৃত্বে ১০ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এর বাইরে চীনের ৩টি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।

১৯৪৬ সালে নবাবগঞ্জের চুড়াইন ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নুরুল ইসলাম। তার বাবার নাম আমজাদ হোসেন। মায়ের নাম জমিলা খাতুন। তার স্ত্রী সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান জাতীয় সংসদের এমপি সালমা ইসলাম। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার তিন মেয়ে- সোনিয়া ইসলাম, মনিকা ইসলাম ও রোজালিন ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক।

যমুনা গ্রুপ বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পগ্রুপ। ১৯৭৪ সালে নুরুল ইসলাম যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প এবং সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৪১টি প্রতিষ্ঠান। তার হাতে গড়া দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন আজ দেশের শীর্ষস্থানীয় পাঠক ও দর্শকপ্রিয় গণমাধ্যম।

২৫ বছর বয়সে তিনি দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। একজন সাহসী ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলেন অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে লক্ষাধিক মানুষের। সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে সারাটি জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন শিল্প খাতের এই সফল ‘আইকন’।

মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীনের পর দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন দুর্নীতি ও ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে সাহসী এ কণ্ঠস্বর। নুরুল ইসলামকে যারা কাছ থেকে দেখেছেন, তারা বলেছেন–¬ অন্যায়ের কাছে জীবনে কখনও তাকে মাথানত করতে দেখেননি। রক্তচক্ষুর ভয়ে কখনও ভীত বা একচুলও পিছপা হননি এ মুক্তিযোদ্ধা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নই ছিল যার স্বপ্ন। বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আজ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সেই স্বপ্নবাজ মানুষটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *