এমাজউদ্দীনের কর্ম গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে সাহস যোগাবে: মির্জা ফখরুল

নিউজ দর্পণ,ঢাকা: অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদের কর্ম গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সাহস যোগাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার বিকালে সদ্য মরহুম এমাজউদ্দীন আহমদের স্মরণে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রফেসর এমাজ উদ্দীন আহমেদ আমাদের মাঝে নেই আর ফিরেও আসবেন না। কিন্তু তার কাজ আমাদের মধ্যে রয়ে গেলো। তার চিন্তা, তার বিশ্বাস, তার কাজ আমাদেরকে আরো শক্তিশালী করবে, সাহস যোগাবে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের একজন দৃঢ় প্রবক্তা, স্বাধীনতা সার্বভৌত্বের একজন অতন্দ্র প্রহরী, গণতন্ত্রের একজন সাহসী বলিষ্ঠ সংগ্রামী যোদ্ধা প্রফেসর এমাজ উদ্দীন আমাদের প্রেরণা যুগিয়েছেন এবং যোগাবেন। তিনি আমাদের সাহস যোগাবেন লড়াই করতে, সংগ্রাম করতে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন,  উদার গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে তিনি আমাদের পথ দেখাবেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মানুষ তার কাছে ঋণী থাকবে। আমি জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে, আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং পরম করুনাময় আল্লাহ তা‘লার কাছে এই দোয়া চাইছি আল্লাহতা‘লা তাকে যেন বেহস্ত নসিব করেন।”

অধ্যাপক এমাজ উদ্দীনের কর্মময় জীবন তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য  ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ তার যে রাষ্ট্রচিন্তা ছিলো, সেটা ছিলো দেশ, সমাজ, জাতি, রাজনীতি, গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এর সমন্বয়ই তার চিন্তা-চেতনা। এগুলোকে সমন্বয় করে তিনি তার বইগুলো রচনা করেছেন, পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন। যে সময়ে যা প্রয়োজন পরামর্শ দেয়ার, সেই সময়কে ধারণ করে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ সেই সময় কি করা প্রয়োজন, জাতির জন্য কি করা প্রয়োজন, দেশের সরকারের কি করা প্রয়োজন, রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন তিনি নীতিনির্ধারণী জ্ঞানগর্ব বক্তব্য দিয়েছেন, কলাম লিখেছেন, বই রচনা করেছেন।

স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী ও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের অংশ নেয়ার কথা স্মরণ করে তার নামে একটি ‘জাতীয় স্মৃতি পরিষদ’ গঠন এবং তার লেখা গ্রস্থসমূহে জাতীয়তাবাদী দলের অনুসারীদের কাছে ছড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন ড. মোশাররফ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এমাজ উদ্দীন আহমেদ একজন নিবেদিত জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী ছিলেন। বাংলাদেশে অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন,বুদ্ধিজীবীর অভাব নেই। কিন্তু তার মতো উঁচু মানের বুদ্ধিজীবী এখন খুব বিরল, নাই বললেই চলে। এমাজ উদ্দীন সাহেব গত ১৩ বছর মনের মধ্যে অনেক দূঃখ নিয়ে বেঁচে ছিলেন। গণতন্ত্রের প্রতি তার একটা কমিটমেন্ট ছিলো। সেই গণতন্ত্র, ব্র্যাকডাউন অব ডেমোক্রেসির জন্য মিলিটারি ইন্টারভেনসনের দরকার নেই, রাস্তায় কোনো ট্যাংক নামানোর দরকার নেই, কোনো গোলাবারুদের দরকার নেই, কোনো মার্শাল ‘ল জারি করার দরকার নেই। এখন ব্যালট বাক্স ব্যবহার, ভোটকে ব্যবহার করে, গণতন্ত্রকে ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদী সরকার, স্বৈরাচারি সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর। এই যে গণতন্ত্রের মৃত্যু হচ্ছে ধীরে ধীরে- তিনি মনের মধ্যে এই দূঃখটা নিয়ে চলে গেছেন বলে আমি মনে করি।

বিএনপির উদ্যোগে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মরহুম এমাজ উদ্দীন আহমদের কর্মময় জীবনের নানা দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহুমদ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ মাহবুবউল্লাহ, রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, শত নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবদুল হাই শিকদার।

গত ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের সাবেক উপাচার্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৭ বছর।

নিউজ দর্পণ/আরএম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *