দায়িত্ব নেবেন না, জন্ম দিয়েছেন কেন: আইজিপি
নিউজ দর্পণ, ঢাকা: পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘পরিবারকে জানতে হবে ছেলে বা মেয়ে কোথায় কখন যায়, কার সাথে মিশে, কী করে। এটা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল (পিতা-মাতার নিয়ন্ত্রণ)। এটি অবশ্যই সন্তানের পিতা-মাতাকে নিতে হবে। পরিবারকে জানতে হবে- প্যারেন্টাল কন্ট্রোল বিষয়টি। সন্তান জন্ম দিলে দায়-দায়িত্ব পিতামাতাকে নিতেই হবে। দায়িত্ব নেবেন না, তবে জন্ম দিয়েছেন কেন? সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখা প্রত্যেক পিতা-মাতার সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। ধর্মীয় দায়িত্বও বটে।
আজ সোমবার দুপুরে কুর্মিটোলা র্যাব সদর দফতরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত “র্যাব সেবা সপ্তাহ”-এ দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ উপলক্ষে আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় র্যাব সদর দফতরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে ‘দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সহায়তা, বই বিতরণ এবং সনদপত্র প্রদান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বলেন, ‘সন্তান ছেলে-মেয়ের ভেতর নৈতিকতা, মূল্যবোধের বিষয়গুলো আমাকে ঢুকানো দায়িত্ব পিতা-মাতার। নতুন প্রজন্ম সামাজিকভাবে বিলুপ্ত বা বিনাশ হবে তা হতে দেয়া যাবে না। এটা সুস্থ জাতিসত্তার কাজ হতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বড় সমস্যা হচ্ছে এখন কিশোর গ্যাং। এই কিশোর গ্যাংকে মোকাবিলা করতে হবে। সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এই কিশোর-কিশোরীরাই কিন্তু আগামী দিনের বাংলাদেশ তথা, ২০৪১ সালের ধনী দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। সেই শিশুরা ড্রাগ নিয়ে কিংবা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে ধ্বংস হয়ে যাক সেটা আমাদের কোনোমতেই বরদাশত করা যাবে না, সেজন্য আমাদের সমাজকে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে।
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সবাই শিশু। মানবাধিকার কর্মীরা এনজিওকর্মীরা অনেক হইচই করে অনেক আইন কিন্তু পরিবর্তন-সংশোধন করেছেন। কিন্তু কলাবাগানে যে ঘটনাটি ঘটেছে (‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণ ও হত্যা) তা কিন্তু সুস্পষ্ট ক্রাইম। এখানে ধর্ষণের পাশাপাশি মৃত্যু ঘটানো হয়েছে। অথচ আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী উভয়েই কিন্তু শিশু।
তিনি বলেন, ‘অথচ আমরা এই আইনগুলো করেছি। অবশ্যই আমাদের আধুনিকায়ন দরকার। আইজিপি হিসেবে আমি দ্বিমত পোষণ করি না। তবে অত্যাধুনিক আইন করতে গিয়ে আমরা দেশের মধ্যে কোনও সমস্যা তৈরি করছি কিনা, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
আইজিপি বলেন, ‘দেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ সবাই মিলে এই করোনা মহামারির বিরুদ্ধে এক হয়ে যুদ্ধ করার কারণে বিশ্বে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ২০তম অবস্থানে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শুধু করোনা মহামারির বিরুদ্ধে সাফল্য অর্জন করিনি, আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকেও সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এজন্য জিডিপিতে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ভারতকে টপকে গেছি।
পুলিশপ্রধান আরও বলেন, ‘এ ১০০টি মসজিদে দোয়া মাহফিল, সারা দেশে আট হাজার শিশুদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, ঢাকাসহ সারা দেশে বৃক্ষরোপণ, ৫০০ বেশি র্যাব সদস্য রক্তদান করেছেন, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মূলত দেশটা আমাদের, আমরা নবীন জাতি, আর এই নবীন জাতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিকে থেকে এগিয়ে যাচ্ছি তার পেছনে দেশবাসীর দৃঢ় সমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশের অনন্য বৈশিষ্ট হলো এ দেশের মানুষের ভাষা এক, এ দেশের সকল মানুষ দেখতে এক রকম, গায়ের রঙ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ এক সে কারণে হোমোজিনিয়াস এক থাকার কারণে সংঘবদ্ধ ঘটাতে সহয়তা করে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না ‘সেবা সপ্তাহ’ শুধু সপ্তাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক। আমাদের প্রতিটি দিন, মাস, বছর হবে সেবা সপ্তাহ। এভাবে আমরা দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সেবার ব্রতী নিয়ে কাজ করতে চায়। আমাদের যে দায়বদ্ধতা আছে তা প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে সম্মানসূচক জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করতে চায়।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ‘করোনার মধ্যেই জীবন বাজি রেখে র্যাব নকল মাস্কের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে। এজন্য এবং ভুয়া করোনা টেস্টিং কিটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করায় প্রত্যককে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে থেকে অভিনন্দন জানাই। আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গতি আছে, তা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি এবং বেগবান করতে পারি তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আগামী ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে কোনও দরিদ্র এদেশে থাকবে না। দারিদ্র্যতা দূরীকরণে আমরা যেভাবে কাজ করছি তা আরও বেগবান করতে হবে’- বলেও যোগ করেন আইজিপি। অনুষ্ঠানে র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপশ) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বক্তব্য দেন।